বন্যার কবলে আরও ৩ জেলা
উত্তর-পূর্বাঞ্চলে উন্নতি মধ্যাঞ্চলে স্থিতিশীল
যুগান্তর ডেস্ক
প্রকাশ: ০৬ জুলাই ২০২০, ০২:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
দেশের উত্তর ও পূর্বাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি অব্যাহত রয়েছে। উভয় অঞ্চল থেকে নেমে আসা পানি মধ্যাঞ্চলে চাপ তৈরি করছে। এ ছাড়া উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের নদ-নদীতেও ঢুকে পড়ছে পানি। এতে নতুন আরও তিন জেলায় বন্যা শুরু হয়েছে।
পানি নেমে যাওয়ায় বন্যাকবলিত অনেক এলাকার মানুষ এখন বাড়ি ফিরতে শুরু করেছে। শেরপুরে ব্রহ্মপুত্রের পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় নদীতীরবর্তী নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। কুড়িগ্রামের রৌমারীতে ৮ গ্রামের ২৫ হাজার মানুষ যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বন্যার পানি না নামতেই ফের বন্যার আশঙ্কা করা হচ্ছে। হিমালয় ঘিরে থাকা দেশগুলোয় বা চীনের একটি অংশ, ভুটান, ভারতের আসাম, মেঘালয়, সিকিম, পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিংয়ে পুনরায় বৃষ্টি শুরু হয়েছে। আগামী ৯ জুলাই নাগাদ এ বৃষ্টি ‘ভারি’ আকার ধারণ করতে পারে। এ বৃষ্টির পানির বেশিরভাগ নেমে আসবে ব্রহ্মপুত্রে। কিছু আসবে মেঘনা অববাহিকায়। এতে জুলাই মাসের তৃতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত বন্যা দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে।
বুয়েটের পানি ও বন্যা ব্যবস্থাপনা ইন্সটিটিউটের অধ্যাপক ড. একেএম সাইফুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, ১৮ জুলাই পর্যন্ত ১০ দিনের পূর্বাভাসে ব্রহ্মপুত্র অববাহিকায় দেড় হাজার ও মেঘনা অববাহিকায় ৫-৭শ’ মিলিমিটার বৃষ্টির আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ পূর্বাভাস সঠিক হলে দেশ অন্তত ২১-২৮ দিন বা দীর্ঘমেয়াদি বন্যার কবলে পড়বে। ১৯৯৮ সালের বন্যা ছিল ৩৩ দিন। সেই হিসাবে আমরা ১৯৯৮ সালের বন্যার অভিজ্ঞতার দিকে এগোচ্ছি। তেমনটি হলে বন্যার পানি ঢাকা শহরকেও আক্রান্ত করতে পারে। তাই এখন থেকেই এ ব্যাপারে সতর্কতা ও পুনর্বাসন কার্যক্রম হাতে নিতে হবে।
সরকারের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের (এফএফডব্লিউসি) তথ্য অনুযায়ী, সোমবার আরও তিনটি জেলায় বিস্তৃত হয়েছে বন্যা। এগুলো হচ্ছে : নাটোর, নওগাঁ ও চাঁদপুর। এ তিন জেলায় যথাক্রমে গুর, আত্রাই ও মেঘনা বিপৎসীমার উপরে বইছে। বন্যা পরিস্থিতি আগামী ২৪ ঘণ্টায় আরও অবনতি হতে পারে।
উত্তরের জেলা কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, বগুড়া, জামালপুর, সিরাজগঞ্জ, রাজবাড়ী, মানিকগঞ্জ, ঢাকা, ফরিদপুর ও টাঙ্গাইলের বিভিন্ন অঞ্চলেও বন্যা চলছে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় এসব জেলার বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে। তবে মুন্সীগঞ্জ ও শরীয়তপুরে স্থিতিশীল থাকতে পারে বন্যা পরিস্থিতি। চাঁদপুর ও মাদারীপুরেও একই অবস্থা বিরাজ করতে পারে।
মোট ৮টি নদীর পানি বইছে বিপৎসীমার উপরে। এগুলো হচ্ছে : ব্রহ্মপুত্র, যমুনা, ধরলা, গুর, আত্রাই, ধলেশ্বরী, পদ্মা ও মেঘনা। ভারতের দার্জিলিংয়ে রোববার পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় ৬১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। চেরাপুঞ্জিতে ৫৫ ও সিকিমের গ্যাংটকে ৪৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। এসব পানি বিভিন্ন নদী হয়ে শেষ পর্যন্ত ব্রহ্মপুত্রে যুক্ত হবে। এ কারণে দু-এক দিনে এ নদীতে পানিপ্রবাহ ফের বেড়ে যেতে পারে। ফলে উত্তরের বন্যা পরিস্থিতি ফের অবনতি ঘটতে পারে। পাশাপাশি মেঘনা অববাহিকায় বৃষ্টির কারণে সিলেটের সুরমা-কুশিয়ারাসহ অন্য নদীতে পানিপ্রবাহ বেড়ে যেতে পারে। এতে দেশের পূর্বাঞ্চলে বা সিলেট, সুনামগঞ্জ ও কিশোরগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতির ফের অবনতি ঘটতে পারে।
অন্যদিকে দেশের ভেতরেও বিভিন্ন অঞ্চলে ভারি বৃষ্টি অব্যাহত আছে। এফএফডব্লিউসি জানিয়েছে, ২৪ ঘণ্টায় গাইবান্ধায় ১৯০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। এ ছাড়া কক্সবাজারে ১৬১ মিলিমিটার, বান্দরবানের লামায় ৫৯ এবং নোয়াখালীতে প্রায় ৫৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
আবহাওয়া বিভাগ (বিএমডি) বলছে, সক্রিয় মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগরে বায়ুচাপের তারতম্যের আধিক্য বিরাজ করছে। এর প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা এবং সমুদ্রবন্দরসমূহের ওপর দিয়ে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। এ কারণে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে।
যুগান্তর ব্যুরো, স্টাফ রিপোর্টার ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-
ইসলামপুর (জামালপুর): ইসলামপুরে সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি উন্নতি হলেও দুর্ভোগে রয়েছে বানভাসি মানুষ। সোমবার ২৪ ঘণ্টায় যমুনার পানি ২৭ সেন্টিমিটার কমে বাহাদুরাবাদ ঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমার ১০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। অপরদিকে, ব্রহ্মপুত্রসহ শাখা নদ-নদীর পানি কমতে শুরু করেছে।
শেরপুর : পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদের পানি শেরপুর ব্রহ্মপুত্র সেতু পয়েন্টে কয়েকদিন ধরে বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। তবে তা এখনও বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। শেরপুর সদর উপজেলার চরপক্ষীমারী ইউনিয়নের নদীতীরবর্তী কুলুরচর-বেপারিপাড়া গ্রামের শতাধিক বাড়িঘরে পানি প্রবেশ করায় ওই গ্রামের ৫০টি পরিবারের ২ শতাধিক মানুষ ওই এলাকার পার্শ্ববর্তী জামালপুর শহররক্ষা বাঁধ ও রাস্তার পাশে আশ্রয় নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। কোনো ত্রাণসামগ্রী পাননি বলে দুর্গতরা অভিযোগ করেছেন।
শেরপুর সদর উপজেলার কামারের চর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান হাবিব বলেন, ব্রহ্মপুত্র ও দশআনী নদীর পানি বৃদ্ধির ফলে নদীতীরবর্তী ৬নং চর, ৭নং চর, গোয়ালপাড়া ও পয়স্তিরচর এলাকার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এ ছাড়া শ্রীবরদী উপজেলায় মৃগী নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় খরিয়া কাজীরচর ও ভেলুয়া ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে বলে খরিয়া কাজীরচর ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম মানিক জানিয়েছেন।
গাইবান্ধা : গাইবান্ধায় ব্রহ্মপুত্র, ঘাঘট ও তিস্তার পানি দ্রুত কমে যাওয়ায় জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। তবে ব্রহ্মপুত্রের পানি তিস্তামুখঘাটে সোমবার বিকাল ৩টা পর্যন্ত বিপৎসীমার ১১ সেমি. ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এদিকে করতোয়া নদীর পানি গোবিন্দগঞ্জ ও পলাশবাড়ী উপজেলায় অব্যাহতভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় অনেক নিচু এলাকায় পানি উঠেছে। রোববার বিকাল ৩টা থেকে সোমবার বিকাল ৩টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় করতোয়া নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে ৬২ সেমি.। তবে এখনও এ নদীর পানি বিপৎসীমার নিচে রয়েছে। সিভিল সার্জন বলেন, বন্যাদুর্গত এলাকায় তাদের ৬১টি মেডিকেল টিম স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে যাচ্ছে।
বরিশাল : বরিশাল নগরীসহ আশপাশের এলাকাগুলোয় দিনব্যাপী অব্যাহত গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি আর উত্তরাঞ্চলে চলমান বন্যার প্রভাবে অস্বাভাবিক জোয়ারে বিপৎসীমার উপরে কীর্তনখোলা নদীর পানি বইছে। এতে কীর্তনখোলা নদীর তীরবর্তী অনেক এলাকায় জোয়ারের পানি ঢুকে প্লাবিত হয়েছে।
রৌমারী (কুড়িগ্রাম) : রৌমারীর জিঞ্জিরাম নদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ভেসে গেছে একমাত্র বাঁশের সাঁকোটি। এতে রৌমারী উপজেলা শহরের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে প্রায় ৮ গ্রামের ২৫ হাজার মানুষের। উপজেলার সঙ্গে যোগাযোগের একমাত্র ভরসা এ বাঁশের সাঁকো। বুধবার পাহাড়ি ঢলের স্রোতের তোড়ে বাঁশের সাঁকো ভেঙে লণ্ডভণ্ড হয়ে যায়। উপজেলা প্রকৌশলী মামুন খান বলেন, আমি নতুন যোগদান করেছি। এ ব্যাপারে কিছু জানি না।