Logo
Logo
×

শেষ পাতা

বন্যা পরিস্থিতি

অনেক জায়গায় আটকে আছে বানের পানি

আরও বড় বন্যার পূর্বাভাস, কবলিত হতে পারে ২৩ জেলা

Icon

যুগান্তর ডেস্ক

প্রকাশ: ০৮ জুলাই ২০২০, ০২:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

অনেক জায়গায় আটকে আছে বানের পানি

বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও অনেক জায়গায় বানের পানিতে ডুবে রয়েছে ঘরবাড়ি। এ পানি নামছে না। এরই মধ্যে আরেকটির সতর্কতা জারি করা হয়েছে। এবারও উত্তর, পূর্ব এবং মধ্যাঞ্চলে হতে পারে এ বন্যা। এতে আক্রান্ত হতে পারে ২৩ জেলা। আগামীকাল থেকে বানের পানি দৃশ্যমান হতে শুরু করবে। ১২ জুলাইয়ের মধ্যে সংশ্লিষ্ট জেলাগুলো বন্যা কবলিত হতে পারে। এর আগে ২৭ জুন প্রথম বন্যা শুরু হয়। সেই বন্যা এখনও চলছে দেশের মধ্যাঞ্চলে। ৬ জুন পর্যন্ত উত্তরের বিভিন্ন জেলায় ছিল বন্যার পানি।

সরকারি সংস্থা বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র (এফএফডব্লিউসি) বুধবার বন্যা পূর্বাভাস সম্পর্কিত একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এটি বিভিন্ন জেলা প্রশাসকের কাছেও পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংস্থাটির নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফুজ্জামান ভূঁইয়া। তিনি বলেন, জুনের চতুর্থ সপ্তাহ থেকে মৌসুমি বায়ু সক্রিয় আছে। এর প্রভাবে বাংলাদেশ ও উজানের অববাহিকাগুলোর অনেক স্থানে বৃষ্টিপাতসহ কতিপয় স্থানে ভারি বৃষ্টিপাত হতে পারে। এর ফলে দেশের প্রধান নদীগুলোর পানি সমতল বৃদ্ধি পেয়েছে। এবারের বন্যাও ব্রহ্মপুত্র-যমুনা এবং মেঘনা অববাহিকায় হতে পারে। তাই দেশের প্রধান নদ-নদীর জন্য আগামী ২ সপ্তাহের অববাহিকাভিত্তিক ধারণাগত পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে।

বুয়েটের পানি ও বন্যা ব্যবস্থাপনা ইন্সটিটিউটের অধ্যাপক ড. একেএম সাইফুল ইসলাম বলেন, এবারের বন্যাটিকে ‘বড়’ হিসেবে উল্লেখ করা যায়। কেননা, যদিও ব্রহ্মপুত্র-যমুনা, পদ্মা ও মেঘনার পানি বঙ্গোপসাগরের দিকে যাচ্ছে। কিন্তু নদ-নদীগুলো এখন টইটম্বুর। কোথাও এখনও বিপদসীমার উপরে আছে। এ অবস্থায় এখন যে পানি উজান থেকে ফের নেমে আসবে সেটা কোথায় যাবে। নদী খালি থাকলে তা আগে ভরত। পরে বন্যা তৈরি করত। আর এখন সরাসরি নতুন আসা পানিই বন্যার কারণ হবে।

এফএফডব্লিউসি বলছে, ব্রহ্মপুত্র-যমুনা, তিস্তা, ধরলা এবং সুরমা-কুশিয়ারাসহ উত্তর ও পূর্বাঞ্চলের নদ-নদীতে বর্তমানে পানিপ্রবাহ বিপদসীমার নিচে আছে। বুধবারই মৌসুমি বায়ু পুনরায় সক্রিয় হয়েছে উজানে ভারতের অরুনাচল, আসাম, মেঘালয় ও হিমালয় পাদদেশীয় পশ্চিমবঙ্গের ওপর। এর প্রভাবে ভারি বৃষ্টিপাত বেড়েছে। এ অবস্থায় ১০ জুলাই থেকে অন্তত ৮ দিন বৃদ্ধি পেতে পারে ব্রহ্মপুত্র-যমুনার পানির সমতল। এ কারণে কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, জামালপুর, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল, মানিকগঞ্জ, পাবনা, নওগাঁ, নাটোর জেলার নিম্নাঞ্চল বন্যা কবলিত হতে পারে। এছাড়া বর্তমানে যেখানে বন্যা চলছে সেখানে পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে। বৃষ্টিপাত পরিস্থিতির ওপর এটা চলতি মাসের চতুর্থ সপ্তাহ পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে।

এছাড়া দেশের উত্তরের নদী তিস্তা এবং ধরলার পানির সমতল আজ বাড়তে পারে। বৃষ্টিপাত পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে ৩-৪ দিন স্থায়ী হতে পারে এটা। এ সময়ে তিস্তা ও ধরলার নদীর পানির সমতল কয়েক স্থানে বিপদসীমা পার করতে পারে। অববাহিকাভুক্ত লালমনিরহাট, নীলফামারী ও রংপুর জেলায় স্বল্পমেয়াদি বন্যা হতে পারে।

এদিকে, গঙ্গা-পদ্মার (রাজবাড়ির ওপরের অংশ) পানির সমতল বর্তমানে হ্রাস পাস পাচ্ছে। কিন্তু ১২ জুলাই থেকে পুনরায় ৭ দিন পানির সমতল বাড়বে। যদিও বিপদসীমা পার করার আশঙ্কা নেই। কিন্তু পদ্মার পানি (রাজবাড়ির গোয়ালন্দ থেকে নিচের অংশ) সমতল ১১ জুলাই থেকে ১০ দিন বাড়তে পারে। ১২ জুলাইয়ের দিকে কিছু স্থানে বিপদসীমা পার করতে পারে। এতে রাজবাড়ি, ঢাকা, মুন্সীগঞ্জ, ফরিদপুর, মাদারীপুর, শরীয়তপুর ও চাঁদপুরে বন্যা হতে পারে। উজানে বৃষ্টি পরিস্থিতির ওপর এ বন্যা চলতি মাসের চতুর্থ সপ্তাহ পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে।

এছাড়া ভারতের আসাম-মেঘালয় অংশে ভারি বৃষ্টিপাতের কারণে সিলেট, সুনামগঞ্জ ও কিশোরগঞ্জের নিম্নাঞ্চলেও বন্যা দেখা দিতে পারে। ৯ জুলাই প্রথমে সুরমা, কুশিয়ারা, সারিগোয়াইন, যদুকাটা, সোমেশ্বরী, ভুগাই, কংস, মনু ও খোয়াই নদীর সমতল বেড়ে গিয়ে পরে বিপদসীমা পার করতে পারে। যুগান্তর ব্যুরো, স্টাফ রিপোর্টার ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-

ফরিদপুর : ফরিদপুরের সদরপুরে পদ্মা ও আড়িয়ালখাঁ নদের পানি কিছুটা কমলেও দুর্ভোগ কমেনি চরাঞ্চলের বন্যা কবলিত মানুষের। বন্যার পানিতে উপজেলার নয়টি ইউনিয়নের মধ্যে পাঁচটি ইউনিয়নের কয়েক হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। বন্যা কবলিত এলাকায় বিশুদ্ধ পানির পাশাপাশি গো-খাদ্যের সংকট দেখা দিয়েছে। গত ৪ দিনে আড়িয়ালখাঁ নদের প্রবল স্রোতের তোড়ে চর মানাইড়, ঢেউখালী, চর নাছিরপুরসহ তিনটি ইউনিয়নে নদী ভাঙনে ফসলি জমি, গাছপালাসহ শতাধিক পরিবারের বাড়িঘর নদীতে বিলীন হয়েছে।

কালিহাতী (টাঙ্গাইল) : টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার গোহালিয়াবাড়ি ইউনিয়নের বুধবার সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত ১৫টি পরিবারের ঘরবাড়ি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। ভয়ংকর রূপ নিচ্ছে যমুনা নদী। তীব্র ভাঙন আতঙ্কে অনেকে সরিয়ে নিচ্ছেন ঘরবাড়ি। করোনার থাবায় কর্মহীন হয়ে পড়া মানুষগুলো এবার মাথা গোঁজার ঠাঁইটুকু হারিয়ে চরম বিপাকে।

গাইবান্ধা : বাঙালি নদীর অব্যাহত ভাঙনে সাঘাটা উপজেলার কচুয়া ইউনিয়নের রামনগর গ্রামের মানুষ এখন আতঙ্গে রয়েছেন। দু’দিনে ওই গ্রামের ২০টি বাড়িঘর নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। আরও অর্ধশতাধিক বাড়ি নদী ভাঙনের মুখে। ৯ ঘণ্টায় ব্রহ্মপুত্র ও ঘাঘট নদীর পানি স্থির রয়েছে। তবে তিস্তা এবং করতোয়ার পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। মঙ্গলবার বেলা ৩টা থেকে বুধবার বেলা ৩টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় তিস্তার পানি ১৩ সেমি. এবং এ সময় করতোয়া নদীর পানি গোবিন্দগঞ্জের কাটাখালি পয়েন্টে ৪৫ সেমি. বৃদ্ধি পাওয়ায় গোবিন্দগঞ্জ ও পলাশবাড়ি উপজেলার নিচু এলাকাগুলো তলিয়ে গেছে।

শেরপুর : শেরপুরে পুরাতন ব্রহ্মপুত্রের পানি ২৪ ঘণ্টায় ব্রহ্মপুত্র সেতু পয়েন্টে ৯ সেমি. কমলেও নদী তীরবর্তী বানভাসিদের দুর্ভোগ কমেনি। নদী তীরবর্তী কুলুরচর-বেপারিপাড়া গ্রামের শতাধিক বাড়িঘর এখনও বানের পানিতে ডুবে রয়েছে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম