সানেম নেটিজেন ফোরামের আলোচনা
প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নে গতি বৃদ্ধির তাগিদ
যুগান্তর রিপোর্ট
প্রকাশ: ১১ জুলাই ২০২০, ০৬:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান বলেছেন, বাংলাদেশ বৃহৎ প্রণোদনা প্যাকেজের ঘোষণা দিলেও সেটি বিতরণের গতি শ্লথ। ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের অর্থায়নের ক্ষেত্রে ব্যাংক নির্ভরশীল না হয়ে ক্ষুদ্রঋণ বিতরণকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে এক্ষেত্রে সক্রিয় করা যায়। শনিবার সানেম নেটিজেন ফোরামের অষ্টম পর্ব আলোচনায় তিনি এ কথা বলেন।
ব্যাংকিং খাতের নানা প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতার কথা তুলে ধরে ড. সেলিম বলেন, ব্যাংকিং খাতের দুর্বলতার জন্য প্রণোদনা প্যাকেজের বিতরণ বাধাগ্রস্ত হতে পারে। প্রণোদনা প্যাকেজ বিতরণ ও বাস্তবায়নে একটি মনিটরিং ব্যবস্থা দাঁড় করাতে হবে। এছাড়া ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের জন্য ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজ কার্যকরী হতে হলে, ঋণের শর্ত শিথিল করতে হবে। সুদের হারের ব্যাপারেও ছাড় দিতে হবে। তিনি বলেন, এবারের বাজেটে রাজস্ব আদায়ের যে লক্ষ্য ধরা হয়েছে, সেটি অবাস্তব। অন্যদিকে কর আদায়ে কোনো প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের উদ্যোগ নেই। রাতারাতি প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতাগুলো কাটিয়ে ওঠা হয়তো সম্ভব নয়; কিন্তু অন্তত সঠিক দিকে পদক্ষেপ নেয়া দরকার
ড. সেলিম রায়হানের পরিচালনায় আলোচনায় জুমের মাধ্যমে শিক্ষক, গবেষক, সাংবাদিক, শিক্ষার্থীসহ প্রায় ৪৫ জন ব্যক্তি এ পর্বে অংশগ্রহণ করেন। এ ছাড়াও সানেম টিমে ছিলেন সংস্থাটির গবেষণা পরিচালক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. সায়েমা হক বিদিশা, সানেমের রিসার্চ ইকোনমিস্ট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের প্রভাষক মাহতাব উদ্দিন, সিনিয়র রিসার্চ অ্যাসোসিয়েট ইশরাত শারমীন এবং রিসার্চ অ্যাসোসিয়েট ফাবিহা বুশরা।
ড. সেলিম আরও বলেন, বাংলাদেশের কোভিড রোগ পরীক্ষার সক্ষমতা বৃদ্ধি পেলেও পরীক্ষার সংখ্যা সেই অনুপাতে বৃদ্ধি পায়নি। যদিও বিশেষজ্ঞদের মতে, দৈনিক কমপক্ষে ২০ হাজার পরীক্ষা করা উচিত। অন্যদিকে ঠিকমতো লকডাউন বাস্তবায়ন না করায় মহামারী পরিস্থিতির ক্রমবনতি ঘটছে। একই সাথে রোগ পরীক্ষায় দুর্নীতি পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলছে। এ ধরনের দুর্নীতির বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে।
রেমিটেন্সের রেকর্ড প্রবাহ নিয়ে অর্থনীতিবিদ ও বিশেষজ্ঞদের মতামত তুলে ধরে তিনি বলেন, আশঙ্কা করা হচ্ছে, বর্তমানে যে রেমিটেন্স আসছে সেটি প্রবাসী শ্রমিকদের শেষ সঞ্চয়। প্রবাসী শ্রমিকদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশের দেশে ফেরত আসার আশঙ্কা আরও বাড়ছে। বিশ্ব অর্থনীতির অবস্থারও উন্নতির কোনো সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার সঞ্চয় বা রিজার্ভ কাজে লাগানোর ক্ষেত্রে বছর কয়েক আগে প্রস্তাবিত সার্বভৌম বন্ডের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, এটি একটি সম্ভাবনা হলেও এক্ষেত্রে অবশ্যই সতর্ক হতে হবে।
তিনি বলেন, মূল্যস্ফীতির ফলে প্রকৃত আয় কমে গেছে। আত্মকর্মসংস্থানে নিয়োজিতদের পুঁজি শেষ হয়ে যাচ্ছে। উদ্যোক্তাদের বাজারে টিকে থাকাই কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে এবং নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য ক্রমাগত সুযোগও সংকুচিত হচ্ছে। শহর থেকে গ্রামে একধরনের উল্টো অভিবাসন বা রিভার্স মাইগ্রেশন হচ্ছে। যে নিু আয়ের পরিবারগুলো গ্রামে ফিরে যাচ্ছে, সেখানে গিয়ে তারা কোনো কাজ না-ও পেতে পারে এবং এতে নতুন সামাজিক চ্যালেঞ্জও তৈরি হতে পারে।
আলোচনায় কয়েকটি উল্লেখযোগ্য বিষয় উঠে আসে। এগুলো হল- চীন থেকে চলে যাওয়া বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার ব্যাপারে বাংলাদেশের মনোযোগী হতে হবে। এছাড়া সরকারি ও বেসরকারি উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাদের বেতন কাটছাঁটের মাধ্যমে কৃচ্ছ তাসাধন করা যেতে পারে। এর ফলে নিু আয়ের চাকরিগুলো টিকিয়ে রাখা সম্ভব। আসন্ন কোরবানি ঈদে চামড়া সংগ্রহ ও বিক্রি করা কঠিন হবে। তবে চামড়ার অর্থনৈতিক গুরুত্ব সহজেই অনুধাবন করা যায় এবং এই প্রক্রিয়াকে সহজতর করার জন্য সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করা দরকার।
