করোনার ভারতীয় টিকার ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল শুরু
পুরো বিশ্বের জন্য ভ্যাকসিন তৈরিতে সক্ষম ভারত -বিল গেটস
যুগান্তর ডেস্ক
প্রকাশ: ১৯ জুলাই ২০২০, ০৬:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
ভারতের সম্ভাব্য করোনা ভ্যাকসিনের (টিকা) ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল (মানবদেহে পরীক্ষা) শুরু হয়েছে। হায়দরাবাদের ভ্যাকসিন প্রস্তুতকারক কোম্পানি ভারত বায়োটেক প্রথম ধাপের এই ট্রায়াল শুরু করেছে। মাইক্রোসফটের সহপ্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস জানিয়েছেন, সারা বিশ্বের জন্য করোনার ভ্যাকসিন উৎপাদনে সক্ষম ভারতীয় ফার্মাসিউটিক্যাল শিল্প। এদিকে করোনা চিকিৎসায় ডেক্সামেথাসন ওষুধ কার্যকরী বলে প্রমাণ পেয়েছেন ব্রিটিশ বিজ্ঞানীরা। আজ অক্সফোর্ডের টিকার প্রথম ধাপের হিউম্যান ট্রায়ালের ফল প্রকাশ করা হবে।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের খবরে বলা হয়েছে, হরিয়ানার রোহতকের ‘পোস্ট পিজিআই অব মেডিকেল সায়েন্সে’ শুরু হয়েছে করোনার সম্ভাব্য ভ্যাকসিন ‘কোভ্যাকসিন’-এর হিউম্যান ট্রায়াল।
এ ব্যাপারে হরিয়ানার স্বাস্থ্যমন্ত্রী অনিল বিজ টুইটারে লেখেন, ভারত বায়োটেকের তৈরি করোনার ভ্যাকসিনের ট্রায়াল শুক্রবার থেকে পিজিআইতে শুরু হয়েছে। তিনজন স্বেচ্ছাসেবকের শরীরে এটি প্রয়োগ করা হয়েছে। ভ্যাকসিন প্রয়োগের পর তারা তিনজনই ভালো আছেন।
ভারতে তৈরি ভ্যাকসিন পরীক্ষামূলকভাবে মানবদেহে প্রয়োগের জন্য যে ১২ হাসপাতালকে বেছে নেয়া হয়েছিল সেগুলোর মধ্যে অন্যতম হরিয়ানার রোহতকের পোস্ট পিজিআই অব মেডিকেল সায়েন্স।
পরীক্ষামূলক প্রয়োগের জন্য ইতোমধ্যেই ২২ স্বেচ্ছাসেবকের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পিজিআইর এক কর্মকর্তা। প্রথম পর্যায়ের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল ৮ থেকে ১০টি বিষয়ের ওপর চলবে।
এদিকে হিন্দুস্তান টাইমসের এক খবরে বলা হয়, ধনকুবের বিল গেটস ভারতে ‘অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অনেক কাজ হচ্ছে’ বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেছেন, অন্য রোগ নিরাময়ের জন্য ভ্যাকসিন বানানোর যে সক্ষমতা তৈরি হয়েছে, সেটি ব্যবহার করে সারা বিশ্বের জন্য করোনার ভ্যাকসিনও উৎপাদন করতে পারবে ভারত।
বৃহস্পতিবার ডিসকোভারি প্লাসের একটি প্রামাণ্যচিত্রে ভারতের করোনা মহামারী পরিস্থিতি নিয়ে এসব কথা জানান বিল গেটস। তিনি বলেন, সারা বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে বেশি টিকা তৈরি হচ্ছে ভারতে। সেরাম ইন্সটিটিউটের মধ্যে অন্যতম। এর বাইরে বায়ো-ই, ভারত বায়োটেকসহ আরও অনেক প্রতিষ্ঠান কাজ করছে।
বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন ভারত সরকারের বায়োটেকনোলজি বিভাগ, আইসিএমআর ও মুখ্য বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টার সঙ্গে একযোগে কাজ করছে। গত দশকে গেটস ফাউন্ডেশন কীভাবে প্রতিষেধক নিয়ে ভারত সরকারের সঙ্গে কাজ করে তা উল্লেখ করেন বিল গেটস।
তিনি জানান, উত্তরপ্রদেশ ও বিহারে তারা কাজ করেছেন। বর্তমান পরিস্থিতিতে অনলাইনে স্বাস্থ্যকর্মীদের ট্রেনিংয়ের কাজে তার সংস্থা কাজ করছে বলেও জানান তিনি।
ডেক্সামেথাসনের কার্যকারিতার প্রমাণ মিলেছে : করোনার চিকিৎসার জন্য ডেক্সামেথাসন নামের ওষুধটির কার্যকারিতার প্রমাণ পেয়েছেন ব্রিটিশ বিজ্ঞানীরা। শুক্রবার এই ওষুধটির ট্রায়ালের পূর্ণাঙ্গ ফলাফল নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অব মেডিসিন সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়।
সেখানে বলা হয়, ডেক্সামেথাসন করোনা চিকিৎসায় নিশ্চিত উপকার করতে পারলেও এর ঝুঁকিও রয়েছে। জানা গেছে, ট্রায়ালে ২ হাজার ১০৪ জন করোনা রোগীর ওপর ডেক্সামেথাসন ওষুধ দেয়া হয়েছে। এই রোগীদের দশ দিনের বেশি সময় ধরে ছয় মিলিগ্রাম করে ডেক্সামেথাসন ওষুধ দেয়া হয়েছে।
এছাড়া ওই ট্রায়ালে অংশ নেয়া আরও ৪ হাজার ৩২১ জন রোগীকে সাধারণ চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। দেখা গেছে, চার সপ্তাহ পর ডেক্সামেথাসন ওষুধ প্রয়োগের কারণে ভেন্টিলেশনে থাকা রোগীদের ৩৬ শতাংশ মৃত্যুর ঝুঁকি কমে গেছে। এছাড়া শুধু অক্সিজেনে থাকা রোগীদের ১৮ শতাংশ মৃত্যু ঝুঁকি কমিয়েছে ডেক্সামেথাসন।
কতটা কার্যকর অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিন, জানা যাবে আজ : অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বহুল প্রতীক্ষিত ভ্যাকসিন সম্পর্কে সর্বশেষ তথ্য প্রকাশ করতে যাচ্ছে সংশ্লিষ্টরা। এই ভ্যাকসিনের উন্নয়নে যৌথভাবে কাজ করে যাচ্ছে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও এস্ট্রাজেনেকার গবেষকরা।
মানবদেহে এই ভ্যাকসিন প্রবেশের যে প্রাথমিক ফল পাওয়া গেছে, তার তথ্য প্রকাশ করা হবে আজ। বিখ্যাত ল্যানসেট মেডিকেল জার্নালে ভ্যাকসিনের প্রথম ধাপের ট্রায়ালের বিস্তারিত ফল প্রকাশিত হবে।
