Logo
Logo
×

শেষ পাতা

বিদেশ থেকে আসছে ক্ষতিকর কীটনাশক

পরীক্ষা নিয়ে সরকারি দুই প্রতিষ্ঠানের দ্বন্দ্ব

উৎপাদিত কৃষিপণ্য দূষিত হচ্ছে -বিএফএসএ * কীটনাশক সংকট হলে ব্যাহত হবে উৎপাদন : ডিএই

Icon

উবায়দুল্লাহ বাদল

প্রকাশ: ১৯ জুলাই ২০২০, ০৬:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

পরীক্ষা নিয়ে সরকারি দুই প্রতিষ্ঠানের দ্বন্দ্ব

বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের (বিএফএসএ) গবেষণায় উঠে এসেছে বিদেশ থেকে আমদানি করা অধিকাংশ কীটনাশকে ক্ষতিকর ভারি ধাতু রয়েছে। নিম্নমানের এসব কীটনাশক ব্যবহারে দেশে উৎপাদিত কৃষিপণ্য দূষিত হচ্ছে। তাই পরীক্ষা ছাড়া যেন কীটনাশক দেশে প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরসহ (ডিএই) সংশ্লিষ্ট দফতরে চিঠি দেয় নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতের দায়িত্বে থাকা সরকারি এ প্রতিষ্ঠান।

স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে বৈঠক করে সিদ্ধান্ত হয়, জুলাই থেকেই এটি কার্যকর হবে। অর্থাৎ ১ জুলাই থেকে পরীক্ষা ছাড়া কোনো কীটনাশক দেশে প্রবেশ করবে না।

কিন্তু সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের আগেই কীটনাশক পরীক্ষার সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে ডিএই। আমদানি করা কীটনাশক পরীক্ষা করতে গেলে ফসল উৎপাদনে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে- এমন যুক্তি দেখিয়ে সরকারি এ প্রতিষ্ঠানটি পরীক্ষার সিদ্ধান্ত বাতিল করতে চিঠি দেয় কৃষি মন্ত্রণালয়ে। পরীক্ষা নিয়ে সরকারি দুই প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দেখা দিয়েছে মতবিরোধ, দ্বন্দ্ব। সূত্র বলছে, করোনা-পরবর্তী পরিস্থিতির কথা বিবেচনা করে বন্দরে কীটনাশক পরীক্ষার সিদ্ধান্ত কার্যকরের সময় এক বছর বাড়ানো হয়েছে।

বিএফএসএ’র সিনিয়র সদস্য মঞ্জুর মোর্শেদ আহমেদ যুগান্তরকে বলেন, ‘আমদানি করা কীটনাশকে ক্ষতিকর ভারি ধাতু রয়েছে তা আমাদের গবেষণায় প্রমাণিত। বিষয়টি আমরা সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোকে জানিয়ে করণীয় সম্পর্কে চিঠি দিয়েছি। স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে বৈঠক করেছি। সেখানে সিদ্ধান্ত হয়েছে চলতি মাস থেকে আমদানি করা কীটনাশক পরীক্ষা ছাড়া দেশে ঢুকবে না। কিন্তু কৃষি উৎপাদন ব্যাহতের আশঙ্কা প্রকাশ করে ডিএই পরীক্ষা না করার বিষয়ে মত দেয়। করোনা-পরবর্তী কৃষি উৎপাদন বেগবান করতে হলে এ পরীক্ষার সিদ্ধান্ত বাধা বলে তারা সরকারের উচ্চমহলে ধারণা দেয়। ফলে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের সময় এক বছর পেছাতে হয়েছে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোতে চিঠি দেয়া হয়েছে।’

ডিএই ২০ মে কৃষি মন্ত্রণালয়ে পাঠানো চিঠিতে বলেছে, বিএফএসএ ৪৭টি ফরমুলেটেড ব্যান্ড কীটনাশকের পরীক্ষা করে ক্ষতিকর ভারি ধাতুর (সিসা, ক্যাডমিয়াম, ক্রোমিয়াম) উপস্থিতি পেয়েছে। ফলে আগামী ১ থেকে ২০ জুলাই বালাইনাশকের চালান এটমিক এনার্জি সেন্টারে ভারি ধাতু পরীক্ষা করে ছাড়পত্র সাপেক্ষে বন্দর থেকে খালাসের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশনা দিয়েছে। এই বাধ্যবাধকতার ফলে বালাইনাশক আমদানিতে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হওয়ায় ফসল উৎপাদনে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। ফসলে রোগবালাই, পোকামাকড় যাতে মহামারী আকারে দেখা না দেয় এবং খাদ্য উৎপাদনে নেতিবাচক প্রভাব না পড়ে তাই দেশে কীটনাশকের সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। এজন্য বিএফএসএকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান বরাবর পাঠানো পত্রটি ও ডিএই’র মহাপরিাচলক বরাবর লাইসেন্স বাতিলের পত্রটি প্রত্যাহারে নির্দেশনা দেয়ার অনুরোধ করা হয় চিঠিতে।

এ প্রসঙ্গে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মহাপরিচালক ড. মো. আবদুল মুঈদ যুগান্তরকে বলেন, ‘কীটনাশক ক্ষতিকর হলেও তা গাছপালা ও কৃষি উৎপাদনে ব্যবহার হয়। কীটনাশক দেয়া ফল বা ফসলে ক্ষতিকর পদার্থ থাকে কিনা তা কিন্তু তারা পরীক্ষা করেনি। আমাদের বক্তব্য হল- সেটা পরীক্ষা করে যদি প্রমাণিত হয় ফল বা ফসলেও ক্ষতিকর পদার্থ থাকে, তাহলে তাদের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে হবে। কিন্তু সে বিষয়ে তারা কোনো পরীক্ষাই করেনি। কৃষি উৎপাদনে কীটনাশক খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ব্যবসায়ীদের দাবি, আমদানি করা কীটনাশক পরীক্ষা শুরু হলে সংকট দেখা দিতে পারে এবং এর প্রভাবে কৃষি উৎপাদন ব্যাহত হবে। করোনা-পরবর্তী পরিস্থিতিতে যাতে খাদ্য সংকট না হয় সেজন্যই আমরা কৃষি মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছি।’ অভিযোগ রয়েছে, কিছু অসাধু কর্মকর্তা অবৈধভাবে নিম্নমানের কীটনাশক আমদানির অনুমতি দিয়ে থাকে। তারাই এ সিদ্ধান্তটি বাস্তবায়ন করতে দিচ্ছে না। অনেক পণ্যই আমদানির পর বন্দরে পরীক্ষার পর আনা হয়। এতে করে আমদানিতে কোনো ব্যাঘাত ঘটে না।

জানা গেছে, গত বছর শেষদিকে বিএফএসএ আমদানি করা ৪৭টি কীটনাশকের নমুনা ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা করে। এর মধ্যে ৪২টিতেই লেড, ক্যাডমিয়াম ও ক্রোমিয়ামের মতো ক্ষতিকর ভারি ধাতু ধরা পড়ে। ভারি ধাতুযুক্ত কীটনাশক দিনের পর দিন ব্যবহারের কারণে জমির মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। একই সঙ্গে এসব ভারি ধাতু মানুষের শরীরে ঢুকে অসুখের কারণ হতে পারে। আর এ কারণেই নিম্নমানের কীটনাশক পরীক্ষার জন্য রাজস্ব বোর্ডকে চিঠি দেয়া হয়। এতে বলা হয়, কীটনাশকের প্রতিটি চালান বন্দরে আসার পর এটমিক এনার্জির মাধ্যমে পরীক্ষা করে ভারি ধাতুর উপস্থিতি না পেলে তবেই ছাড় করানো যাবে। অপর চিঠিতে ডিএইকে জানায়, যারা নিম্নমানের কীটনাশক আমদানি করবে তাদের লাইসেন্স যেন স্থগিত বা বাতিল করা হয়।

কীট পরীক্ষা সরকারি প্রতিষ্ঠান

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম