Logo
Logo
×

শেষ পাতা

সাহেদকে জিজ্ঞাসাবাদে নতুন তথ্য

দেড় শতাধিক প্রতারণার অভিযোগ

Icon

যুগান্তর রিপোর্ট

প্রকাশ: ২০ জুলাই ২০২০, ০৬:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

দেড় শতাধিক প্রতারণার অভিযোগ

ভদ্রবেশী ধূর্ত প্রতারক রিজেন্ট হাসপাতালের মালিক সাহেদ করিমের বিরুদ্ধে দেড় শতাধিক প্রতারণার খবর পেয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। প্রতিদিনই অভিযোগের তালিকায় যোগ হচ্ছে নতুন নতুন প্রতারণার খবর। এক প্রতারকের বিরুদ্ধে এত অভিযোগ সামাল দিতে গিয়ে স্বাভাবিক কার্যক্রম পরিচালনায় হিমশিম খেতে হচ্ছে সংশ্লিষ্টদের।

এ অবস্থায় সাহেদের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানাতে হটলাইন নম্বর চালু করে র‌্যাব। সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ফোনে ও অনলাইনে এসব প্রতারণার অভিযোগ এসেছে। প্রতারণার অভিযোগ জানিয়েছেন প্রবাসীরাও। ভুক্তভোগীদের সহায়তায় বহুমুখী প্রতারক সাহেদের এসব প্রতারণার খোঁজে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মাঠে নেমেছে।

আর ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে বেশ গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন সাহেদ। এছাড়া ব্লক করা হয়েছে তার জাতীয় পরিচয়পত্র। তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনাভাইরাসের ভুয়া পরীক্ষাসহ এ সংক্রান্ত অনিয়ম নিয়ে রিজেন্ট হাসপাতালে অভিযান পরিচালনা করা হলেও পরে বেরিয়ে এসেছে সাহেদের বহুমুখী প্রতারণার তথ্য।

বিভিন্ন ভুয়া পরিচয়ের পাশাপাশি অন্তত ১১টি প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান ও সম্পাদক পরিচয় দিতেন সাহেদ। এসব প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে অসংখ্য ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান থেকে হাতিয়ে নিয়েছেন কয়েক কোটি টাকা।

নিজের ক্ষমতা প্রদর্শনে ব্যবহার করতেন সরকার, প্রশাসন ও রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সঙ্গে তোলা ছবি। নিজ প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের পাওনা টাকা না দেয়া এবং শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের অভিযোগের তথ্য পাওয়া যাচ্ছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে র‌্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলম যুগান্তরকে বলেন, ‘রিজেন্ট হাসপাতালে অভিযানের পর এত মানুষ তাদের অভিযোগ নিয়ে আমাদের কাছে আসতে শুরু করেছে যে, অন্যান্য কাজই করতে পারছিলাম না।  পরে একটি হটলাইন নম্বর খোলা হয়েছে। সেখানেও তার বিরুদ্ধে অভিযোগের পাহাড় হয়ে আছে। আমরা অভিযোগকারীদের সহায়তায় সেই বিষয়গুলোও দেখছি। সে এত এত প্রতারণা করেছে- বলে শেষ করা যাবে না। এর মাধ্যমে সে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। আমার ধারণা, এ টাকা সে বিদেশে পাচার করেছে। এই অর্থের বিষয়েও অনুসন্ধান চলছে।’

র‌্যাবের মুখপাত্র এবং আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লে. কর্নেল আশিক বিল্লাহ যুগান্তরকে বলেন, সাহেদ করিমের বিষয়ে বিভিন্ন ধরনের প্রতারণার অভিযোগ আসছে। হাজার থেকে কোটি- এসব অঙ্কের অভিযোগের তথ্য আমাদের কাছে এসেছে। অভিযোগগুলো যাচাই-বাছাই হচ্ছে।

আমরা ভুক্তভোগীদের সহায়তায় এসব প্রতারণার বিষয়ে জানার চেষ্টা করছি। পাশাপাশি তাদের আইনি সহায়তাও দেয়া হচ্ছে। সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন প্রান্ত ও প্রবাস থেকে অনলাইনে এবং মুঠোফোনে দেড় শতাধিক অভিযোগ এসেছে বলেও জানান এই কর্মকর্তা। 

এদিকে রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান সাহেদ করিম ১০ দিনের রিমান্ডে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের কাছে প্রতারণার বিষয়ে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন।

এর আগে ১৬ জুলাই বুধবার ভোর ৫টার দিকে সাতক্ষীরার দেবহাটা সীমান্তবর্তী কোমরপুর গ্রামের লবঙ্গবতী নদী পার হওয়ার জন্য বোরকা পরে মাছ ধরা নৌকায় ওঠা অবস্থায় সাহেদকে গ্রেফতার করে র‌্যাব।

জিজ্ঞাসাবাদে সাহেদ করোনাভাইরাস পরীক্ষায় প্রতারণার কথা স্বীকার করেছে। একটি সূত্র জানায়, সোমবারও তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। দু-একদিনের মধ্যে তাকে নিয়ে আবারও অভিযানে যেতে পারে ডিবি।

জিজ্ঞাসাবাদে সে টাকা দিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও অধিদফতর সংশ্লিষ্টদের মাধ্যমে কাজ করিয়ে নেয়ার কথা জানিয়েছে। এসব অপকর্মের পেছনের হোতাদের বিষয়েও সাহেদকে দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ চলছে বলে জানায় সূত্রটি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সোমবার ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) উত্তরা বিভাগের উপকমিশনার কাজী শফিকুল আলম যুগান্তরকে বলেন, রিমান্ডে তার থেকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। ইতোমধ্যে তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে উত্তরায় অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে।

এখনও রিমান্ডের সাত দিন বাকি আছে। জিজ্ঞাসাবাদ অব্যাহত রয়েছে। আশা করছি আরও অনেক কিছু জানা যাবে। তিনি আরও বলেন, ভুক্তভোগীদের অনেকের অভিযোগ ছিল, তার (সাহেদের) বিরুদ্ধে অভিযোগ জানাতে পারছেন না।

এখন তো তেমন হওয়ার সুযোগ নেই। যার যা অভিযোগ আছে থানায় জানান। আমরা তদন্ত করে দেখব।

জাতীয় পরিচয়পত্র ব্লক : রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান সাহেদের জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি কার্ড) ব্লক করে দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনের সিনিয়র সচিব মো. আলমগীর। তার জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য সংশোধনে জালিয়াতি করেছেন কিনা- তা নিয়ে তদন্ত চলছে।

আমরা অভিযোগ পেয়েছি, তিনি জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে এনআইডি সংশোধন করেছেন। সোমবার নির্বাচন ভবনের নিজ দফতরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব তথ্য জানান। 

এদিকে রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান সাহেদের জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য সংশোধন প্রসঙ্গে ইসির সিনিয়র সচিব বলেন, সাহেদ বিদেশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সনদ দিয়ে এনআইডি সংশোধন করেছেন।

আমরা ব্রিটিশ কাউন্সিলের মাধ্যমে কিংবা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে খোঁজ নিয়ে দেখব তার ‘ও’ লেভেলের সার্টিফিকেট সত্য কিনা। এরপর তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত হলে তার সংশোধিত এনআইডি বাতিল করা হবে।

এছাড়া তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হবে। আমরা ইতোমধ্যে এ ধরনের ঘটনায় অনেকের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছি। অনেকে শাস্তিও পেয়েছেন।

ইসি সূত্রে জানা গেছে, সাহেদের জাতীয় পরিচয়পত্রে নাম ছিল সাহেদ করিম। পরবর্তীকালে তিনি এটি সংশোধন করে মোহাম্মদ সাহেদ হয়ে যান। প্রথমে তার জন্ম সাল ছিল ২ জুন ১৯৭৮। পরবর্তীকালে তিনি সেটা ১৯৭৫ সালের ২ জুলাই করে নেন।

সংশোধনের সপক্ষে তিনি ‘ও’ লেভেলের কাগজপত্র দাখিল করেন। যদিও প্রথমে তিনি সাতক্ষীরা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস দেখিয়েছিলেন।

এ বিষয়ে ইসি সচিব বলেন, আমাদের মাঠপর্যায়ের কেউ হয়তো সহায়তা করতে পারে। তিনি তো মহাপ্রতারক আপনারাই বলছেন। কাজেই যে কোনো প্রতারণার আশ্রয় তিনি নিতে পারেন। আমরা তদন্ত করে দেখছি।

আমাদের কেউ যদি তার এনআইডি সংশোধন সংক্রান্ত জালিয়াতির সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকে, তবে তার বিরুদ্ধেও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে। ইতোমধ্যে বেশকিছু ঘটনায় আমরা আমাদের মাঠ কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধেও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়েছি।
 

সাহেদ রিজেন্ট র‌্যাব

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম