ব্যাংকের অর্থ আত্মসাতে দুদকের মামলা
সাহেদের অবৈধ অস্ত্রের অনুসন্ধান করা হচ্ছে
জেকেজির চেয়ারম্যান নন আহ্বায়ক ডা. সাবরিনা -পুলিশ
যুগান্তর রিপোর্ট
প্রকাশ: ২২ জুলাই ২০২০, ০৬:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
রিজেন্ট হাসপাতালের মালিক সাহেদ করিমের অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহারের বিষয়ে র্যাব ও পুলিশ অনুসন্ধান চালাচ্ছে। বৈধ অস্ত্রের পাশাপাশি সাহেদ অবৈধ অস্ত্র ব্যবহার করেছে কিনা তা খতিয়ে দেখছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। সাহেদকে র্যাবের কাছে হস্তান্তরের সিদ্ধান্ত হলেও তার অস্ত্র ও মাদকের ঘটনা তদন্ত করবে ডিবি।
সাহেদকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ডিবি পুলিশ এসব তথ্য জানায়। এদিকে ব্যাংকের অর্থ জালিয়াতির ঘটনায় সাহেদ, এনআরবি ও বেসিক ব্যাংকের তিন কর্মকর্তাসহ সাত জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
সাহেদের মামলার তদন্তের অগ্রগতি সম্পর্কে জানাতে বুধবার দুপুরে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার মো. আবদুল বাতেন সংবাদ সম্মেলন করেন। ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, রিজেন্ট হাসপাতাল কত সংখ্যক করোনা টেস্টের সার্টিফিকেট দিয়েছে এবং কী পরিমাণ স্যাম্পল কালেকশন করেছে এসব বিষয়ে তদন্ত করা হয়েছে।
তবে যতটুকু জেনেছি রিজেন্ট হাসপাতাল থেকে করোনা টেস্টের প্রায় ৫ থেকে সাড়ে ৫ হাজার সার্টিফিকেট দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে যেসব সার্টিফিকেট টেস্ট না করে দিয়েছে সেগুলোর বিষয়ে অনুসন্ধান চলছে। তিনি বলেন, পাঁচ দিন ধরে সাহেদ পুলিশ রিমান্ড ছিলেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সাহেদের মামলাটির তদন্তভার র্যাবের কাছে হস্তান্তর করেছে। তবে শুরু থেকেই সাহেদের মামলাটি র্যাব দেখছে।
তিনি আরও বলেন, রিমান্ডে থাকা অবস্থায় সাহেদকে নিয়ে আমরা অভিযান করে তার দেখানো মতে অস্ত্র ও মাদক উদ্ধার করেছি। এ সংক্রান্ত দুটি মামলা হয়েছে। মামলাগুলো ডিবি তদন্ত করবে। সাহেদের বিরুদ্ধে মোট কয়টি মামলা হয়েছে- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে ডিবি কর্মকর্তা বাতেন বলেন, সাহেদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন জেলায়ও মামলা হয়েছে।
এসব মামলা সংশ্লিষ্ট জেলার থানা তদন্ত করবে। সাহেদ মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তদন্তে এমন তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে হয়তো সেবন করত। অস্ত্র ও মাদকের সঙ্গে অন্য কারও সম্পৃক্ততা রয়েছে কিনা তা তদন্ত করা হচ্ছে। জেকেজি হেলথ কেয়ার সম্পর্কেও ডিবির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার বাতেন কথা বলেন।
গ্রেফতারের আগে বিভিন্ন মিডিয়ায় ডা. সাবরিনা চৌধুরী নিজেকে জেকেজির চেয়ারম্যান পরিচয় দিলেও ডিবির তদন্তে তা পাওয়া যায়নি। এ বিষয়ে আবদুল বাতেন বলেন, চেয়ারম্যান নয়, আহ্বায়ক হিসেবে ডা. সাবরিনার সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে। তার মামলার তদন্তের অনেক অগ্রগতি হয়েছে। এ মামলায় আমরা দ্রুত চার্জশিট দিতে পারব।
এদিকে সাহেদকে গ্রেফতারের সময় অস্ত্র উদ্ধার ও জাল টাকা জব্দের ঘটনায় করা পৃথক দুটি মামলার অনুসন্ধান করছে র্যাব। এ বিষয়ে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার সিনিয়র সহকারী পরিচালক (এএসপি) সুজয় সরকার যুগান্তরকে বলেন, সাহেদের অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহার নিয়ে র্যাব অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে কাজ করছে।
সাহেদকে র্যাব হেফাজতে নেয়ার প্রক্রিয়া শুরু : সাহেদের মামলা তদন্তের অনুমতি পাওয়ার পর তাকে হেফাজতে নেয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে র্যাব। এ বিষয়ে বুধবার বিকালে র্যাবের মুখপাত্র এবং আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লে. কর্নেল আশিক বিল্লাহ যুগান্তরকে বলেন, সাহেদকে র্যাব হেফাজতে আনার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
তবে এখনই তাকে আনা হচ্ছে না। নথি সংগ্রহ থেকে শুরু করে অন্যসব কাজ চলছে। সাহেদের বিষয়ে র্যাবের হটলাইনে আসা অভিযোগের ব্যাপারে তিনি বলেন, পাঁচ দিনে দেড় শতাধিক অভিযোগ এসেছে। নির্ধারিত সময় পার হলে পুরো হিসাব বলা সম্ভব হবে।
অর্থ জালিয়াতির ঘটনায় সাহেদের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা : এনআরবি ব্যাংকের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে রিজেন্টের সাহেদসহ চার জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুদক। দুদকের সহকারী পরিচালক মো. সিরাজুল হক মামলাটি করেন। মামলায় সাহেদ ছাড়াও প্রতিষ্ঠানের এমডি মো. ইব্রাহিম খলিল, এনআরবি ব্যাংকের সাবেক প্রিন্সিপাল অফিসার মো. সোহানুর রহমান ও ভাইস প্রেসিডেন্ট ওয়াহিদ বিন আহমেদকে আসামি করা হয়েছে। মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে- আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে প্রতারণার মাধ্যমে ক্ষমতার অপব্যবহার করে এনআরবি ব্যাংক থেকে ২০১৪ সালের ৯ নভেম্বর থেকে ২০১৮ সালের ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত এক কোটি ৫১ লাখ ৮১ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেছেন।
এদিকে বেসিক ব্যাংকের প্রায় ৯ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ব্যাংকটির গুলশান শাখার সাবেক ব্যবস্থাপকসহ তিন জনের বিরুদ্ধে আরেকটি মামলা করেছে দুদক। বুধবার মামলাটি করেন দুদকের সহকারী পরিচালক মাহবুবুল আলম। মামলার আসামিরা হলেন- বেসিক ব্যাংক গুলশান শাখার ম্যানেজার (বরখাস্ত) এস আসিফ আহমেদ, মেসার্স টাইটান অ্যাপারেলস্ লিমিটেডের এমডি মো. হাসিবুর রহমান ও পরিচালক আরশিয়া আতিক। মামলার অভিযোগে বলা হয়, আসামিরা বিশ্বাস ভঙ্গ ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে ২০০৮ সালের ৮ অক্টোবর থেকে ২০১২ সালের ৪ জানুয়ারি পর্যন্ত বেসিক ব্যাংকের আট কোটি ৯৬ লাখ ৭৭ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেছেন।
সাহেদ গ্রেফতারের পর ভুক্তভোগীদের ২০ মামলা ঢাকায় : রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাহেদ গ্রেফতার হওয়ার পর ভুক্তভোগীরা ঢাকার বিভিন্ন থানায় তার বিরুদ্ধে অন্তত ২০টি মামলা করেছেন। এসব মামলার বেশিরভাগই প্রতারণার মামলা বলে জানিয়েছে পুলিশ।
বুধবারের সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের অতিরিক্ত কমিশনার আবদুল বাতেন বলেন, গোয়েন্দা পুলিশই ভুক্তভোগীদের করা ২০টি মামলার তদারকি করবে। এর আগে প্রতারণার অভিযোগে সাহেদের বিরুদ্ধে অন্তত ৫৬টি মামলা করেছিলেন ভুক্তভোগীরা। দেশের বিভিন্ন জায়গায় হওয়া এসব মামলার তথ্য-প্রমাণ এখন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে আছে।
এদিকে সাহেদের বিষয়ে অভিযোগ জানাতে র্যাবের ৫ দিনের হটলাইন সেবা শেষ হয়েছে। বুধবার সন্ধ্যায় সেবাটি বন্ধ করা হয়। এ বিষয়ে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লে. কর্নেল আশিক বিল্লাহ যুগান্তরকে বলেন, দেড় শতাধিক অভিযোগ আমাদের কাছে জমা হয়েছে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত এমনকি দেশের বাইরে থেকেও অভিযোগ এসেছে। আমরা সেগুলো যাচাই-বাছাই করছি।
