যুগান্তরে সংবাদ প্রকাশ
প্রশিক্ষণের নামে বিদেশ সফর ঠেকানোর উদ্যোগ
হামিদ-উজ-জামান
প্রকাশ: ০৭ আগস্ট ২০২০, ০৬:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
উন্নয়ন প্রকল্পে পণ্যের অস্বাভাবিক মূল্য নির্ধারণ এবং প্রশিক্ষণের নামে বিদেশ ভ্রমণের প্রস্তাব ঠেকানোর উদ্যোগ নিয়েছে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়। এসব বিষয়সহ উন্নয়ন কার্যক্রমের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার জন্য সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিবকে ডাকা হয়েছে।
সম্প্রতি দৈনিক যুগান্তরে ‘একটি ড্রামের দাম ১০ হাজার টাকা’ শীর্ষক সংবাদ এবং করোনায়ও কর্মকর্তাদের বিদেশ সফরের আয়োজন নিয়ে একাধিক সংবাদ প্রকাশের পরিপ্রেক্ষিতে পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান এ উদ্যোগ নিয়েছেন।
আগামী ১৩ আগস্ট রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে পরিকল্পনামন্ত্রীর সভাপতিত্বে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। বৈঠকে গত অর্থবছরের সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (আরএডিপি) অগ্রগতি এবং চলতি অর্থবছরের এডিপির গুণগত বাস্তবায়নের কৌশল নিয়েও আলোচনা হবে। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
বিশ্বব্যাংক ঢাকা অফিসের চিফ ইকোনমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন বলেছেন, প্রকল্প তৈরির শুরুতে সচিব পর্যায়ে উদ্ভট প্রস্তাব দেয়ার প্রবণতা প্রতিরোধ করা প্রয়োজন। সচিবদের নিয়ে বৈঠকের পাশাপাশি মন্ত্রণালয় পর্যায়ে কঠোর মনিটরিংয়ের তাগিদ দিয়েছেন ড. জাহিদ।
বৈঠক প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান শুক্রবার যুগান্তরকে বলেন, সার্বিকভাবে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড নিয়ে আলোচনা হবে। তবে বিশেষভাবে ডিপিপিতে (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) বিভিন্ন পণ্যের অস্বাভাবিক মূল্য ধরা এবং প্রয়োজন না হলেও প্রশিক্ষণের নাম করে বিদেশ সফরের মতো অযাচিত ব্যয় নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি আলোচনা হবে। কেননা লক্ষ্য করা যাচ্ছে- বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে বাজারমূল্যের চেয়ে অস্বাভাবিক দাম ধরা হচ্ছে। সেই সঙ্গে রয়েছে বিদেশ সফরের প্রস্তাব। সম্প্রতি বিভিন্ন গণমাধ্যমে এসব নিয়ে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। ফলে ব্যাপক প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে। এমনকি সরকারপ্রধানের নজরেও এসেছে। তিনি নানা সময় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়াও ব্যক্ত করেছেন। এ পরিপ্রেক্ষিতে সচিবদের সঙ্গে বৈঠক করা হচ্ছে। আলোচনা করে ঠিক করা হবে কীভাবে এরকম প্রস্তাব বন্ধ করা যায়।
সূত্র জানায়, ৪ আগস্ট পরিকল্পনা কমিশনের কার্যক্রম বিভাগ থেকে মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিবদের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে। সেখানে তিনটি ইস্যু নির্ধারণ করা হয়েছে। এগুলো হল- ২০১৯-২০ অর্থবছরের আরএডিপি বাস্তবায়ন অগ্রগতি পর্যালোচনা, ২০২০-২১ অর্থবছরের এডিপির সুষ্ঠু ও গুণগত বাস্তবায়ন এবং ডিপিপির গুণমান (অস্বাভাবিক ব্যয় প্রস্তাব) বিষয়ক আলোচনা ও কেস স্টাডি।
এ বৈঠকে মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সিনিয়র সচিব, সচিব ও ভারপ্রাপ্ত সচিবদের ব্যক্তিগতভাবে উপস্থিত থাকতে অনুরোধ জানানো হয়েছে। বৈঠকে অংশ নেয়ার জন্য মন্ত্রিপরিষদ সচিব এবং প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবকেও আমন্ত্রণ জানিয়েছে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়।
সূত্র জানায়, সম্প্রতি দৈনিক যুগান্তরে ‘একটি ড্রামের দাম ১০ হাজার টাকা’ শীর্ষক সংবাদ প্রকাশিত হয়। এতে উল্লেখ করা হয়, ‘সমন্বিত ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে কৃষি যান্ত্রিকীকরণ’ প্রকল্পে চাল রাখা একটি প্লাস্টিকের ড্রামের দাম ১০ হাজার টাকা ধরা হয়েছে। এছাড়া একটি বঁটির দাম ১০ হাজার টাকা, একেকটি অ্যালুমিনিয়ামের বড় চামচ দুই হাজার টাকা, এক কেজি মসলা রাখার প্লাস্টিকের পাত্র দুই হাজার টাকা, খাবার প্লেট একেকটি এক হাজার টাকা এবং একেকটি চেয়ারের দাম ৫০ হাজার টাকা ধরা হয়েছে। এরকম বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাজারের বর্তমান দামের চেয়ে অনেক বেশি দাম ধরা হয়। ১৪ জুলাই ৩ হাজার ২০ কোটি টাকা ব্যয়ের প্রকল্পটি অনুমোদন দেয় জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। অনুমোদনের পর এ সংবাদ প্রকাশিত হলে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। বিষয়টি নজরে আসে সংশ্লিষ্টদেরও। তাৎক্ষণিক পরিকল্পনামন্ত্রীর অনুরোধে তদন্ত কমিটিও গঠন করে কৃষি মন্ত্রণালয়।
এছাড়া রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পে বালিশ কাণ্ড, ফরিদপুর মেডিকেল কলেজে ৩৭ লাখ টাকায় পর্দা ক্রয়, বিভিন্ন প্রকল্পে একজন ক্লিনারের মাসিক বেতন চার লাখ টাকা, একটি মাস্কের দাম ৮৫ হাজার টাকা, একটি স্যালাইন স্ট্যান্ডের দাম ৬০ হাজার টাকা, বিভিন্ন প্রকল্পে অডিও ভিডিও ও চলচ্চিত্র নির্মাণে কোটি কোটি টাকার ব্যয় প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল। এছাড়া পুকুর খনন ও পুনঃখনন প্রকল্পে প্রশিক্ষণের নামে বিদেশ সফর, কাজু বাদাম ও কফি চাষ, গরুর কৃত্রিম প্রজনন উন্নয়ন প্রকল্পসহ বিভিন্ন প্রকল্পে স্টাডি ট্যুর বা প্রশিক্ষণের নামে বিদেশ সফরের প্রস্তাব দেয়া হয়। এমনকি কোভিড-১৯ মহামারীকালে সরকার ব্যয় কমানোর নানা উদ্যোগ নিলেও এরকম প্রস্তাব দেয়া হয়। এ সব বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে সচিবদের সঙ্গে বৈঠক করা হচ্ছে বলে পরিকল্পনা কমিশনের একাধিক কর্মকতা যুগান্তরকে জানিয়েছেন।
এ প্রসঙ্গে বিশ্বব্যাংক ঢাকা অফিসের সাবেক লিড ইকোনমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন বলেন, সমস্যা সবারই জানা। এখন সমাধানের পথে যেতে হবে। এ ধরনের উদ্যোগ ভালো। তবে প্রকল্প প্রস্তাব তৈরির বিষয়টি নিয়মিত তদারকির জন্য একটি ম্যাকানিজম থাকতে হবে। এটি মন্ত্রী পর্যায়ে যাওয়ার আগেই সচিব পর্যায়েই পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হলে সবচেয়ে ভালো হবে। তাহলে পরিকল্পনা কমিশনে এসে প্রক্রিয়াকরণের সময় আবার ফাইল ফেরত দিতে গিয়ে সময়ক্ষেপণ হবে না।
