আকস্মিক বন্যার কবলে উত্তরের কয়েক জেলা
তীব্র নদীভাঙনে বিলীন ঘরবাড়ি আবাদি জমি
যুগান্তর ডেস্ক
প্রকাশ: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০৬:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
কয়েক দিনের টানা বর্ষণ এবং উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে উত্তরাঞ্চলের কয়েটি জেলায় আকস্মিক বন্যা দেখা দিয়েছে। এসব জেলার নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় তৎসংলগ্ন চরগুলো প্লাবিত হয়েছে। তলিয়ে গেছে অনেক গ্রাম ও ফসলের মাঠ। সেই সঙ্গে তীব্র ভাঙনে নদীতে বিলীন হচ্ছে জনপদ।
কুড়িগ্রাম জেলার সব নদীর পানিই বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রভাহিত হচ্ছে। গাইবান্ধার বিভিন্ন নদ-নদীতে বাড়তে শুরু করেছে পানি। সেই সঙ্গে শুরু হয়েছে ভাঙন। যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় জামালপুরের দেয়ানগঞ্জের নিম্ন এলকা প্লাবিত হয়েছে। শেরপুরের প্রায় ২০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এ নিয়ে চতুর্থ দফা বন্যার মুখে পড়ল জেলাগুলো। যুগান্তরের প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-
কুড়িগ্রাম : কুড়িগ্রামের সব ক’টি নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। ধরলা নদীর পানি কিছুটা কমলেও বিপদসীমার ৩১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ব্রহ্মপুত্র, দুধকুমার ও তিস্তার পানিও বাড়ছে। কুড়িগ্রাম সদর, রাজারহাট, ফুলবাড়ী ও উলিপুরসহ ৯টি উপজেলার শতাধিক চর প্লাবিত হয়েছে। এসব এলাকায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছে ৫০ হাজার মানুষ। বাঁধ, রাস্তা ও উঁচু স্থানে আশ্রয় নিয়েছে শত শত পরিবার। জেলা কৃষি বিভাগের উপ-পরিচালক ড. মোস্তাফিজার রহমান জানান, প্রায় চার হাজার হেক্টর আমন ক্ষেত পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। তলিয়ে গেছে গ্রামীণ সড়ক।
এদিকে নদ-নদীর ভাঙনে সদর উপজেলার সারডোব, মোঘলবাসা, পাঁচগাছি, যাত্রাপুর-উলিপুরের থেতরাই, গুণাইগাছসহ বিভিন্ন এলাকার বাড়িঘর ও আবাদি জমি বিলীন হয়ে গেছে। কয়েকটি এলাকায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ও বাজার ঝুঁকিতে পড়েছে। মঙ্গলবার মধ্যরাতে সারডোব বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ৫০ মিটার অংশ ভেঙে ১০টি গ্রামে পানি ঢুকেছে। এই এলাকার বেশির ভাগ আমন ক্ষেত ৩-৫ ফুট পানিরে নিচে। ধরলার ভাঙনে সদর উপজেলার নন্দদুলালের ভিটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি ইতিমধ্যে বিলীন হয়ে গেছে।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম জানান, বন্যা পরিস্থিতির ধীরে ধীরে উন্নতি হচ্ছে। তবে পানি কমার কারণে ভাঙন বেড়েছে। জেলার ৬৫টি পয়েন্টে ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। এসব এলাকায় জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা চলছে।
গাইবান্ধা : গাইবান্ধার বিভিন্ন নদ-নদীর পানি বাড়তে শুরু করেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানিয়েছে, শুক্রবার বিকেল ৫টায় জেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত ব্রহ্মপুত্র ও তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। ব্রহ্মপুত্রের পানি বিপদসীমার ১৭ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। চরাঞ্চলের নিচু এলাকাগুলোতে পানি উঠেছে। ডুবে গেছে অনেক জমির আমন আবাদসহ বিভিন্ন তরিতরকারির ক্ষেত। যেভাবে পানিবৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে তাতে ফের বন্যার আশঙ্কা করছে চরবাসী।
এদিকে তিস্তার ভাঙনে দিশেহারা হয়ে পড়েছে চরাঞ্চলের মানুষ। তিন সপ্তাহের ব্যবধানে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার হরিপুর ইউনিয়নের, কাশিম বাজার, চর চরিতাবাড়ি, মাদারিপাড়া, কাশিম বাজার, শ্রীপুর ইউনিয়নের উত্তর শ্রীপুর পুঁটিমারী, লালচামার গ্রামে হাজারও একর ফসলি জমি ও ছয় শতাধিক বসত বাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙনের মুখে পড়েছে হাজার হাজার একর ফসলি জমি ও বসতবাড়ি। ভাঙনকবলিত পরিবারগুলো মানবেতর জীবনযাপন করছে।
হরিপুর ইউপি চেয়ারম্যান নাফিউল ইসলাম জানান, যেভাবে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে তাতে ফের বন্যার আশঙ্কা রয়েছে। তিন সপ্তাহের ব্যবধানে তার ইউনিয়নে তিনশ’ বাড়িঘর নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। নদী ড্রেজিং এবং খনন করা ছাড়া ভাঙন রোধ করা সম্ভব নয়।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী পরিচালক মোখলেছুর রহমান বলেন, নদীভাঙন রোধে হরিপুর, কাপাসিয়া ও শ্রীপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে।
শেরপুর : জেলার নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে ঝিনাইগাতী সদর ইউনিয়ন, মালিঝিকান্দা, হাতিবান্ধা ও ধানশাইল ইউনিয়নের ২০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। স্রোতে ওইসব গ্রামের কাঁচা ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তলিয়ে গেছে বিস্তীর্ণ রোপা আমন ধানের ক্ষেত। ভেসে গেছে পুকুরের মাছ।
ঝিনাইগাতী উপজেলা সদরের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া মহারশি নদীর পানি হঠাৎ বৃদ্ধি পেয়ে বৃহস্পতিবার বিকেলে ঝিনাইগাতী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় চত্বরের ১২ থেকে ১৩টি দফতরে পানি প্রবেশ করে। এরপর শহরের প্রধান সড়ক, বাজারের বিভিন্ন দোকানপাট এবং বাসা-বাড়িতে পানি প্রবেশ করে। হঠাৎ করে ঢলের পানি নেমে আসায় অপ্রস্তুত সাধারণ মানুষ ভোগান্তিতে পড়ে।
দেওয়ানগঞ্জ (জামালপুর) : যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় বন্যার কবলে পড়েছে দেওয়ানগঞ্জের মানুষ। দীর্ঘ দেড় মাসের ধকল কাটতে না কাটতেই আবারও পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় আতঙ্কিত নদীর তীরবর্তী চরাঞ্চলের মানুষ। সদ্য রোপণ করা আমন চারা পানিতে তলিয়ে গেছে। কৃষি অফিস সূত্র জানায়, এভাবে ৪-৫ দিন পানি আটকা থাকলে ব্যাপক ক্ষতি হবে। পানি উন্নয়ন অফিস সূত্র জানায়, শুক্রবার ২৪ ঘণ্টায় বাহাদুরাবাদ ঘাটে যমুনা নদীতে ২৫ সেমি. পানি বৃদ্ধি পেয়েছে।
