সীমান্তে হত্যা বন্ধের প্রতিশ্রুতি বিএসএফের
যুগান্তর রিপোর্ট
প্রকাশ: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০৬:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
সীমান্তে হত্যাকাণ্ড শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ভারতের বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স (বিএসএফ)। ঢাকায় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদর দফতরে বিজিবি ও বিএসএফের মহাপরিচালক পর্যায়ের চারদিনের সম্মেলন শেষে শনিবার এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়। এতে বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. সাফিনুল ইসলাম এবং বিএসএফের মহাপরিচালক রাকেশ আস্থানা বক্তব্য দেন। সীমান্তে যৌথ টহলসহ ১৪ দফা সিদ্ধান্ত হয়েছে বিজিবি ও বিএসএফের মধ্যে।
সংবাদ সম্মেলনে বিএসএফ মহাপরিচালক রাকেশ আস্থানা বলেন, ইন্দো-বাংলা সীমান্তে হত্যাকাণ্ড শূন্যের কোঠায় নামানোর কৌশল নিয়ে আমরা কাজ করছি। এ বিষয়ে বিজিবির সঙ্গে প্রতিনিয়ত আনুষ্ঠানিক-অনানুষ্ঠানিক যোগাযোগ অব্যাহত রয়েছে। সীমান্তে ‘নন লিথেল’ (প্রাণঘাতী নয় এমন) অস্ত্র ব্যবহারে আমাদের স্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। একেবারে প্রাণ সংশয়ে না পড়লে প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার না করতে বলা হয়েছে। তিনি বলেন, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মাদক-পশু-অস্ত্র চোরাচালানসহ নানা ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের ক্ষেত্রে দুর্ভাগ্যবশত এ ধরনের ঘটনা ঘটছে। তবে সন্ত্রাসীদের গতিবিধি নজরদারি করতে দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মধ্যে গোয়েন্দা তথ্য বিনিময়ের সিদ্ধান্ত হয়েছে। নিরপরাধ, নিরস্ত্র ও মানব পাচারের শিকার ব্যক্তিদের হস্তান্তরের আশ্বাস দেন তিনি।
বারবার একই প্রতিশ্রুতি দেয়া ও সীমান্তে হত্যাকাণ্ড চালিয়ে যাওয়া নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে রাকেশ আস্থানা বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক খুবই ভালো। আমি কোনো হত্যাকাণ্ডকেই ন্যায্যতা দিচ্ছি না। আমি পুনরায় বলছি, আমরা এটাকে (সীমান্ত হত্যা) শূন্যে নামিয়ে আনতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমি সম্প্রতি যোগ দিয়েছি এবং আগামী দিনে আপনারা এ বিষয়ে অগ্রগতি দেখতে পাবেন। ভারতীয় সীমান্ত দিয়ে মাদক বাংলাদেশে ঢোকার কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, মাদক নিয়ন্ত্রণে তারা কাজ করছেন।
৫০তম বিজিবি-বিএসএফ মহাপরিচালক পর্যায়ের আলোচনায় বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল সাফিনুল ইসলামের নেতৃত্বে ১৩ সদস্যের বাংলাদেশের প্রতিনিধিদল এবং বিএসএফ মহাপরিচালক রাকেশ আস্থানার নেতৃত্বে ছয় সদস্যের ভারতীয় প্রতিনিধিদল অংশ নেয়। যৌথ রেকর্ড অব ডিসকাশনস (জেআরডি) স্বাক্ষর করে সম্মেলনের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়। মহাপরিচালক পর্যায়ের ৫১তম সম্মেলন এ বছরের নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে ভারতের গৌহাটিতে অনুষ্ঠিত হবে।
বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল সাফিনুল ইসলাম বলেন, সীমান্তে প্রাণহানি এড়াতে বিএসএফের মহাপরিচালক আশ্বাস দিয়েছেন। বাংলাদেশি নাগরিকদের অবৈধভাবে ভারতের ভূখণ্ডে যাওয়ায় বিজিবির ব্যর্থতা আছে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, বাংলাদেশের সীমানা চার হাজার ৪২৭ কিলোমিটার। এর মধ্যে অনেক নদী, জলাভূমি, পাহাড় ও সমভূমি রয়েছে। প্রতি পাঁচ কিলোমিটারে আমাদের সীমান্ত ফাঁড়ি রয়েছে। আমরা প্রযুক্তির সহায়তায় সীমান্ত রক্ষার চেষ্টা করছি। করোনাভাইরাসের কারণে বন্ধ থাকা সীমান্তে যৌথ টহল পুনরায় শুরু করতে উভয় বাহিনী সম্মত হয়েছে।
চারদিনের সম্মেলনে বাংলাদেশ ও ভারত ১৪ দফা সিদ্ধান্ত নিলেও যৌথ সংবাদ সম্মেলনজুড়ে সীমান্তে হত্যার প্রসঙ্গ ঘুরেফিরে আসে। একপর্যায়ে বিজিবির পক্ষ থেকে সীমান্তে হত্যার বাইরের ইস্যুতে প্রশ্ন করার পরামর্শ দেয়া হয়।
বিজিবির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, নানা বিষয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ১৪ দফা সিদ্ধান্ত হয়েছে। উল্লেখযোগ্য সিদ্ধান্তগুলোর মধ্যে রয়েছে- সীমান্তে হত্যা বা মারধরের ঘটনা শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনা, ঝুঁকিপূর্ণ সীমান্তবর্তী এলাকায় যৌথ টহল বাড়ানো, জনসচেতনতামূলক কর্মসূচি আরও বেগবান করা এবং প্রয়োজনীয় আর্থসামাজিক উন্নয়নমূলক কর্মসূচি গ্রহণ করা, সমন্বিত কার্যক্রম গ্রহণের পাশাপাশি সীমান্ত এলাকায় নাগরিকদের মধ্যে আন্তর্জাতিক সীমানা আইনের বিধিবিধান সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি করা। এছাড়া সীমান্তে অতিরিক্ত সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণে উভয়পক্ষ সম্মত হয়েছে।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, সমন্বিত সীমান্ত ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা (সিবিএমপি) বাস্তবায়নের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের আন্তঃসীমান্ত অপরাধ দমনের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। উভয়পক্ষ আন্তর্জাতিক সীমানার কাঁটাতারের বেড়া কেটে অপসারণ করা বা বেড়ার ক্ষয়ক্ষতি রোধে যৌথ প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে এবং নিয়মিত যৌথ টহল চালিয়ে যেতে সম্মত হয়েছে। উভয়পক্ষ সীমান্তে অস্ত্র, গোলাবারুদ, বিস্ফোরক দ্রব্য, মাদক, স্বর্ণ ও জালমুদ্রা পাচার প্রতিরোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণে সম্মত হয়েছে। সীমান্ত চোরাচালানি দ্রব্যসহ আটক ব্যক্তিদের সম্পর্কে তাৎক্ষণিক তথ্য এবং উভয় বাহিনীর প্রয়োজন অনুযায়ী প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের প্রতিবেদন বিনিময়ের বিষয়ে উভয়পক্ষ সম্মত হয়েছে।
