Logo
Logo
×

শেষ পাতা

সৈয়দপুর খাদ্যগুদামে নিম্নমানের চাল

ঘটনা আড়াল করতে গুদাম সিলগালা করা হয়নি

Icon

রংপুর ব্যুরো ও সৈয়দপুর প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০৬:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

ঘটনা আড়াল করতে গুদাম সিলগালা করা হয়নি

নীলফামারীর সৈয়দপুরে সরকারি খাদ্যগুদামে নিম্নমানের চাল মজুদ করার সময়ে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সহকারী কমিশনার (ভূমি) ট্রাকসহ চাল আটক করেন। ওই ঘটনা ঘটেছে ১৩ সেপ্টেম্বর। এ ঘটনায় ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে- ঘটনার পর খাদ্যগুদাম সিলগালা না করে ঘটনাটি আড়াল করতে একদিন পর তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। নীলফামারী জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক ১৪ সেপ্টেম্বর ওই কমিটি গঠন করেন।

নীলফামারী জেলার জলঢাকা উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক জগদীশ চন্দ্র দাসকে তদন্ত কমিটির প্রধান করা হয়েছে। অন্য দুই সদস্য হচ্ছেন কিশোরগঞ্জ উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মিজানুর রহমান ও নীলফামারী সদর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক আবদুল্লাহ আরেফিন।

জানা যায়, সৈয়দপুর সরকারি খাদ্যগুদামে চলতি মৌসুমে আড়াই হাজার টন চাল কিনে সংরক্ষণের কথা। কিন্তু এলএসডি ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি, এলএসডি) ফজলুল হক উপজেলার অন্য মিল মালিকদের পাশ কাটিয়ে একজন মিল মালিকের মাধ্যমে এক-তৃতীয়াংশ অর্থাৎ প্রায় ১ হাজার ৯০০ টন চাল ক্রয় করেন। আফজাল অটো রাইস মিল মালিকের কাছ থেকে এই চালের সিংহভাগ ইতোমধ্যে গুদামজাত করা হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে- সেখানে নিম্নমানের বিদেশি চাল সরবরাহ করা হচ্ছিল।

১৩ সেপ্টেম্বর ট্রাকের (নং-ঢাকা-মেট্রো-ট-১৬৫৪৪০) মাধ্যমে চাল গুদামজাত করার জন্য এলএসডিতে আনা হয়। ৩০ কেজি ওজনের প্রায় ৪৪৪ বস্তায় চার লাখ ৭৫ হাজার ২৮০ টাকা মূল্যমানের চাল সরবরাহ করে আফজাল অটো রাইস মিল কর্তৃপক্ষ। যা অত্যন্ত নিম্নমানের ছিল। লালচে রঙের এই চাল গোপনে গুদামজাত করা হচ্ছিল। দায়িত্বপ্রাপ্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ওই চাল যাচাই-বাছাই না করেই যোগসাজশের মাধ্যমে তড়িঘড়ি করে ট্রাকের ওই চাল গুদামজাত করছিলেন। গোপন সংবাদ পেয়ে সেখানে উপস্থিত হন সৈয়দপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) রমিজ আলম। তিনি বলেন, অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে।

খাদ্যগুদামের ৫০ টন চাল কম থাকায় গুদাম কর্মকর্তা ফজলুল হক গোপনে নিম্নমানের চাল ঢোকানোর চেষ্টা করছিলেন। আটক ট্রাকটির মালিক গুদাম কর্মকর্তা বলে একাধিক কর্মচারী দাবি করেন।

জানা যায়, ঘটনার দিন সৈয়দপুর খাদ্যগুদাম কর্মকর্তা বিদেশি পুরাতন নিম্নমানের চাল গুদামে মজুদ করছিলেন। কমিশনার (ভূমি)-সহ সব অফিসার উপস্থিত হলে খাদ্যগুদাম কর্মকর্তা ফজলুল হক চাল ফেরত দেন। সৈয়দপুর খাদ্যগুদামে ৫০ টন চাল ঘাটতি ছিল। ঘটনার দিন গুদাম সিলগালার নির্দেশ দিলেও পরবর্তী সময়ে বিভাগীয় আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক আবদুস সালাম অজ্ঞাত কারণে গুদাম সিলগালা করতে নিষেধ করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এ সুযোগে চালের ঘাটতি পূরণ ও সঠিক মানের চাল মজুদের সুযোগ দেয়া হয়। বিষয়টি নীলফামারী সদর ইউএনও ও জেলা প্রশাসক অবগত। গভীর রাতে কর্মকর্তা ফিরে আসেন। এই সুযোগে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রাতেই তার গুদামে ঘাটতি চাল পূরণ করেন। এমন তথ্য-প্রমাণ পাওয়া গেছে।

সরকারি গুদামে চাল ঘাটতির বিষয়ে বিভাগীয় খাদ্য কর্মকর্তা নিজেই প্রশ্রয় দেন। গুদাম কর্মকর্তা ফজলুল হকের বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ ছিল, যা খাদ্য বিভাগ অবগত। এ ব্যাপারে তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক জলঢাকা উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক জগদীশ চন্দ্র দাস বলেন, দুটি খামালে (সারি) চাল কম থাকার বিষয়ে গোডাউনের সঠিক হিসাব ও খালি বস্তার হিসাব রেজিস্টারমূলে তদন্ত করা হচ্ছে। তদন্ত শেষ না হলে কিছু বলা যাচ্ছে না। ৫০ টন চাল কম প্রসঙ্গে বলেন, বিষয়টি জানা নেই।

নীলফামারীর জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক নাজমুল হক ভূঁইয়া বলেন, চালের ঘাটতির বিষয়টি প্রতিবেদন না আসা পর্যন্ত বলা যাচ্ছে না। ঘটনার পর গুদাম সিলগালা না করা প্রসঙ্গে বলেন, যেহেতু সংগ্রহ অভিযান চলমান ছিল, সে কারণে তদন্ত প্রতিবেদন এলে বিষয়টি পরিষ্কার হবে। গুদাম কর্মকর্তা ট্রাকের মালিক কি না-এ প্রসঙ্গে বলেন, বিষয়টি জানা নেই।

 

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম