Logo
Logo
×

শেষ পাতা

যশোর শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানের স্বজনপ্রীতি

আইনি পরামর্শের নামে ভায়রাকে ২ লাখ টাকা

Icon

ইন্দ্রজিৎ রায়, যশোর

প্রকাশ: ২০ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০৬:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

আইনি পরামর্শের নামে ভায়রাকে ২ লাখ টাকা

ফাইল ছবি

যশোর শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মোল্লা আমীর হোসেনের বিরুদ্ধে স্বজনপ্রীতির অভিযোগ উঠেছে। নানা মামলায় আইনি পরামর্শ নেয়ার নামে ড. আমীর হোসেন নিজের ভায়রা ড. একেএম আখতারুল কবীরকে বোর্ডের পক্ষ থেকে সোয়া দুই লাখ টাকার বিল পরিশোধ করেছেন।

স্কুল-কলেজের মামলায় শিক্ষা বোর্ডের আইনজীবী নিয়োগের নিয়ম না থাকলেও ড. কবীরকে বোর্ডের পক্ষে আইনজীবী দেখিয়ে বিল পরিশোধ করা হয়। যদিও তাকে বোর্ডের আইন উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগও দেয়া হয়নি। চলতি বছরের মার্চ থেকে আগস্ট পর্যন্ত ছয় মাসে ৯টি বিলের অনুকূলে তাকে দুই লাখ ২৮ হাজার ৬২৫ টাকা পরিশোধ করা হয়েছে।

জানা গেছে, শিক্ষা বোর্ডের অধীনস্থ স্কুল-কলেজের বিরুদ্ধে করা মামলা ‘নিজ স্বার্থে ও অর্থে’ প্রতিষ্ঠানগুলোর পরিচালনা করার কথা। প্রতিষ্ঠানগুলোর নিয়োগ করা আইনজীবীরা জেলা ও উচ্চ আদালতে মামলা পরিচালনা করেন। এক্ষেত্রে শিক্ষা বোর্ডের আইনজীবী নিয়োগ করার নিয়ম নেই। কিন্তু চলতি বছরের জানুয়ারিতে অধ্যাপক ড. আমীর হোসেন শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেয়ার পর নিয়ম বদলে গেছে।

ড. কবীরকে আর্থিক সুবিধা দিতে আইনি পরামর্শের জন্য তার কাছে মামলা পাঠানো হয়েছে। তিনি নিয়মিত বিলও তুলেছেন। যশোর জজ কোর্টের আইনজীবী আজিজুর রহমান সাবু বলেন, ১০ বছর ধরে যশোর শিক্ষা বোর্ডের আইন উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছি। আমার চুক্তির মেয়াদ ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত। চুক্তি বাতিল করা হয়েছে কি না জানি না। এ সংক্রান্ত কোনো চিঠিও পাইনি। তিনি আরও বলেন, বোর্ডের আইন উপদেষ্টা হিসেবে প্রতি মাসে আট হাজার টাকা সম্মানী পাই।

চেয়ারম্যান ড. মোল্লা আমীর হোসেন বলেন, তৎকালীন চেয়ারম্যানের আমলে আইন উপদেষ্টা আজিজুর রহমান সাবুর চুক্তির মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়েছিল। তবে সর্বশেষ বোর্ড সভায় তার চুক্তি বাতিল করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ ছিল। বর্তমানে আইন উপদেষ্টা হিসেবে কাউকে নিয়োগ দেয়া হয়নি। পিপি (পাবলিক প্রসিকিউটর) এনে কাজ করা হচ্ছে।

ড. মোল্লা আমীর বলেন, ড. একেএম আখতারুল কবীর আমার ভায়রা। এটা কোনো অপরাধ নয়। আইনজীবী (আইন উপদেষ্টা) উচ্চ আদালতের মামলায় মতামত দিতে পারেন না।

তাই উচ্চ আদালতের মামলাগুলো ড. কবীরকে দেয়া হয়। ড. কবীর ২০১৫ সাল থেকে শিক্ষা বোর্ডের উচ্চ আদালতের মামলায় মতামত ও পরামর্শ দিয়ে আসছেন। তিনি অল্প টাকায় পরামর্শ দেন। এত কম টাকায় পরামর্শ আর কেউ দেন না।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে শিক্ষা বোর্ডের একাধিক কর্মকর্তা জানান, ২০১৫ সালে আমীর হোসেন বোর্ডের সচিব থাকাকালে একটি মামলায় আইন উপদেষ্টা আজিজুর রহমান সাবুর কাছে মতামত চেয়েছিলেন। সাবু পরামর্শ না দেয়ায় ওই সময় ড. কবীরের কাছে পরামর্শ নেন আমীর হোসেন। হয়তো সেটিই তিনি এখন উদাহরণ হিসেবে নিচ্ছেন। তারা আরও বলেন, স্কুল-কলেজ সংক্রান্ত মামলায় উচ্চ আদালতের আইনজীবীর জন্য বোর্ডের এমন অর্থ ব্যয়ের নজির নেই।

যশোর শিক্ষা বোর্ডের সচিব এএমএইচ আলী আর রেজা বলেন, আজিজুর রহমান সাবুর চুক্তির মেয়াদ বাড়ানোর সম্মতি দিয়েছিলেন তৎকালীন চেয়ারম্যান। কিন্তু সেটি বোর্ড সভায় ওঠেনি। কিন্তু তার কাজ চলমান ছিল। বর্তমান চেয়ারম্যান দায়িত্ব নেয়ার পর বোর্ড সভায় তার চুক্তি বাতিল করা হয়েছে। তবে নতুন কাউকে আইন উপদেষ্টা নিয়োগ দেয়া হয়নি।

১৯ মার্চ যশোর শিক্ষা বোর্ডের বিদ্যালয় পরিদর্শক স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে মেহেরপুরের কবি নজরুল শিক্ষা মঞ্জিলের প্রধান শিক্ষককে জানানো হয়, ‘হাইকোর্টে ম্যানেজিং কমিটি গঠন নিয়ে রিট পিটিশন হয়েছে। বিদ্যালয়ের স্বার্থে ও অর্থে মামলাটি পরিচালনার জন্য আপনাকে অনুরোধ করা হল।’

অপরদিকে মামলাটি পরিচালনা ও আইনগত মতামত নেয়ার জন্য হাইকোর্টের আইনজীবী ড. কবীরকে নিয়োগ দেয় বোর্ড কর্তৃপক্ষ। মামলা পরিচালনা ও আইনি মতামত দেয়া বাবদ ড. কবীরকে ভ্যাট ও আয়কর বাদে ৩০ হাজার টাকা পরিশোধ করেছে বোর্ড।

শুধু কাজী নজরুল মঞ্জিল নয়, যশোর সদর উপজেলার তীরেরহাট শহীদ স্মৃতি মেমোরিয়াল মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার ধুবইল মাধ্যমিক বিদ্যালয়, বাগেরহাটের রামপালের গিলাতলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়, চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলার রায়পুর বহুমুখী মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও ঝিকরগাছা উপজেলার কায়েমকোলা কলেজের ম্যানেজিং কমিটি সংক্রান্ত মামলায় আইনি পরামর্শ বাবদ ৯টি বিলের অনুকূলে ভ্যাট ও আয়করসহ দুই লাখ ২৮ হাজার ৬২৫ টাকা খরচ হয়েছে।

মেহেরপুরের কবি নজরুল শিক্ষা মঞ্জিলের প্রধান শিক্ষক সানজিদা ইসলাম বলেন, ‘২০১৯ সালে ম্যানেজিং কমিটি নিয়ে সাবেক সভাপতি মারুফ-উদ-দোহা মামলা করেছিলেন। আমি যতদূর জানি সেটি নিষ্পত্তি হয়ে গেছে।

কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার ধুবইল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবদুল কাদের বলেন, সাবেক সভাপতি মাহাবুবুর রহমানের করা মামলাটি কুষ্টিয়া সহকারী জেলা জজ আদালতে বিচারাধীন। আমরা স্থানীয় আইনজীবী নিয়োগ করেছি। বোর্ডের আইনজীবীর বিষয়টি আমার জানা নেই।

যশোর

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম