ছয় মাস সুযোগ চান শিল্পোদ্যোক্তারা
বিলম্ব মূল্য পরিশোধ সংক্রান্ত বিটিএমএ’র চিঠি
হামিদ বিশ্বাস
৩০ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০০:০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
করোনার ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে শিল্পের কাঁচামাল আমদানির বিলম্ব মূল্য পরিশোধে আরও ছয় মাস সুযোগ চায় বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএমএ)।
এ ব্যাপারে সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংককে চিঠি দিয়েছে সংগঠনটি। ব্যাংকিং পরিভাষায় একে ইউজেন্স বিল অব ইমপোর্ট পেমেন্ট বা ডেফার্ড এলসি অথবা ঋণপত্রের দায় পরিশোধ বলা হয়।
বর্তমানে এ সুযোগ ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেয়া আছে। যা আজই শেষ হল। অর্থাৎ ২০২১ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত বকেয়া দায় পরিশোধের সময় চাইছেন শিল্পোদ্যোক্তারা। তাদের মতে, করোনায় সুতা উৎপাদন, বস্ত্র তৈরি এবং কাপড় প্রক্রিয়াজাতকরণ ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সে কারণে এ সুবিধা প্রদান খুব জরুরি হয়ে পড়েছে।
২৭ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আহমেদ জামালের কাছে পাঠানো এক চিঠিতে বাকিতে আমদানি মূল্য পরিশোধের সময়সীমা বাড়ানোর এই অনুরোধ জানায় বিটিএমএ। চিঠিতে স্বাক্ষর করেন বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ আলী খোকন।
এতে তিনি বলেন, ‘কোভিড-১৯ এর প্রাদুর্ভাব মোকাবেলায় শিল্প প্রতিষ্ঠানের কাঁচামাল আমদানির মূল্য পরিশোধের লক্ষ্যে ইউজেন্স বিল অব ইমপোর্ট পেমেন্টের মেয়াদ আরও ছয় মাস বৃদ্ধির অনুরোধ জানাচ্ছি। বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রা বিভাগ থেকে চলতি বছরের ২৩ মার্চ জারি করা সার্কুলারে উল্লেখ করা হয়, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব এবং শিল্প-কারখানায় ক্ষতির প্রভাব মোকাবেলায় শিল্প প্রতিষ্ঠানে ব্যবহারের জন্য কাঁচামাল আমদানির প্রয়োজনে ইউজেন্স বিল অব ইমপোর্ট পেমেন্টের মেয়াদ ১৮০ দিনের পরিবর্তে ৩৬০ দিন নির্ধারণ করা হল। যা চলতি বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বহাল থাকবে।
কোভিড-১৯জনিত পরিস্থিতি বিবেচনায় ও বাস্তবতার আলোকে সার্কুলারটি অত্যন্ত ইতিবাচক ছিল। কিন্তু করোনার প্রভাবে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশের শিল্প-কারখানা বিশেষত টেক্সটাইল মিলের পরিচালনাসহ আমদানি-রফতানি বাণিজ্য ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
রফতানি আদেশ না থাকা ও সরকারি আদেশে টেক্সটাইল মিলগুলো দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পরে সরকারের আদেশে ক্রমান্বয়ে কারখানাগুলো চালু হলেও সম্পূর্ণ উৎপাদনের ক্ষমতা ব্যবহার করতে না পারায় এখনও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।’
ওই চিঠিতে বিটিএমএ’র প্রেসিডেন্ট আরও বলেন, ‘বৈশ্বিক মহামারী ও দেশের শিল্প খাতের প্রকৃত অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে বিটিএমএ’র পক্ষ থেকে শিল্প উদ্যোক্তাদের কাঁচামাল আমদানির মূল্য পরিশোধের সুবিধার্থে ওই সার্কুলারটির মেয়াদ আগামী বছরের (২০২১) ৩১ মার্চ পর্যন্ত বাড়ানোর অনুরোধ জানাচ্ছি।’
বিটিএমএ সূত্র জানায়, করোনায় টেক্সটাইল সেক্টরে ১.৫ বিলিয়ন ডলারের রফতানি আদেশ বাতিল হয়েছে। এছাড়া দেশীয় বাজারের অন্যতম মৌসুম পহেলা বৈশাখ, ঈদুল ফিতর, ঈদুল আজহা ও জাকাতের বাজার ধরতে না পারায় প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকার লোকসান হয়েছে। করোনায় ইউজেন্স বিল অব ইমপোর্ট পেমেন্ট বকেয়া রয়েছে প্রায় ১৯০ কোটি ডলার।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ আলী খোকন যুগান্তরকে বলেন, করোনায় টেক্সটাইল খাত ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রায় দেড় বিলিয়ন ডলারের রফতানি আদেশ বাতিল হয়েছে। উৎপাদন বন্ধ ও ব্যাহত হওয়ায় দেশীয় বাজারে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকার লোকসান গুনতে হয়েছে।
এছাড়া করোনাভাইরাসের কারণে ইউজেন্স বিল অব ইমপোর্ট পেমেন্ট বকেয়া রয়েছে কমবেশি ১৯০ কোটি ডলার। এই বকেয়া বিল পরিশোধে ছয় মাস সময় চেয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকে একটি চিঠি দিয়েছি। আশা করি বৈশ্বিক মহামারী ও দেশের শিল্প খাতের প্রকৃত ক্ষতি বিবেচনায় আগামী বছরের ৩১ মার্চ পর্যন্ত ডেফার্ড এলসির দায় পরিশোধের সময় দেবে বাংলাদেশ ব্যাংক।
প্রসঙ্গত, দেশে প্রাইমারি টেক্সটাইল সেক্টরে প্রায় ১০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছেন শিল্পোদ্যোক্তারা। যা দেশীয় মুদ্রায় প্রায় ১ লাখ কোটি টাকা। তৈরি পোশাক খাতে প্রয়োজনীয় কাঁচামাল বিশেষ করে সুতা ও কাপড়ের সিংহভাগ সরবরাহ করাসহ দেশের ১৭ কোটি মানুষের বস্ত্র বা কাপড়ের শতভাগ চাহিদা পূরণ করে বিটিএমএ তালিকাভুক্ত সব শিল্পপ্রতিষ্ঠান।
সম্পাদক : সাইফুল আলম, প্রকাশক : সালমা ইসলাম
প্রকাশক কর্তৃক ক-২৪৪ প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড), বারিধারা, ঢাকা-১২২৯ থেকে প্রকাশিত এবং যমুনা প্রিন্টিং এন্ড পাবলিশিং লিঃ থেকে মুদ্রিত।
পিএবিএক্স : ৯৮২৪০৫৪-৬১, রিপোর্টিং : ৯৮২৪০৭৩, বিজ্ঞাপন : ৯৮২৪০৬২, ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৩, সার্কুলেশন : ৯৮২৪০৭২। ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৬
E-mail: jug[email protected]
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
বিলম্ব মূল্য পরিশোধ সংক্রান্ত বিটিএমএ’র চিঠি
ছয় মাস সুযোগ চান শিল্পোদ্যোক্তারা
করোনার ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে শিল্পের কাঁচামাল আমদানির বিলম্ব মূল্য পরিশোধে আরও ছয় মাস সুযোগ চায় বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএমএ)।
এ ব্যাপারে সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংককে চিঠি দিয়েছে সংগঠনটি। ব্যাংকিং পরিভাষায় একে ইউজেন্স বিল অব ইমপোর্ট পেমেন্ট বা ডেফার্ড এলসি অথবা ঋণপত্রের দায় পরিশোধ বলা হয়।
বর্তমানে এ সুযোগ ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেয়া আছে। যা আজই শেষ হল। অর্থাৎ ২০২১ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত বকেয়া দায় পরিশোধের সময় চাইছেন শিল্পোদ্যোক্তারা। তাদের মতে, করোনায় সুতা উৎপাদন, বস্ত্র তৈরি এবং কাপড় প্রক্রিয়াজাতকরণ ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সে কারণে এ সুবিধা প্রদান খুব জরুরি হয়ে পড়েছে।
২৭ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আহমেদ জামালের কাছে পাঠানো এক চিঠিতে বাকিতে আমদানি মূল্য পরিশোধের সময়সীমা বাড়ানোর এই অনুরোধ জানায় বিটিএমএ। চিঠিতে স্বাক্ষর করেন বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ আলী খোকন।
এতে তিনি বলেন, ‘কোভিড-১৯ এর প্রাদুর্ভাব মোকাবেলায় শিল্প প্রতিষ্ঠানের কাঁচামাল আমদানির মূল্য পরিশোধের লক্ষ্যে ইউজেন্স বিল অব ইমপোর্ট পেমেন্টের মেয়াদ আরও ছয় মাস বৃদ্ধির অনুরোধ জানাচ্ছি। বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রা বিভাগ থেকে চলতি বছরের ২৩ মার্চ জারি করা সার্কুলারে উল্লেখ করা হয়, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব এবং শিল্প-কারখানায় ক্ষতির প্রভাব মোকাবেলায় শিল্প প্রতিষ্ঠানে ব্যবহারের জন্য কাঁচামাল আমদানির প্রয়োজনে ইউজেন্স বিল অব ইমপোর্ট পেমেন্টের মেয়াদ ১৮০ দিনের পরিবর্তে ৩৬০ দিন নির্ধারণ করা হল। যা চলতি বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বহাল থাকবে।
কোভিড-১৯জনিত পরিস্থিতি বিবেচনায় ও বাস্তবতার আলোকে সার্কুলারটি অত্যন্ত ইতিবাচক ছিল। কিন্তু করোনার প্রভাবে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশের শিল্প-কারখানা বিশেষত টেক্সটাইল মিলের পরিচালনাসহ আমদানি-রফতানি বাণিজ্য ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
রফতানি আদেশ না থাকা ও সরকারি আদেশে টেক্সটাইল মিলগুলো দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পরে সরকারের আদেশে ক্রমান্বয়ে কারখানাগুলো চালু হলেও সম্পূর্ণ উৎপাদনের ক্ষমতা ব্যবহার করতে না পারায় এখনও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।’
ওই চিঠিতে বিটিএমএ’র প্রেসিডেন্ট আরও বলেন, ‘বৈশ্বিক মহামারী ও দেশের শিল্প খাতের প্রকৃত অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে বিটিএমএ’র পক্ষ থেকে শিল্প উদ্যোক্তাদের কাঁচামাল আমদানির মূল্য পরিশোধের সুবিধার্থে ওই সার্কুলারটির মেয়াদ আগামী বছরের (২০২১) ৩১ মার্চ পর্যন্ত বাড়ানোর অনুরোধ জানাচ্ছি।’
বিটিএমএ সূত্র জানায়, করোনায় টেক্সটাইল সেক্টরে ১.৫ বিলিয়ন ডলারের রফতানি আদেশ বাতিল হয়েছে। এছাড়া দেশীয় বাজারের অন্যতম মৌসুম পহেলা বৈশাখ, ঈদুল ফিতর, ঈদুল আজহা ও জাকাতের বাজার ধরতে না পারায় প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকার লোকসান হয়েছে। করোনায় ইউজেন্স বিল অব ইমপোর্ট পেমেন্ট বকেয়া রয়েছে প্রায় ১৯০ কোটি ডলার।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ আলী খোকন যুগান্তরকে বলেন, করোনায় টেক্সটাইল খাত ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রায় দেড় বিলিয়ন ডলারের রফতানি আদেশ বাতিল হয়েছে। উৎপাদন বন্ধ ও ব্যাহত হওয়ায় দেশীয় বাজারে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকার লোকসান গুনতে হয়েছে।
এছাড়া করোনাভাইরাসের কারণে ইউজেন্স বিল অব ইমপোর্ট পেমেন্ট বকেয়া রয়েছে কমবেশি ১৯০ কোটি ডলার। এই বকেয়া বিল পরিশোধে ছয় মাস সময় চেয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকে একটি চিঠি দিয়েছি। আশা করি বৈশ্বিক মহামারী ও দেশের শিল্প খাতের প্রকৃত ক্ষতি বিবেচনায় আগামী বছরের ৩১ মার্চ পর্যন্ত ডেফার্ড এলসির দায় পরিশোধের সময় দেবে বাংলাদেশ ব্যাংক।
প্রসঙ্গত, দেশে প্রাইমারি টেক্সটাইল সেক্টরে প্রায় ১০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছেন শিল্পোদ্যোক্তারা। যা দেশীয় মুদ্রায় প্রায় ১ লাখ কোটি টাকা। তৈরি পোশাক খাতে প্রয়োজনীয় কাঁচামাল বিশেষ করে সুতা ও কাপড়ের সিংহভাগ সরবরাহ করাসহ দেশের ১৭ কোটি মানুষের বস্ত্র বা কাপড়ের শতভাগ চাহিদা পূরণ করে বিটিএমএ তালিকাভুক্ত সব শিল্পপ্রতিষ্ঠান।