Logo
Logo
×

শেষ পাতা

ভারতীয় পেঁয়াজের মজুদ শেষ খাতুনগঞ্জে

চট্টগ্রাম বন্দরের দিকে তাকিয়ে আড়তদাররা

Icon

মজুমদার নাজিম উদ্দিন, চট্টগ্রাম

প্রকাশ: ০৫ অক্টোবর ২০২০, ০৬:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

চট্টগ্রাম বন্দরের দিকে তাকিয়ে আড়তদাররা

ভারতীয় পেঁয়াজের মজুদ শেষ হয়ে যাওয়ায় চট্টগ্রামের ভোগ্যপণ্যের বৃহত্তম পাইকারি বাজার চাকতাই-খাতুনগঞ্জের আড়তদাররা তাকিয়ে আছেন চট্টগ্রাম বন্দরের দিকে। সমুদ্রপথে ভারতের বিকল্প দেশ থেকে আসা পেঁয়াজই এখন এই বাজারের আড়তদারদের প্রধান ভরসা। তবে চাহিদা অনুযায়ী পেঁয়াজ চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে এখনো আসছে না বলে জানিয়েছেন এখানকার ব্যবসায়ীরা। তাই আড়তগুলোতে পণ্যটির মজুদ স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে কম।

পেঁয়াজের একটি চালান এলেই হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন আড়তদাররা। কে কার আগে কিনে নিতে পারেন, চলছে সেই প্রতিযোগিতা। রোববার রাতে এই বাজারে ঢুকেছে চট্টগ্রাম বন্দর হয়ে মিয়ানমার থেকে আসা ১১২ টনের একটি চালান। সকালে কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই এসব পেঁয়াজ বিক্রি হয়ে যায়। ব্যবসায়ীরা জানান, এখনও শুধু মিয়ানমারের কয়েকটি চালানই বাজারে এসেছে। অন্য কোনো দেশের পেঁয়াজ আসেনি।

মিয়ানমারের পেঁয়াজের সঙ্গে এই বাজারে এসেছে কিছু দেশি পেঁয়াজ। এই দুই ধরনের পেঁয়াজ দিয়েই মূলত ক্রেতাদের চাহিদা মেটাতে হচ্ছে। এদিকে আমদানীকৃত ও দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে চড়া দামে। মিয়ানমারের পেঁয়াজ পাইকারিতে ৭৫-৭৬ টাকা এবং দেশি ৮০-৮২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। খুচরা পর্যায়ে বিক্রি হচ্ছে যথাক্রমে ৮০ ও ৯০ টাকায়।

খাতুনগঞ্জের পেঁয়াজের সবচেয়ে বড় মার্কেট হিসেবে পরিচিত হামিদ উল্যাহ মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. ইদ্রিস সোমবার যুগান্তরকে বলেন, আমদানি বন্ধ থাকায় ভারতীয় পেঁয়াজের মজুদ শেষ হয়ে গেছে। বাজারে এখন আর ভারতীয় পেঁয়াজ নেই। তাই এখন অন্য দেশের পেঁয়াজের ওপরই নির্ভর করতে হচ্ছে। আগে এই বাজারে দেশি পেঁয়াজ আসত না। এখন কিছু দেশি পেঁয়াজও আসছে। তিনি জানান, ভারতীয় পেঁয়াজ আসা বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত খাতুনগঞ্জে মিয়ানমারের কয়েকটি চালান এসেছে।

যা চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আমদানি করা। অন্য কোনো দেশের পেঁয়াজ এ বাজারে আসেনি। সর্বশেষ রোববার রাতে মিয়ানমারের ১১২ টন ঢুকেছে। যা সোমবার সকালে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে শেষ হয়ে যায়। পেঁয়াজ নিয়ে অনেকটা হুড়োহুড়ি শুরু হয়ে গেছে। মিয়ানমারের চালান শেষ হয়ে যাওয়ায় এখন নতুন চালান কখন ঢুকবে- সেই অপেক্ষায়ই আছেন আড়তদাররা। এদিকে চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আমদানির জন্য ব্যবসায়ীরা একের পর এক অনুমতিপত্র (আইপি) নিলেও সে তুলনায় আমদানি হচ্ছে খুবই কম।

১২টি দেশ থেকে আমদানির অনুমতিপত্র নেয়া হলেও এখনও শুধু নিকট প্রতিবেশী মিয়ানমার ও পাকিস্তান থেকেই পেঁয়াজ এসেছে বলে চট্টগ্রাম বন্দরের উদ্ভিদ সঙ্গনিরোধ কেন্দ্র (কোয়ারেন্টাইন) সূত্র জানিয়েছে।

কেন্দ্রের উপ-পরিচালক মো. আসাদুজ্জামান বুলবুল সোমবার যুগান্তরকে বলেন, গত ৩ সেপ্টেম্বর থেকে ৪ অক্টোবর পর্যন্ত ৩৫০টি আইপির বিপরীতে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে এক লাখ ৬১ হাজার ২৫৭ মেট্রিক টন পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি নিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। তিনি জানান, এসব পেঁয়াজ আসা শুরু হয়েছে। গত ২৮ সেপ্টেম্বর থেকে ৪ অক্টোবর পর্যন্ত এক সপ্তাহে মিয়ানমার ও পাকিস্তান থেকে চট্টগ্রাম বন্দরে ১২টি চালানে আসা ৭৮৬ টন পেঁয়াজ খালাসের ছাড়পত্র দেয়া হয়েছে।

এর মধ্যে মিয়ানমারের ছয়টি চালানে ৫২৫ টন ও পাকিস্তানের ছয় চালানে ২৬১ টন পেঁয়াজ ছিল। কাছের দেশগুলো থেকে কম সময়ে পেঁয়াজ দেশে পৌঁছে যাচ্ছে। দূরের দেশগুলো থেকে আসতে সময় লাগছে।

এ মাসের মাঝামাঝি থেকে অন্যান্য দেশের পেঁয়াজ এসে পৌঁছতে পারে বলে মনে করছেন আমদানিকারকরা। বেশি পরিমাণে পেঁয়াজ এলে দাম কমে গিয়ে বাজার একটা স্থিতিশীল পর্যায়ে চলে আসবে বলেও মনে করছেন তারা।

খাতুনগঞ্জের ভোগ্যপণ্যের অন্যতম আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান বিএসএম গ্রুপের কর্ণধার আবুল বশর চৌধুরী যুগান্তরকে বলেন, বেশির ভাগ পেঁয়াজই মিসর ও নেদারল্যান্ডস থেকে আনার জন্য এলসি খোলা হয়েছে। শিপমেন্টের একটা ব্যাপার আছে। এছাড়া ট্রান্সমিপমেন্ট বন্দরে কিছু সময় ব্যয় হয়। সব মিলিয়ে ১৫ অক্টোবর থেকে দূরের দেশগুলোর পেঁয়াজ আসা শুরু হয়ে যাবে।

তিনি জানান, আমদানিকারকরা যে যেখানে পেঁয়াজ পেয়েছেন, এলসি খুলেছেন। কেউ প্রতি টন ৪৩০ ডলার, কেউ ৫০০ ডলার, কেউ ৫৪০ ডলার বা এর চেয়ে বেশি দামেও বুকিং দিয়েছেন। এই হিসেবে প্রতি কেজি পেঁয়াজের আমদানি খরচ ৪৩ থেকে ৫০ টাকার মধ্যে থাকার কথা। তবে দামটা নির্ভর করবে আনার পথে কী পরিমাণ পেঁয়াজ নষ্ট হচ্ছে, তার ওপর।

কারণ পেঁয়াজ পচনশীল পণ্য। কোনো কোনো দেশ থেকে সমুদ্রপথে আনতে ১৫-২০ দিন পর্যন্ত সময় লাগে। এ সময়ে কিছু পেঁয়াজ নষ্ট হয়। বেশির ভাগ পেঁয়াজ অক্টোবরের শেষ দিকে এসে যাবে। তখন বাজার স্থিতিশীল হবে। বর্তমান অস্থিরতা আর থাকবে না।

পেঁয়াজ আমাদনি ভারত

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম