কৃষিপণ্য বাজারজাতকরণ
মধ্যস্বত্বভোগীর দৌরাত্ম্যে বঞ্চিত কৃষক ভোক্তা
সবজির দাম আকাশচুম্বী * কৃষক থেকে খুচরা বাজার পর্যন্ত চার-পাঁচ হাত বদল
ইয়াসিন রহমান, ঢাকা ও তানজিমুল হক, রাজশাহী
প্রকাশ: ০৫ অক্টোবর ২০২০, ০৬:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
কৃষিপণ্য বাজারজাতকরণে মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য কমছে না। তৃণমূল থেকে শহর পর্যন্ত এ চক্রের থাবা প্রসারিত। এর সদস্যরাই কৃষকের কাছ থেকে কম দামে সবজি কিনে ভোক্তার কাছে বেশি দামে বিক্রি করছে। মাঝে চার থেকে পাঁচ হাত বদল করছে।
এতেই বাড়ছে দাম। বাড়তি দাম চলে যাচ্ছে এই মধ্যস্বত্বভোগীদের কাছে। ফলে বঞ্চিত হচ্ছেন কৃষক ও ভোক্তা। সরকারি জরিপেই হাতবদলের তথ্য উঠে এসেছে।
দেশের বিভিন্ন জেলায় কৃষক প্রতি কেজি বেগুন ৪০-৪৫ টাকায় বিক্রি করলেও ঢাকার খুচরা বাজারে কিনতে হচ্ছে ৯০ থেকে ১১০ টাকায়। একইভাবে ৬৫ টাকা কেজির শিম ঢাকায় বিক্রি হচ্ছে সর্বোচ্চ ১৪০ টাকা। ৩০-৪৫ টাকা কেজি টমেটো ভোক্তা কিনছেন ১২০-১৪০ টাকায়।
গাজর ৮০-১০০ টাকা, প্রতি পিস লাউ বিক্রি হচ্ছে ৭০-৮০ টাকা। কাঁচা পেঁপের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০-৬০ টাকা। কাঁচা মরিচ বিক্রি হয়েছে ২০০-২১০ টাকা কেজি। রোববার তৃণমূল পর্যায়ে এবং রাজধানীর কারওয়ান বাজার, শান্তিনগর কাঁচাবাজার, মালিবাগ বাজারসহ বেশ কয়েকটি খুচরা বাজার ঘুরে ও বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এ দাম জানা গেছে।
এ দিন রাজশাহীর বাগমারা মহনপুর এলাকার কৃষক প্রতি কেজি শিম বিক্রি করেছেন ৬৫ টাকায়। প্রতি কেজি বেগুন ৪০-৪৫ টাকা, টমেটোর কেজি ৩৫-৪০ টাকা, গাজর বিক্রি হয়েছে ৫০-৫৫ টাকা কেজি, প্রতি পিস লাউ বিক্রি করেন ৩০-৩৫ টাকা। পেঁপে বিক্রি ২০ টাকা ও কাঁচা মরিচ ১১০-১২০ টাকায় বিক্রি করেছেন কৃষক।
দাম পর্যালোচনায় দেখো গেছে, কৃষক থেকে ঢাকার ভোক্তা পর্যন্ত প্রতি কেজি শিমে দামের ব্যবধান ৭৫ টাকা। প্রতি কেজি বেগুনে ৬৫ টাকা, টমেটো ৯৫-১০০ টাকা, গাজর ৪৫ টাকা, প্রতি পিস লাউ ৪৫ টাকা ব্যবধানে বিক্রি হয়েছে। পেঁপে ৪০ টাকা এবং কাঁচা মরিচে ব্যবধান ছিল ৯০ টাকা।
রাজশাহীর সবজির সবচেয়ে বড় মোকাম মোহনপুর উপজেলার মৌগাছি হাটে শিম বিক্রি করতে আসেন সন্তোষপুর গ্রামের চাষী আবদুল মতিন। তিনি যুগান্তরকে বলেন, আমি এবার দুই বিঘা জমিতে শিম চাষ করেছি। এক সপ্তাহ আগে থেকে শিম তুলছি। কিন্তু দাম ভালো পাচ্ছি না। ফড়িয়া ও আড়তদাররা সবজির কম দাম দিচ্ছেন। কিন্তু রাজধানীসহ বিভিন্ন অঞ্চলের ভোক্তাদের কিনতে হচ্ছে দুই থেকে তিন গুণ বেশি দামে।
ঢাকার কারওয়ান বাজারের আড়তদার জামিল শিকদার বলেন, দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে সবজি এনে পাইকারি দামে বিক্রি করি। কিন্তু সরাসরি কৃষক থেকে পণ্য আনা সম্ভব হয় না। বিভিন্ন জেলার মহাজনদের কাছ থেকে সবজি আনতে হয়। তারা কৃষকের কাছ থেকে কম দামে সবজি কিনে আমাদের কাছে বেশি দামে বিক্রি করে। এছাড়া রাস্তায় বিভিন্ন মালিক শ্রমিক সমিতির লোকজনকে টোকেন মানি (চাঁদাবজি) দিতে হয়। সব খরচ সবজি থেকে তুলতে হয়।
ঢাকার শান্তিনগর বাজারে নিত্যপণ্য কিনতে আসা মো. আকবর হোসেন যুগান্তরকে বলেন, বাজারে সব ধরনের সবজির দাম অনেক বেশি। তবে পর্যাপ্ত সরবরাহ আছে। বিক্রেতারা যে যার মতো দাম হাঁকিয়ে বিক্রি করছে। দেখার যেন কেউ নেই। বন্যার অজুহাতেও অনেকেই দাম বাড়িয়েছে।
জানতে চাইলে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান যুগান্তরকে বলেন, ফড়িয়াদের কারণে অনেক সময় কৃষককে উৎপাদন খরচের চেয়ে কম দামে ফসল বিক্রি করতে হয়।
কিন্তু ভোক্তাদের কিনতে হচ্ছে উচ্চমূল্যে। এতে কৃষক ও ভোক্তা প্রতারিত হচ্ছেন। লাভবান হয় শুধু মধ্যস্বত্বভোগীরা। তাই এ দৌরাত্ম্য যেভাবেই হোক সরকার সংশ্লিষ্টদের বন্ধ করতে হবে।
বাজার তদারকি সংস্থা জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের উপপরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার যুগান্তরকে বলেন, বাজারে পর্যাপ্ত সবজি আছে। কিন্তু দাম বেশি।
মধ্যস্বত্বভোগীদের কারণে রাজধানীসহ বিভিন্ন স্থানে এই সবজি বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে। এদের দৌরাত্ম্য রোধ করতে কৃষক থেকে ভোক্তা পর্যায়ে মনিটরিং জোরদার করা হবে।
