কনটেইনারের তালা কেটে মালপত্র চুরি
মোংলা বন্দর
যুগান্তর রিপোর্ট
২৪ নভেম্বর ২০২০, ০০:০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
মোংলা বন্দরে অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী ও কতিপয় সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টের সমন্বয়ে গড়ে উঠেছে একটি শক্তিশালী চোরচক্র। এরা কৌশলে কনটেইনারের তালা কেটে আমদানি করা মালামাল চুরি করে নিয়ে যায়। ফলে কোটি কোটি টাকার পণ্য খুইয়ে দিশেহারা হয়ে পড়ছেন অনেক আমদানিকারক। বন্দরে আমদানি করা কাপড় চুরির ঘটনায় এ চক্রের ৫ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। তাদের জিজ্ঞাসাবাদের পর চক্রের আরও ১৫-২০ জনকে নজরদারিতে রাখা হয়েছে।
গোয়েন্দা পুলিশের লালবাগ জোনের ডিসি রাজিব আল মাসুদ জানিয়েছেন, ওই চোরচক্রের সদস্যরা বিভিন্ন মালামালের কনটেইনারের তালা ভেঙে চুরি করে। পরে কতিপয় সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টের মালামালের সঙ্গে ট্রাকে করে তা চট্টগ্রামের টেরিবাজার হয়ে ঢাকার ইসলামপুরে নিয়ে আসা হয়। ইসলামপুর থেকে নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় খুচরা ও পাইকারি ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করে দেয়া হয়।
জানা গেছে, চীনের ওয়াইফ্যাং জিনশেং ইমপোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট কোম্পানি লিমিটেডের কাছ থেকে কাপড় আনার চুক্তি করেছিল আজিজ অ্যান্ড সন্স। গত বছরের ডিসেম্বরে চীনা প্রতিষ্ঠানটি ৩১ হাজার ৯১৩ কেজি ফেব্রিকস পাঠায়। জাহাজে কনটেইনার ওঠানোর পর বারকোড দেয়া যে তালা লাগানো হয়েছিল, সেই বারকোডও নিয়মানুযায়ী মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়।
কিন্তু মার্চ মাস থেকে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে পণ্য ছাড় করা হয়নি। মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষকে নির্দিষ্ট ফি দিয়ে কনটেইনারটি ওখানেই রাখার ব্যবস্থা করা হয়। ৬ সেপ্টেম্বর পণ্য খালাসের সময় কাস্টমস ও বন্দরের নিয়মানুযায়ী কনটেইনার ওজন করা হলে ৩১ হাজার ৯১৩ কেজির বদলে পাওয়া যায় ৬ হাজার ১৪০ কেজি পণ্য। এ ঘটনায় শুল্ক বিভাগের যুগ্ম কমিশনার মো. শামসুল আরেফিন পণ্য চালানের যৌথ কায়িক পরীক্ষার জন্য আট সদস্যের কমিটি গঠন করেন। তারা কনটেইনারের সিল কেটে ভেতরে থাকা পণ্যের কায়িক পরীক্ষা ও সার্ভেয়ারকে দিয়ে সার্ভে করেন। এতেও একই পরিমাণ কাপড় পাওয়া যায়।
গোয়েন্দা পুলিশের লালবাগ বিভাগের কোতোয়ালি জোনের অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার সাইফুর রহমান আজাদ জানান, অক্টোবরে আমদানিকারক রাসেল রহমান জানতে পারেন তার ইসলামপুরের প্রতিষ্ঠান আজিজ অ্যান্ড সন্স থেকে মাত্র দেড়শ’ মিটার দূরে একটি কাপড়ের গুদামে তার খোয়া যাওয়া পণ্য রেখে বিক্রি করা হচ্ছে। এ বিষয়ে তিনি কোতোয়ালি থানায় একটি মামলা করেন। এরপর ঢাকা মহানগর পুলিশের লালবাগ বিভাগের কোতোয়ালি জোনের একটি টিম ইসলামপুরের ২৬/২৬-১ আইসিটি টাওয়ারের ৫ম তলার পশ্চিম পার্শ্বে আফরোজা টেক্সটাইলের ভাড়া করা গোডাউন থেকে ৯২৬৭২ গজ চোরাই থান কাপড় জব্দ করে। এ সময় গ্রেফতার করা হয় দুই ব্যবসায়ী শামসুল আরেফিন ও মনির হোসেনকে।
তারা জানায়, চট্টগ্রামের টেরিবাজার থেকে এ পণ্য কিনেছেন। কাস্টমস নিলামকারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স কেজিএন এন্টারপ্রাইজের মালিক আবদুল কাশেমের মাধ্যমে তারা এ পণ্য কিনেছেন। পরে মামলার তদন্তকালে ডিবি পুলিশ এ প্রতিষ্ঠানের কোনো অস্তিত্ব পায়নি। তবে আবুল কাশেমকে শনাক্ত করে গ্রেফতার করে ডিবি।
জিজ্ঞাসাবাদে আবুল কাশেম জানান, মোংলা বন্দর থেকে কনটেইনারের তালা ভেঙে চুরি করা কাপড় চট্টগ্রাম হয়ে ঢাকায় বিক্রি করা হয়। এ চক্রে চট্টগ্রাম টেরিবাজারকেন্দ্রিক একটি বড় সিন্ডিকেট জড়িত। বেশ কিছু সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টের নামও প্রকাশ করেন তিনি। এরপর মোংলা বন্দর থেকে সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অরুণকে গ্রেফতার করে ডিবি। জিজ্ঞাসাবাদে সে বন্দরের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারীর জড়িত থাকার কথা জানায়। তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে লেবার সর্দার সাগরকে গ্রেফতার করে ডিবি। সাগর জিজ্ঞাসাবাদে আরও কয়েকজনের জড়িত থাকার কথা জানায়।
সম্পাদক : সাইফুল আলম, প্রকাশক : সালমা ইসলাম
প্রকাশক কর্তৃক ক-২৪৪ প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড), বারিধারা, ঢাকা-১২২৯ থেকে প্রকাশিত এবং যমুনা প্রিন্টিং এন্ড পাবলিশিং লিঃ থেকে মুদ্রিত।
পিএবিএক্স : ৯৮২৪০৫৪-৬১, রিপোর্টিং : ৯৮২৪০৭৩, বিজ্ঞাপন : ৯৮২৪০৬২, ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৩, সার্কুলেশন : ৯৮২৪০৭২। ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৬
E-mail: [email protected]
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
মোংলা বন্দর
কনটেইনারের তালা কেটে মালপত্র চুরি
মোংলা বন্দরে অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী ও কতিপয় সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টের সমন্বয়ে গড়ে উঠেছে একটি শক্তিশালী চোরচক্র। এরা কৌশলে কনটেইনারের তালা কেটে আমদানি করা মালামাল চুরি করে নিয়ে যায়। ফলে কোটি কোটি টাকার পণ্য খুইয়ে দিশেহারা হয়ে পড়ছেন অনেক আমদানিকারক। বন্দরে আমদানি করা কাপড় চুরির ঘটনায় এ চক্রের ৫ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। তাদের জিজ্ঞাসাবাদের পর চক্রের আরও ১৫-২০ জনকে নজরদারিতে রাখা হয়েছে।
গোয়েন্দা পুলিশের লালবাগ জোনের ডিসি রাজিব আল মাসুদ জানিয়েছেন, ওই চোরচক্রের সদস্যরা বিভিন্ন মালামালের কনটেইনারের তালা ভেঙে চুরি করে। পরে কতিপয় সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টের মালামালের সঙ্গে ট্রাকে করে তা চট্টগ্রামের টেরিবাজার হয়ে ঢাকার ইসলামপুরে নিয়ে আসা হয়। ইসলামপুর থেকে নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় খুচরা ও পাইকারি ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করে দেয়া হয়।
জানা গেছে, চীনের ওয়াইফ্যাং জিনশেং ইমপোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট কোম্পানি লিমিটেডের কাছ থেকে কাপড় আনার চুক্তি করেছিল আজিজ অ্যান্ড সন্স। গত বছরের ডিসেম্বরে চীনা প্রতিষ্ঠানটি ৩১ হাজার ৯১৩ কেজি ফেব্রিকস পাঠায়। জাহাজে কনটেইনার ওঠানোর পর বারকোড দেয়া যে তালা লাগানো হয়েছিল, সেই বারকোডও নিয়মানুযায়ী মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়।
কিন্তু মার্চ মাস থেকে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে পণ্য ছাড় করা হয়নি। মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষকে নির্দিষ্ট ফি দিয়ে কনটেইনারটি ওখানেই রাখার ব্যবস্থা করা হয়। ৬ সেপ্টেম্বর পণ্য খালাসের সময় কাস্টমস ও বন্দরের নিয়মানুযায়ী কনটেইনার ওজন করা হলে ৩১ হাজার ৯১৩ কেজির বদলে পাওয়া যায় ৬ হাজার ১৪০ কেজি পণ্য। এ ঘটনায় শুল্ক বিভাগের যুগ্ম কমিশনার মো. শামসুল আরেফিন পণ্য চালানের যৌথ কায়িক পরীক্ষার জন্য আট সদস্যের কমিটি গঠন করেন। তারা কনটেইনারের সিল কেটে ভেতরে থাকা পণ্যের কায়িক পরীক্ষা ও সার্ভেয়ারকে দিয়ে সার্ভে করেন। এতেও একই পরিমাণ কাপড় পাওয়া যায়।
গোয়েন্দা পুলিশের লালবাগ বিভাগের কোতোয়ালি জোনের অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার সাইফুর রহমান আজাদ জানান, অক্টোবরে আমদানিকারক রাসেল রহমান জানতে পারেন তার ইসলামপুরের প্রতিষ্ঠান আজিজ অ্যান্ড সন্স থেকে মাত্র দেড়শ’ মিটার দূরে একটি কাপড়ের গুদামে তার খোয়া যাওয়া পণ্য রেখে বিক্রি করা হচ্ছে। এ বিষয়ে তিনি কোতোয়ালি থানায় একটি মামলা করেন। এরপর ঢাকা মহানগর পুলিশের লালবাগ বিভাগের কোতোয়ালি জোনের একটি টিম ইসলামপুরের ২৬/২৬-১ আইসিটি টাওয়ারের ৫ম তলার পশ্চিম পার্শ্বে আফরোজা টেক্সটাইলের ভাড়া করা গোডাউন থেকে ৯২৬৭২ গজ চোরাই থান কাপড় জব্দ করে। এ সময় গ্রেফতার করা হয় দুই ব্যবসায়ী শামসুল আরেফিন ও মনির হোসেনকে।
তারা জানায়, চট্টগ্রামের টেরিবাজার থেকে এ পণ্য কিনেছেন। কাস্টমস নিলামকারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স কেজিএন এন্টারপ্রাইজের মালিক আবদুল কাশেমের মাধ্যমে তারা এ পণ্য কিনেছেন। পরে মামলার তদন্তকালে ডিবি পুলিশ এ প্রতিষ্ঠানের কোনো অস্তিত্ব পায়নি। তবে আবুল কাশেমকে শনাক্ত করে গ্রেফতার করে ডিবি।
জিজ্ঞাসাবাদে আবুল কাশেম জানান, মোংলা বন্দর থেকে কনটেইনারের তালা ভেঙে চুরি করা কাপড় চট্টগ্রাম হয়ে ঢাকায় বিক্রি করা হয়। এ চক্রে চট্টগ্রাম টেরিবাজারকেন্দ্রিক একটি বড় সিন্ডিকেট জড়িত। বেশ কিছু সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টের নামও প্রকাশ করেন তিনি। এরপর মোংলা বন্দর থেকে সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অরুণকে গ্রেফতার করে ডিবি। জিজ্ঞাসাবাদে সে বন্দরের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারীর জড়িত থাকার কথা জানায়। তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে লেবার সর্দার সাগরকে গ্রেফতার করে ডিবি। সাগর জিজ্ঞাসাবাদে আরও কয়েকজনের জড়িত থাকার কথা জানায়।