Logo
Logo
×

শেষ পাতা

সাক্ষাৎকারে ব্যাংক এশিয়া এমডি

প্রণোদনায় কিছুটা ঘুরে দাঁড়িয়েছে অর্থনীতি

Icon

হামিদ বিশ্বাস

প্রকাশ: ২৮ নভেম্বর ২০২০, ০৬:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

প্রণোদনায় কিছুটা ঘুরে দাঁড়িয়েছে অর্থনীতি

করোনায় দেশের অর্থনীতির গতি শ্লথ হলেও সরকার ঘোষিত প্রণোদনায় তা কিছুটা ঘুরে দাঁড়িয়েছে। একবিংশ শতাব্দীতেও যে মানুষ কতটা অসহায় হতে পারে তা বুঝিয়ে দিয়েছে এই মহামারী। এ সময়ে বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বের অর্থনৈতিক কার্যক্রমে স্থবিরতা নেমে আসে। তবে সরকারের বলিষ্ঠ সিদ্ধান্ত এবং ভূমিকা তা থেকে উত্তরণের একটি পথ দেখিয়েছে।

সরকার ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজ আত্মবিশ্বাস ফেরাতে সহযোগিতা করেছে। ব্যবসায়ীরা সব সময়েই উত্তরণের পথ খোঁজেন। রাষ্ট্রীয় পর্যায় থেকে সহযোগিতা না পেলে ব্যক্তিগতভাবে এই মহামারীকালে ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব ছিল না। সে কারণেই এখন অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে গতি এসেছে। অন্যদিকে করোনার মধ্যেও রেমিটেন্স বৃদ্ধি পেয়েছে অভাবনীয় হারে, যা আশীর্বাদ হিসেবে কাজ করেছে। এর ফলে ডলারের দাম স্থিতিশীল রয়েছে। যার সুফল সরাসরি পেয়েছেন রফতানিকারকরা।

সম্প্রতি প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে যুগান্তরকে দেয়া সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন ব্যাংক এশিয়ার প্রেসিডেন্ট এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. আরফান আলী। নিজের ব্যাংকের পাশাপাশি পুরো ব্যাংকিং খাত ও নন ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নানা অসঙ্গতি এবং তা থেকে উত্তরণের উপায় নিয়ে কথা বলেন তিনি।

আরফান আলী বলেন, ব্যাংক ও আর্থিক খাতে পুরনো-নতুন যত সমস্যা বিশেষ করে উচ্চ খেলাপি ঋণ, ইচ্ছাকৃত ঋণ খেলাপি, ঋণ অবলোপন, অর্থঋণ আদালতে মামলার জট, ঋণ অধিগ্রহণ, পরস্পর ঋণ ভাগাভাগি, নন ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাতে যে অস্থিরতা-এসবের সমাধান হওয়া উচিত। পরিবর্তন আসতে হবে। এছাড়া কোনো উপায়ও নেই। সবচেয়ে বড় সমস্যা বের হওয়ার পথ খোলা নেই।

একজন গ্রাহক বারবার খেলাপি হচ্ছেন, তাকে কেন আবার টাকা দিতে হবে? একটা ব্যাংক চলতে পারছে না সে ব্যাংককে টিকিয়ে রাখতে হবে কেন? একটা নন ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান বারবার হোঁচট খাচ্ছে সে প্রতিষ্ঠানকে কেন বাঁচিয়ে রাখতে হবে? এ ক্ষেত্রে এক্সিট পয়েন্ট থাকা উচিত। যে প্রতিযোগিতায় টিকবে না সে পড়ে যাবে। তাহলে বাজারে ভালোর মূল্য থাকবে। এখন ভালো-মন্দ এক হয়ে যাচ্ছে।

ব্যাংক এশিয়ার এমডি বলেন, ব্যাংকের ঋণ পরিশোধে ডেফার্ড বা অতিরিক্ত সময় দেয়া হয়েছে, যার মেয়াদ ডিসেম্বর পর্যন্ত। এর মধ্যেও কিছু ভালো গ্রাহক নিয়মিত কিস্তি পরিশোধ করছেন, আবার কেউ কেউ আরও সুযোগ-সুবিধা খুঁজছেন। তবে সময় শেষে এ টাকা কীভাবে আদায় হবে তা নির্ধারণ করবে বাংলাদেশ ব্যাংক।

খেলাপি ঋণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, খেলাপির মধ্যে বেশিরভাগই মন্দ মানের হওয়ার প্রধান কারণ পুনর্গঠনকৃত ঋণ আদায় না হওয়া। কারণ এসব ঋণের এক কিস্তি দিতে না পারলেই মন্দ মানের খেলাপিতে পরিণত হয়। তিনি আরও বলেন, কোনো ঋণখেলাপি টাকা পরিশোধ না করে সামনে যেতে পারবে না। এই বিষয়টা বারবার মনে করিয়ে দেয়া উচিত। যদিও নতুন আইনে ইচ্ছাকৃত খেলাপিদের সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা বাতিলের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

আইনটি কার্যকর হলে খেলাপি ঋণ কমে আসবে বলে আশা করছি। অর্থঋণ আদালতে বন্দি টাকাগুলো কার্যকরভাবে ফিরিয়ে আনা এখন সময়ের দাবি। অনেক ধরনের আইনই আছে কিন্তু কোনোটাই ঠিকভাবে বাস্তবায়ন হচ্ছে না। এসব আইনের প্রয়োগ নিশ্চিত করা গেলে টাকাগুলো আদায় করা সহজ হয়ে যাবে। আমরা অর্থঋণ আদালতের কাছে যাই কিন্তু সময়সাপেক্ষ হওয়ার কারণে বেরিয়ে আসতে পারি না।

এক ব্যাংক থেকে অন্য ব্যাংকে ঋণ টেকওভার বা অধিগ্রহণ দোষের কিছু নয়। তবে নিয়ম অনুযায়ী খেলাপি ঋণ কেনাবেচা করা যাবে না। কাজগুলো সম্পন্ন করার আগে সর্বোচ্চ যাচাই-বাছাই করার প্রয়োজন।

আরফান আলী বলেন, একটি নতুন ব্যাংক যেভাবেই মার্কেটে আসুক না কেন তাকে বাস্তবতার সম্মুখীন হতে হবে। বাস্তবতা হচ্ছে- প্রচণ্ড প্রতিযোগিতার মাধ্যমে নিজেকে তুলে ধরা। এ ক্ষেত্রে নতুন পণ্য আবিষ্কারের কোনো বিকল্প নেই। ঋণের সুদহার ৯ শতাংশ কার্যকরে আমানতের সুদ কমিয়ে দিয়েছি।

এভাবে প্রফিট মার্জিন ধরে রাখার চেষ্টা করছি। পাশাপাশি নতুন প্রোডাক্ট আবিষ্কারের চিন্তা চলছে। এত কিছুর পরেও যারা ভালোভাবে ব্যাংকিং সেবাটা উপস্থাপন করতে পারবে তারাই টিকে থাকবে।

তিনি বলেন, দেশের ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে অনেক দেরি হয়ে গেছে। ব্যাংক ও নন ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বাজারটা খুব প্রতিযোগিতামূলক। যারা তাল মিলিয়ে চলতে পারছে না তাদেরকে রাখার প্রয়োজন নেই। শুধু শুধু ধরে রাখার বৃথা চেষ্টা।

আরফান আলী বলেন, গ্রাহক নির্ভরতার দুই দশক পেরিয়ে ব্যাংক এশিয়ার পথচলায় ২১ বছর পূর্ণ হল। ১৯৯৯ সালে একটি ‘সুন্দর আগামীর জন্য’ স্লোগান নিয়ে যাত্রা শুরু করে ব্যাংক এশিয়া। এর স্বপ্নদ্রষ্টা দেশের শিল্প-বাণিজ্য অঙ্গনের অন্যতম পুরোধা, বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব ও ব্যাংক এশিয়ার বর্তমান চেয়ারম্যান আবদুর রউফ চৌধুরী। তার উদ্যোগকে সফল করতে এগিয়ে আসেন দেশের বিশিষ্ট শিল্পপতি ও তৈরি পোশাক শিল্পের অন্যতম পথিকৃৎ আনিসুর রহমান সিনহা, বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব সাফওয়ান চৌধুরী, সরকারের সাবেক মন্ত্রী এম. সাঈদুজ্জামানসহ বেশ কয়েক শিল্পপতি। ১৯৯৯ সালের ২৭ নভেম্বর ব্যাংক এশিয়ার উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, ব্যাংক এশিয়ার গত ২১ বছরে উল্লেখযোগ্য অর্জনের মধ্যে রয়েছে- কানাডিয়ান নোভা-স্কশিয়া ব্যাংক ও মুসলিম কমার্শিয়াল ব্যাংক অব পাকিস্তানের বাংলাদেশ কার্যক্রম অধিগ্রহণ, অন-লাইন ব্যাংকিং সেবা চালু এবং আইপিও ওপেনিং, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ এবং চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের সঙ্গে অন্তর্ভুক্তি, গ্রামাঞ্চলের গরিব মেধাবী শিক্ষার্থীদের সহায়তায় উচ্চ শিক্ষাবৃত্তি প্রদান, জন্মান্ধ শিশুর চোখের অপারেশন কার্যক্রম, ইসলামিক ব্যাংকিং, সিটিএসইউ’র যাত্রা (নন-এডি শাখাগুলোর ফরেন ট্রেডকে সুবিধা প্রদানের উদ্দেশ্যে), গ্রিন ব্যাংকিং কার্যক্রম প্রবর্তন, একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পে ব্যাংকিং পার্টনার হিসেবে কার্যক্রম, দেশে প্রথম এজেন্ট ব্যাংকিং কার্যক্রম চালু, মোবাইল ব্যাংকিং ‘হ্যালো’র যাত্রা, এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে দেশে প্রথম স্কুল ব্যাংকিং সেবা প্রদান, কৃষকদের সহায়তায় সর্বপ্রথম কৃষিভিত্তিক কার্ড চালু একই সঙ্গে কৃষকদের অতিদ্রুত কৃষি ঋণ প্রদানের জন্য অন-লাইন লোন প্রসেসিং উদ্যোগ ‘দিগন্ত’ ওকাস (OCAS) লোন সিস্টেম চালু, কর্পোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতামূলক কার্যক্রম পরিচালনায় ব্যাংক এশিয়া ফাউন্ডেশন গঠন, ১৮ ও ১৯তম আইসিএবি বার্ষিক পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে বার্ষিক প্রতিবেদন ক্যাটাগরিতে শ্রেষ্ঠ বার্ষিক প্রতিবেদন পুরস্কার লাভ এবং দেশে প্রথমবারের মতো ফিস কার্ড নামে বিশেষায়িত ক্রেডিট কার্ড চালু করেছে ব্যাংক এশিয়া।

আরফান

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম