মোংলায় কনটেইনারের তালা কেটে মালামাল চুরি
সিন্ডিকেটের অর্ধশত সদস্যের তথ্য গোয়েন্দাদের হাতে
যুগান্তর রিপোর্ট
প্রকাশ: ০১ ডিসেম্বর ২০২০, ০৬:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
কনটেইনারের তালা কেটে কোটি কোটি টাকার মালামাল চুরির সঙ্গে মোংলা বন্দরের শ্রমিকনেতা থেকে শুরু করে অসাধু কর্মকর্তারাও জড়িত। এমনকি বন্দরের ট্রাফিক পরিদর্শকের দায়িত্বে থাকা একাধিক কর্মকর্তা সরাসরি জড়িত। চোর সিন্ডিকেটকে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেন কাস্টমস এবং বন্দরের আরও কয়েকজন অসাধু কর্মকর্তা। একটি গোয়েন্দা সংস্থা এই চোরচক্রের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করছে। প্রাথমিকভাবে অর্ধশত সদস্যের বিষয়ে তথ্য পাওয়া গেছে। এর মধ্যে বন্দরের ট্রাফিক বিভাগের দু’জন পরিদর্শক, একজন টালিম্যান এবং একজন নয়েল ড্রাইভারের সরাসরি সম্পৃক্ততার বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া গেছে। আরও যাদের বিষয়ে প্রাথমিক তথ্য পাওয়া গেছে, সেগুলো যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। তথ্যপ্রমাণ পাওয়া গেলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বিস্তারিত জানাবে সংস্থাটি।
গোয়েন্দা সংস্থার একজন কর্মকর্তা জানান, মোংলা বন্দরের মতো স্পর্শকাতর এলাকার নিরাপত্তা বলয়ের মধ্যেই চোরচক্র দীর্ঘদিন ধরে সক্রিয় রয়েছে। বন্দর কর্তৃপক্ষের যোগসাজশ ছাড়া এটা প্রায় অসম্ভব। একটি চুরির ঘটনা তদন্ত করতে গিয়ে বন্দরের ট্রাফিক বিভাগের দু’জন পরিদর্শকের বিষয়ে অকাট্য তথ্যপ্রমাণ মিলেছে। এ দুইজন হলেন শাহ আলম ও সোবাহান। এছাড়া বন্দরের টালিম্যান মোকসেদ এবং নয়েল ড্রাইভার শাহীন সরাসরি জড়িত বলেও তথ্যপ্রমাণ পাওয়া গেছে। এই সিন্ডিকেটে কয়েকজন শ্রমিকনেতা রয়েছেন। অন্তত ১৫ জন সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট রয়েছেন। এছাড়া চট্টগ্রামের টেরিবাজার এবং ঢাকার আরও অন্তত ৩০ জনের বিষয়ে তথ্য পাওয়া গেছে। তাদের নজরদারিতে রাখা হয়েছে।
জানতে চাইলে মোংলা বন্দরের প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা লে. কমান্ডার বিএম নূর মোহাম্মদ যুগান্তরকে বলেন, বন্দরের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আমরা সব সময় তৎপর রয়েছি এবং কার্যক্রম অব্যাহত আছে। চুরি ঠেকাতে আমাদের কার্যক্রম জোরদার করা হচ্ছে। আগের তুলনায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা অনেক আধুনিকায়ন করা হয়েছে।
সম্প্রতি ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের-ডিবি কোতোয়ালি জোন একটি চোরচক্রের পাঁচ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে। রাজধানীর কোতোয়ালি থানায় করা মামলার তদন্ত করতে গিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতার ব্যক্তিরা হলেন ব্যবসায়ী শামসুল আরেফিন ও মনির হোসেন, কাস্টমস নিলামকারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স কেজিএন এন্টারপ্রাইজের মালিক আবদুল কাশেম, সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অরুণ এবং শ্রমিক সরদার সাগর।
ডিবি জানায়, চীনের ওয়াইফ্যাং জিনশেং ইমপোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট কোম্পানি লিমিটেডের কাছ থেকে কাপড় আনার চুক্তি করেছিল আজিজ অ্যান্ড সন্স। গত বছরের ডিসেম্বরে চীনা প্রতিষ্ঠানটি ৩১ হাজার ৯১৩ কেজি ফেব্রিকস পাঠায়। জাহাজে কনটেইনার উঠানোর পর বারকোড দেয়া যে তালা লাগানো হয়েছিল, সেই বারকোডও নিয়মানুযায়ী মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়। ৬ সেপ্টেম্বর পণ্য খালাসের সময় কাস্টমস ও বন্দরের নিয়মানুযায়ী কনটেইনার ওজন করা হলে ৩১ হাজার ৯১৩ কেজির বদলে পাওয়া যায় ৬ হাজার ১৪০ কেজি পণ্য। পরে ঢাকায় একই ধরনের পণ্য বিক্রি হচ্ছে দেখে আজিজ অ্যান্ড সন্স কোতোয়ালি থানায় মামলা করেন। ডিবি কর্মকর্তারা জানান, জিজ্ঞাসাবাদে তারা বলেছে, দেশের বাইরে থেকে আসা বিভিন্ন কনটেইনারে কী ধরনের পণ্য আছে, এসব তথ্য চোরচক্রের হাতে তুলে দিচ্ছে বন্দর এবং কাস্টমসের অসাধু কর্মকর্তারা। পরে চোরচক্র ট্রাফিক পরিদর্শক, টালিম্যান এবং নয়েল ড্রাইভারকে ম্যানেজ করে। নয়েল ড্রাইভার কনটেইনার থেকে মালামাল ট্রাকে তুলে দেন। ট্রাফিক পরিদর্শক এসব মালামালভর্তি ট্রাক বন্দর থেকে নিরাপদে বেরিয়ে যেতে সহায়তা করে। আর বন্দরে ট্রাক প্রবেশ করা এবং বেরিয়ে যাওয়ার তথ্য গোপন করে।
এ বিষয়ে ডিবির কোতোয়ালি জোনের এডিসি সাইফুর রহমান আজাদ যুগান্তরকে বলেন, চোরচক্রে সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টরা সরাসরি জড়িত। তারা কোনো শুল্কায়ন করা পণ্য খালাসের আগে খোঁজ নেয় বন্দরে শুল্কায়নের অপেক্ষায় থাকা সমজাতীয় কোনো পণ্যবাহী কনটেইনার আছে কি না। তারপর তারা নির্ধারিত সময়ে পণ্য খালাসের সময় শুল্কায়নের অপেক্ষায় থাকা কনটেইনারের তালা ভেঙে মালামাল চুরি করে। এক্ষেত্রে তারা টালিম্যানকে ম্যানেজ করে অতিরিক্ত পণ্যবাহী ট্রাক বন্দরে প্রবেশ করায়। পুরো প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করতে বন্দরের অসাধু কর্মচারীরা সরাসরি জড়িত।
