বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়
উপাচার্যের দুর্নীতি তদন্তে ক্যাম্পাসে ইউজিসি দল
রংপুর ব্যুরো
প্রকাশ: ১৪ মার্চ ২০২১, ০৬:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) ভিসি প্রফেসর ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ। ফাইল ছবি
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহর অনিয়ম-দুর্নীতির সরেজমিন তদন্ত করতে ক্যাম্পাসে অবস্থান করছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) তদন্ত দল। রোববার বেলা পৌনে ১২টায় ইউজিসির তিন সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত দল রংপুরে আসে।
ওই দলের প্রধান অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ চন্দের নেতৃত্বে ইউজিসি ও তদন্ত দলের সদস্য অধ্যাপক ড. আবু তাহের, ইউজিসির সিনিয়র সহকারী সচিব ও তদন্ত দলের সদস্য সচিব জামাল উদ্দিন তদন্ত শুরু করেছেন। তদন্ত কার্যক্রমের প্রথম দিনে দলের সদস্যরা ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অনেকের সঙ্গে কথা বলেন, অভিযোগ সংক্রান্ত বিভিন্ন নথি ও তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করেন।
এর আগে ইউজিসির সিনিয়র সহকারী সচিব ও সংশ্লিষ্ট তদন্ত দলের সদস্য সচিব জামাল উদ্দিন স্বাক্ষরিত এক পত্র ২ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাত শিক্ষক বরাবর পাঠানো হয়। সেই সঙ্গে এ পত্রের অনুলিপিও দেওয়া হয়েছে উপাচার্যের একান্ত সচিবকে। এতে ১৪ মার্চ তদন্তকাজ অনুষ্ঠিত হবে বলে উল্লেখ করা হয়।
ওই পত্রে উপাচার্যের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের দালিলিক প্রমাণাদিসহ সাক্ষীদের উপস্থিত থাকার জন্য তদন্ত দলের পক্ষ থেকে সাত শিক্ষককে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
সরেজমিন তদন্ত করতে এসে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তদন্ত দলের সদস্যরা জানান, ‘বিশ্ববিদ্যালয় বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে নানান অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা তদন্ত করতে এসেছি। আমরা সব অভিযোগ তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দেব। প্রতিবেদন মোতাবেক সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেবে।
দুর্নীতি, অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতা, ক্ষমতার অপব্যবহার, স্বজনপ্রীতিসহ নানা অভিযোগ রয়েছে উপাচার্যের বিরুদ্ধে। তাই তদন্তকাজ শেষ না করে কোনো কিছুই বলা যাবে না।
অভিযোগ প্রমাণের জন্য সব নথিপত্র ও প্রমাণাদি তদন্ত দল সংগ্রহ করার কাজ শুরু করেছে। এছাড়া পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত কিছু দুর্নীতি ও অনিয়মসহ নানা অভিযোগ সম্পর্কেও তদন্ত দল নজর রেখেছে, সেগুলোও খতিয়ে দেখা হবে।’
শিক্ষকদের সংগঠন বঙ্গবন্ধু পরিষদের সভাপতি কমলেশ চন্দ্র রায় ও সাধারণ সম্পাদক মশিউর রহমান স্বাক্ষরিত ২০১৯ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর শিক্ষামন্ত্রীর কাছে পাঠানো উপাচার্যের বিরুদ্ধে আনীত ৪৫টি অভিযোগের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, রাষ্ট্রপতির নির্দেশনা অমান্য করে ক্যাম্পাসে ধারাবাহিক অনুপস্থিতি, ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতির ঘটনা ধামাচাপা দেওয়া, ইউজিসির নির্দেশনা অমান্য করে জনবল নিয়োগ, শিক্ষক ও জনবল নিয়োগে দুর্নীতি ও অনিয়ম, নিয়োগ বোর্ডের সভাপতি উপাচার্য হয়েও অনুপস্থিতি থাকা, নিরাপত্তাহীন ক্যাম্পাস, ইচ্ছামতো পদোন্নতি, আইন লঙ্ঘন করে একাডেমিক প্রশাসনিক পদ দখল ও ক্রয় প্রক্রিয়ায় নীতিমালা লঙ্ঘন।
এসব অভিযোগ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাত শিক্ষক। তারা হলেন, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক গাজী মাজহারুল আনোয়ার, রসায়ন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক এইচএম তারিকুল ইসলাম, ফাইন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক খায়রুল কবির, গণিত বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মশিউর রহমান, গণিত বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক কমলেশ চন্দ্র রায়, লোকপ্রশাসন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সাব্বীর আহমেদ ও অর্থনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক বেলাল উদ্দিন।
সম্প্রতি ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের দুটি ১০ তলা ভবন ও একটি স্মৃতিস্তম্ভের নির্মাণকাজে উপাচার্যের অনিয়মের সত্যতা পেয়েছে ইউজিসির আরেকটি সরেজমিন তদন্ত দল। কিছুদিন আগে ওই দল তদন্ত করে অভিযুক্ত উপাচার্যসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রতিবেদনে সুপারিশ করে।
অভিযোগ প্রদানকারী বঙ্গবন্ধু পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শিক্ষক মশিউর রহমান বলেন, নানা অনিয়ম-দুর্নীতির ৪৫টি অভিযোগ শিক্ষামন্ত্রী বরাবর পেশ করেছি। তা এতদিন পর তদন্ত করতে ইউজিসির একটি দল ক্যাম্পাসে এসে পৌঁছেছে। আমরা তদন্ত দলের কাছে অভিযোগ প্রমাণের জন্য কাগজপত্র দেব।
