Logo
Logo
×

শেষ পাতা

সাদা করার ক্ষেত্রে জরিমানা কমছে

শিল্পে বিনিয়োগের সুযোগ কালোটাকা

দিতে হবে ১০ শতাংশ কর, এ সুযোগ ২০২২ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বহাল থাকবে

Icon

সাদ্দাম হোসেন ইমরান

প্রকাশ: ২৬ জুন ২০২১, ০৬:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

শিল্পে বিনিয়োগের সুযোগ কালোটাকা

এবার উৎপাদনশীল খাতে কালোটাকা বিনিয়োগের ‘বিশেষ’ সুযোগ আসছে। এজন্য আয়কর অধ্যাদেশে একটি নতুন ধারা যুক্ত করা হচ্ছে। আবাসন ও পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের ক্ষেত্রেও নতুন বিধান করা হচ্ছে। শুধু তাই নয়, নির্ধারিত হারে কর ও জরিমানা দিয়ে কালোটাকা পুঁজিবাজার, আবাসন বা শিল্পে বিনিয়োগ করলে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) বা অন্য কোনো সংস্থা প্রশ্ন করতে পারবে না- আয়কর অধ্যাদেশে এমন ধারাও যুক্ত করা হচ্ছে। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানায়, করোনাকালে শিল্পে বিনিয়োগ প্রায় স্থবির হয়ে পড়েছে। ফলে নতুন কর্মসংস্থান তৈরি হয়নি। উলটো ভোগ-চাহিদা কমে যাওয়ায় অনেক প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে, নয়তো টিকে থাকতে কর্মী ছাঁটাই করেছে। এ অবস্থায় শিল্পের চাকা সচল রাখতে এবং কর্মসংস্থান বাড়াতে উৎপাদনশীল খাতে কালোটাকা বিনিয়োগের বিশেষ সুযোগ দেওয়ার ক্ষেত্রে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ও অর্থ মন্ত্রণালয় ঐকমত্যে পৌঁছেছে। নতুন ধারা (১৯এএএএএএ) অনুযায়ী, দেশের সব স্থানে উৎপাদনশীল খাতে বিনিয়োগের মাধ্যমে কালোটাকা সাদা করা যাবে। এজন্য ১০ শতাংশ কর দিতে হবে। এ সুযোগ ২০২২ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বহাল থাকবে। এ পদ্ধতিতে টাকা সাদা করলে দুদক বা অন্য কোনো সংস্থা প্রশ্ন করবে না। ১০ শতাংশ কর দিয়ে উৎপাদনশীল খাতে বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়ায় একে ‘বিশেষ সুবিধা’ বলা হচ্ছে। যদিও ২০১৯-২০ অর্থবছর থেকেই ১০ শতাংশ কর দিয়ে (১৯ডিডি) শিল্পে কালোটাকা বিনিয়োগের সুযোগ রয়েছে। তবে সেটি শুধু হাইটেক পার্ক বা অর্থনৈতিক অঞ্চলের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। এ সুবিধার ২০২৪ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত থাকবে। এ বিষয়ে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই সভাপতি জসিম উদ্দিন বলেন, করোনার প্রেক্ষাপটে উৎপাদনশীল খাতে অপ্রদর্শিত আয় বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়া সময়োচিত পদক্ষেপ হবে। এতে কর্মসংস্থান বাড়বে। যা অর্থনীতি গতিশীল রাখতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। তবে একটি নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্যই এ সুযোগ দেওয়া উচিত। অনন্তকালের জন্য সুযোগ দেওয়া হলে তা কার্যকর হবে না। বর্তমানে ৪ পদ্ধতিতে কালোটাকা সাদা করা যায়। ১৯এএএএ ধারা অনুযায়ী, ৩০ জুন (বুধবার) পর্যন্ত ১০ শতাংশ কর দিয়ে পুঁজিবাজারে কালোটাকা বিনিয়োগের সুযোগ রয়েছে। আগামী অর্থবছরে এ সুযোগ আর থাকছে না। ১ জুলাই থেকে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে নির্ধারিত করের অতিরিক্ত ৫ শতাংশ জরিমানা দিতে হবে। এজন্য বিদ্যমান ধারাটি প্রতিস্থাপন করা হচ্ছে। অর্থাৎ কর ২৫ শতাংশ হলে ৫ শতাংশ হারে ১ দশমিক ২৫ শতাংশসহ সর্বমোট ২৬ দশমিক ২৫ শতাংশ কর দিয়ে টাকা পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করা যাবে। এ নিয়ম মেনে বিনিয়োগ করলে দুদক বা অন্য কোনো সংস্থা প্রশ্ন করবে না। এছাড়া রিটার্নে অপ্রদর্শিত প্লট-ফ্ল্যাট ও নগদ অর্থ প্রদর্শনের সুযোগ (১৯এএএএএ ধারা) দেওয়া হয় চলতি বাজেটে। প্লট ও ফ্ল্যাটের ক্ষেত্রে এলাকাভেদে বর্গমিটারপ্রতি নির্ধারিত হারে কর দিয়ে এবং নগদ অর্থ প্রদর্শনের ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ হারে কর দিয়ে তা বৈধ করার সুযোগ দেওয়া হয়। ১ জুলাই থেকে এ পদ্ধতিতে পরিবর্তন আসছে। প্লট বা ফ্ল্যাটের ক্ষেত্রে নির্ধারিত হারের করের সঙ্গে ৫ শতাংশ জরিমানা আরোপ করা হচ্ছে।

বর্তমানে গুলশান, বনানী, বারিধারা, মতিঝিল ও দিলকুশা এলাকায় ফ্ল্যাটের জন্য বর্গমিটারপ্রতি ২০ হাজার টাকা; ধানমন্ডি, ডিওএইচএস, মহাখালী, লালমাটিয়া, উত্তরা, বসুন্ধরা, ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট, সিদ্ধেশ্বরী, কাওরান বাজার, বিজয় নগর, ওয়ারী, সেগুনবাগিচা, নিকুঞ্জ, চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ, খুলশী, আগ্রাবাদ ও নাসিরাবাদ এলাকার ক্ষেত্রে বর্গমিটারপ্রতি ১৫ হাজার টাকা; অন্য সিটি করপোরেশন এলাকার ক্ষেত্রে বর্গমিটারপ্রতি ৫ হাজার টাকা; পৌরসভা বা জেলা সদরে অবস্থিত ফ্ল্যাটের ক্ষেত্রে বর্গমিটারপ্রতি এক হাজার ৫০০ টাকা এবং দেশের অন্য সব এলাকার ফ্ল্যাটের জন্য বর্গমিটারপ্রতি ৫০০ টাকা হারে কর দিয়ে কালোটাকায় ফ্ল্যাট কেনার নিয়ম চালু আছে।

আর জমি বা প্লটের ক্ষেত্রে গুলশান, বনানী, বারিধারা, মতিঝিল ও দিলকুশা এলাকার জন্য ২০০ বর্গমিটারের কম আয়তনের হলে বর্গমিটারপ্রতি ৪ হাজার টাকা এবং বেশি হলে ৬ হাজার টাকা; ধানমন্ডি, ডিওএইচএস, মহাখালী, লালমাটিয়া, উত্তরা, বসুন্ধরা, ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট, সিদ্ধেশ্বরী, কাওরান বাজার, বিজয়নগর, ওয়ারী, সেগুনবাগিচা, নিকুঞ্জ, চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ, খুলশী, আগ্রাবাদ ও নাসিরাবাদ এলাকার ২০০ বর্গমিটারের কম হলে বর্গমিটারপ্রতি ৩ হাজার টাকা এবং বেশি হলে সাড়ে ৩ হাজার টাকা; অন্য সিটি করপোরেশন এলাকার ক্ষেত্রে ১২০ বর্গমিটারের কম আয়তন হলে বর্গমিটারপ্রতি ৭০০ টাকা, ১২০ থেকে ২০০ বর্গমিটারের জন্য ৮৫০ টাকা এবং ২০০ বর্গমিটারের বেশি হলে এক হাজার ৩০০ টাকা; পৌরসভা বা জেলা সদরে অবস্থিত প্লট বা জমির ক্ষেত্রে ১২০ বর্গমিটারের কম আয়তন হলে বর্গমিটারপ্রতি ৩০০ টাকা, ১২০ থেকে ২০০ বর্গমিটারের জন্য ৪৫০ টাকা এবং ২০০ বর্গমিটারের বেশি হলে ৬০০ টাকা এবং দেশের অন্য সব এলাকার ক্ষেত্রে ১২০ বর্গমিটারের কম আয়তন হলে বর্গমিটারপ্রতি ২০০ টাকা, ১২০ থেকে ২০০ বর্গমিটারের জন্য ৩০০ টাকা এবং ২০০ বর্গমিটারের বেশি হলে ৫০০ টাকা কর দিয়ে কালোটাকায় জমি কেনা যায়।

১ জুলাই থেকে কালোটাকায় ফ্ল্যাট বা প্লট কিনতে চাইলে নির্দিষ্ট করের সঙ্গে ৫ শতাংশ হারে জরিমানাও দিতে হবে। এক্ষেত্রে আগের মতো দুদক বা অন্য কোনো সংস্থা প্রশ্ন করবে না। সংসদে অর্থবিলের মাধ্যমে আয়কর অধ্যাদেশে এ ধারাটি প্রতিস্থাপন করা হবে। সামগ্রিক বিষয়ে দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, কালোটাকা বা অপ্রদর্শিত অর্থ কোনো পদ্ধতিতেই বৈধ করার সুযোগ দেওয়া উচিত নয়। এটি অসাংবিধানিক, বৈষম্যমূলক এবং অনৈতিক সিদ্ধান্ত। শুধু তাই নয়, এ সিদ্ধান্ত সরকারের দুর্নীতিবিরোধী জিরো টলারেন্স নীতির পরিপন্থি।

কালো টাকা বিনিয়োগ

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম