Logo
Logo
×

শেষ পাতা

মাটির মটকার ওপর নির্মিত

তিনশ বছরের পুরোনো ভবন সংরক্ষণের উদ্যোগ

Icon

চট্টগ্রাম ব্যুরো

প্রকাশ: ১১ জুলাই ২০২১, ০৬:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

তিনশ বছরের পুরোনো ভবন সংরক্ষণের উদ্যোগ

চট্টগ্রাম নগরীর একটি পুরনো ভবন ভেঙে তলায় খনন করতে গিয়ে পাওয়া গেছে ৩০০ বছরের পুরনো মটকা। ছবি: সংগৃহীত

চট্টগ্রাম নগরীর পাথরঘাটা নজু মিয়া লেনে মাটির মটকার ওপর নির্মিত প্রায় তিনশ বছরের পুরোনো ভবনটি সংরক্ষণের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে প্রত্নতাত্ত্বিক গুরুত্ব বিবেচনায় ভবনটি সংরক্ষণের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। একই সঙ্গে সংরক্ষণ করা হবে মাটির মটকাগুলোও।

চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোহাম্মদ নাজমুল আহসান রোববার যুগান্তরকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী বাড়িটি প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন হিসাবে সংরক্ষণের নির্দেশনা দিয়েছেন। এ ব্যাপারে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর কাজ করছে। সংরক্ষণের যাবতীয় উদ্যোগ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর নেবে। আমরা সার্বিক সহযোগিতা করব। এরই মধ্যে সেখানে আমরা পাহারা বসিয়েছি যেন মাটির মটকাগুলো ঠিকমতো থাকে। প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন বিবেচনায় সরকার যদি স্থাপনাটি অধিগ্রহণের নির্দেশ দেয়, তাহলে আমরা সে ক্ষেত্রে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম বিভাগের আঞ্চলিক পরিচালক একেএম সাইফুর রহমানের নেতৃত্বে অধিদপ্তরের চার সদস্যের একটি দল রোববার ভবনটি পরিদর্শন করেছে।

সাইফুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, ভবনটির নির্মাণশৈলীতে কিছৃ মৃৎপাত্র ব্যবহার করা হয়েছে। এগুলো দ্ইুশ বছরের বেশি সময়ের আগের হতে পারে বলে আমরা প্রাথমিকভাবে ধারণা করছি। ভবনের নিচে এগুলো কেন ব্যবহার করা হয়েছিল, কাজ কী, তা জানতে আরও গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে।

তিনশ বছর আগে চট্টগ্রামের বনেদি ব্যবসায়ী শরিয়ত উল্লাহ সওদাগর মায়ানমারের রেঙ্গুন থেকে সার বোঝাই জাহাজে করে মাটির মটকাগুলো এনেছিলেন। সেগুলো মাটিতে উপুড় করে রেখে তার উপর ইট, চুন ও সুরকি দিয়ে ভবনটি তৈরি করেন তিনি। তার উত্তরাধিকারীরা দ্বিতল ভবনটি ভেঙে তার স্থলে নতুন বহুতল ভবন করার উদ্যোগ নেন। বুধবার ভবনের একটি অংশ ভাঙার পর মেঝের নিচের মাটি খুঁড়লে প্রথমে একটি মটকা দেখা যায়। এ সময় নির্মাণ শ্রমিকদের মধ্যে গুপ্তধন পাওয়া গেছে এমন গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে। কিছুক্ষণের মধ্যে খবরটি আশপাশে চাউর হয়ে গেলে লোকজন মাটির মটকাগুলো একনজর দেখার জন্য ভিড় জমাতে থাকেন। এরপর মাটির নিচ থেকে একের পর এক মটকা বেরিয়ে আসতে থাকে। কিন্তু সব মটকাই ছিল খালি। এসব মটকার ওপর ২২ ইঞ্চি ইট সুরকির আস্তরণ ছিল। ভবনের দেওয়ালও ছিল ২২ ইঞ্চি পুরু।

চট্টগ্রাম ইতিহাস সংস্কৃতি গবেষণা কেন্দ্রের চেয়ারম্যান আলীউর রহমান যুগান্তরকে বলেন, ১০ গণ্ডা জমির ওপর লম্বাকৃতির ভবনটির ভোগদখলে রয়েছেন প্রয়াত শরিয়ত উল্লাহ সওদাগরের তিন উত্তরাধিকারী। তারা ওই ব্যবসায়ীর চতুর্থ ও পঞ্চম প্রজন্ম। এর মধ্যে একজনের অংশ ভাঙার পর মাটির নিচে ৩৯টি মটকা পাওয়া গেছে। এই অংশে মাটির নিচে আরও ১৫-২০টি মটকা রয়েছে। এসব মটকার ওপরেই ভর করে ভবনটি দাঁড়িয়ে ছিল। এটি প্রযুক্তির একটি বিস্ময়। এমন প্রযুক্তিগত নির্মাণশৈলীর নজির খুব বেশি নেই। মোগল আমলের স্থাপত্যকীর্তির অনন্য উদাহরণ এটি। তিনি বলেন, দেশে মটকার ওপর নির্মিত এমন ভবন আর নেই। মোগল আমলে নির্মিত মুন্সীগঞ্জের ইদরাকপুর কেল্লায় এরকম প্রযুক্তি পেয়েছে দেশের প্রত্মতত্ত্ব বিভাগ। তবে সেখানে ব্যবহৃত মাটির মটকাগুলো আরও অনেক ছোট। তাই বড় আকারের মটকার ওপর নির্মিত এটাই এখনো পর্যন্ত দেশের একমাত্র নিদর্শন।

নগর পরিকল্পনাবিদ প্রকৌশলী সুভাস বড়ুয়া যুগান্তরকে বলেন, ভূমিকম্প থেকে রক্ষা বা তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের জন্য ভবনের নিচে মাটির মটকাগুলো ব্যবহার করা হয়ে থাকতে পারে। আমরা কোরিয়ায় দেখেছি সেখানকার ভবনগুলোর মেঝের নিচের অংশ খালি রাখা হয়। শীত বা গরমের সময় তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে তারা তাতে বিভিন্ন জিনিস ব্যবহার করে।

চট্টগ্রাম নগরী পাথরঘাটা নজু মিয়া লেন মাটির মটকা

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম