Logo
Logo
×

শেষ পাতা

সময়ের আগেই পশু আসছে রাজধানীর হাটে

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ১৪ জুলাই ২০২১, ০৬:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

সময়ের আগেই পশু আসছে রাজধানীর হাটে

করোনার এ সময়ে লকডাউন কিছুটা শিথিল করে ১৭ থেকে ২১ জুলাই পর্যন্ত স্বাস্থ্যবিধি মেনে কুরবানির পশুর হাট বসানোর অনুমতি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তার আগেই রাজধানীর পশুর হাটগুলোতে পশু নিয়ে আসছেন ব্যবসায়ীরা। এরই মধ্যে নাটোর, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, কুষ্টিয়া, মুন্সীগঞ্জসহ বিভিন্ন স্থান থেকে গরু এনেছেন ব্যবসায়ীরা। তবে এখনো সেভাবে বেচাকেনা শুরু হয়নি। এদিকে কুরবানির পশুবাহী যানবাহনের নিরাপত্তা বিধান ও যানবাহনগুলোকে ফেরি পারাপারে অগ্রাধিকার প্রদানের জন্য চিঠি দিয়েছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়।

সচিবালয়ে বুধবার আসন্ন ঈদুল আজহা উপলক্ষ্যে কুরবানির পশুর বিপণনে বিকল্প বাজার ব্যবস্থাপনা বিষয়ে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ. ম. রেজাউল করিমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক সভা শেষে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ ও নৌপরিবহণ মন্ত্রণালয়ে এ চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে কুরবানির পশুবাহী যান যাতে কোনো চাঁদাবাজি বা হয়রানি ছাড়াই নির্বিঘ্নে গন্তব্যে পৌঁছাতে পারে সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ এবং এ ধরনের যানবাহন যাতে ফেরি পারাপারে ও রাস্তায় অগ্রাধিকার পায় সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে।

কুরবানির পশু পরিবহণ, বিক্রয় ও বিক্রয়-পরবর্তীতে গবাদিপশুর ব্যবসায়ীরা যাতে ছিনতাই, ডাকাতি বা কোনো প্রকার নিরাপত্তাহীনতায় না পড়েন সে ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বুধবার জননিরাপত্তা বিভাগে অপর একটি চিঠি পাঠিয়েছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়।

গাবতলী হাট : নগরীর গাবতলীর পশুর হাট ঘুরে দেখা যায়, শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতির কাজ চলছে পুরোদমে। হাটের বিভিন্ন জায়গায় বালু ফেলে তা ব্যবহারের উপযোগী করা হচ্ছে। যেসব জায়গায় বৃষ্টির পানি জমে গর্তের সৃষ্টি হয়েছে সেখানে বালি ফেলা হচ্ছে। উঁচু-নিচু ঢিলা সমান করা হচ্ছে। অনেক জায়গায় কাদাপানি জমে রয়েছে। অনেক স্থানে বালু ফেলে বাঁশের খুঁটি পোঁতা হয়েছে। সেখানে গরু ও ছাগল বেঁধে রাখা হয়েছে। অনেক জায়গায় বাঁশের খুঁটি ফেলে রাখা আছে। হাটের বিভিন্ন স্থানে ৮টি হাসিল ঘর বসানো হয়েছে। পুলিশ, র‌্যাব ও সিটি এসবির জন্য নির্ধারিত স্থানে অস্থায়ী ক্যাম্প বসানোর কাজ চলছে। প্রবেশপথে ১২টি ওয়াচ টাওয়ার বসানোর কথা থাকলেও মাত্র ৩টি ওয়াচ টাওয়ার বসানো হয়েছে। তাও পুরোপুরি শেষ হয়নি। প্রবেশপথের জন্য ১টি গেট ও বের হওয়ার জন্য আরেকটি গেটে রয়েছে। জীবাণুনাশক ট্যানেল স্থাপন ও প্রবেশপথে তোরণ নির্মাণের কাজ চলছে। গাবতলীর সিটি করপোরেশনের স্থায়ী পশুর হাটে ছোট-বড় মাঝারি গরু উঠেছে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রান্তিক ও খামারিরা গরু ছাগল নিয়ে এসেছেন। পুরো হাটে মাঝারি গরুর সংখ্যা বেশি।

শনির আখড়া ও গোলাপবাগ : ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের অস্থায়ী পশুর হাট দনিয়া কলেজ মাঠসংলগ্ন খালি জায়গা (শনির আখড়া) এবং গোলাপবাগে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন মার্কেটের পেছনে খালি জায়গায় পশুর হাটে গরু ওঠা শুরু হয়েছে। দুই হাটে অন্তত ৩ হাজার গরু উঠেছে। রোববার থেকে ট্রাকে করে কুরবানির জন্য গরু নিয়ে আসতে শুরু করেছেন ফরিদপুর, কুষ্টিয়া, টাঙ্গাইল, চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ, জামালপুর, ময়মনসিংহ, নাটোরসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের গরুর বেপারিরা। খড়ের গাদা ও বালি বিছিয়ে ট্রাক থেকে নামানো হচ্ছে গরু। ১৭ জুলাই থেকে ২১ জুলাই পর্যন্ত হাটে গরু বেচাকেনা হবে।

উত্তরা : উত্তরায় ১৭ জুলাই থেকে শুরু হচ্ছে কুরবানির পশুর আনুষ্ঠানিক বিক্রি। ইতোমধ্যে হাটের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে ইজারাদারের লোকজন। কর্তৃপক্ষ বলেছে, ১৭ থেকে ২১ জুলাই পর্যন্ত হাট চলবে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক খামারিদের অভিযোগ, সড়ক-মহাসড়কে ট্রাক আটকে অনেকটা জোর করে এ বাজারে আনা হচ্ছে। অস্বীকৃতি জানালে ভয়ভীতিও দেখানো হচ্ছে। উত্তরা পশ্চিম থানার ইন্সপেক্টর অপারেশন সুমন চন্দ্র দাস যুগান্তরকে বলেন, হাটের নিরাপত্তার জন্য সব ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। জোর করে গরু হাটে আনার বিষয়ে বলেন, এখনো আমরা এ ধরনের কোনো অভিযোগ পাইনি।

ডেমরা : ডেমরায় ৮১ বছরের ঐতিহ্যবাহী সারুলিয়া স্থায়ী পশুর হাট বুধবার বিকালে দোয়া মাহফিলের মাধ্যমে হাটের যাত্রা শুরু হয়। আজ সকাল থেকে হাটের পূর্ণাঙ্গ কার্যক্রম শুরু হবে। করোনা পরিস্থিতির বিষয়ে সজাগ দৃষ্টি রেখে শতভাগ স্বাস্থ্যবিধি মেনে হাটে ক্রেতা-বিক্রেতাদের কার্যক্রমের সুব্যবস্থা রেখেছেন হাট কর্তৃপক্ষ। এক্ষেত্রে পুরো হাটে জীবাণুনাশক স্প্রে দেওয়ার সুব্যবস্থা রয়েছে। তাছাড়া হাটে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে ক্রেতা-বিক্রেতাদের মাস্ক পরে চলাফেরা করার উদ্যোগ নিয়েছে হাট কর্তৃপক্ষ। এক্ষেত্রে মনিটরিংয়ের জন্য স্বেচ্ছাসেবী দলকে দায়িত্ব দিয়েছেন ইজারাদা মোহাম্মদ আলী।

পুরান ঢাকা : পুরান ঢাকায় ৩টি হাটের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। হাটগুলোতে ধীরে ধীরে পশু উঠতে শুরু করলেও বেচাকেনা এখনো শুরু হয়নি বলে জানিয়েছে হাট সংশ্লিষ্টরা। তবে কুরবানি ঈদ উপলক্ষ্যে খামারি ও বেপারিরা অসংখ্য ছোট-বড় পশু হাটে এনেছে। ভালো দামও পাওয়ার আশা তাদের। তবে সরকারি প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী স্বাস্থ্যবিধি মেনে দুজনের বেশি মানুষ একসঙ্গে হাটে প্রবেশ করতে পারবে না-এমন বিধি মানুষকে মানাতে কষ্টকর বলে মনে করেন অনেকে।

সরেজমিন জানা গেছে, পুরান ঢাকায় ঈদুল আজহা উপলক্ষ্যে তিনটি গরুর হাট ইজারা দিয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ডিএসসিসি। পোস্তগোলা বেড়ি বাধের হাটে আসা খামারি আলমগীর হোসেন এ প্রতিবেদককে বলেন, পিজিয়ান জাতের ১২টি ষাঁড় এক বছর ধরে লালন-পালন করেছি। প্রতিটি গরুর পেছনে দেড় লাখ টাকা খরচ হয়েছে। এখন ভালো দাম পেলে কিছু লাভ হবে। এখনো বেচাকেনা শুরু না হওয়ায় বাজারের আবহাওয়া বোঝা যাচ্ছে না। তবে কাঙ্ক্ষিত দাম না পেলে গরু বিক্রি করবেন না বলে জানান তিনি।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম