রাজশাহীজুড়ে তোলপাড়

বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল নিয়ে কাটাখালীর মেয়রের কটূক্তি

 তানজিমুল হক, রাজশাহী 
২৪ নভেম্বর ২০২১, ১২:০০ এএম  |  প্রিন্ট সংস্করণ

গাজীপুরের মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের রেশ কাটতে না কাটতেই এবার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল স্থাপনকে কেন্দ্র করে রাজশাহীর কাটাখালী পৌর মেয়র ও আওয়ামী লীগ নেতা আব্বাস আলী কটূক্তি করেছেন। রোববার রাতে আব্বাসের ফাঁস হওয়া অডিও ক্লিপ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। এ নিয়ে রাজশাহীর রাজনৈতিক মহলে তোলপাড় শুরু হয়েছে। এর প্রতিবাদে মুক্তিযোদ্ধাসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে।

নৌকা প্রতীক নিয়ে কাটাখালীর পৌরসভা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক আব্বাস আলী দুবার মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন। রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সদস্যও তিনি। তার ফাঁস হওয়া অডিওতে শোনা যায়- ‘জীবন দিয়ে হলেও বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল বসাতে দেওয়া হবে না।’ এ ঘটনায় রাজশাহীজুড়ে আওয়ামী লীগ এবং অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মী ও প্রগতিশীল মহলে ক্ষোভ এবং অসন্তোষ বিরাজ করছে। আওয়ামী লীগ থেকে মেয়র আব্বাসকে অবিলম্বে বহিষ্কার এবং মেয়র পদ থেকে অপসারণের দাবি উঠেছে। আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা বলেন, পারিবারিকভাবেই আব্বাস বিতর্কিত। এ ধরনের বক্তব্য দিয়ে তিনি চরম ধৃষ্টতা দেখিয়েছেন। বঙ্গবন্ধু ও অসাম্প্রদায়িক চেতনায় তিনি কুঠারাঘাত করেছেন।

তবে অডিওটি তার নয় বলে দাবি করে পুরো ঘটনা অস্বীকার করেছেন মেয়র আব্বাস আলী। তিনি বলেন, ‘ম্যুরাল করা যাবে না, ম্যুরাল করলে পাপ হবে, এ ধরনের কথা আমার সঙ্গে কারও হয়নি। আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হচ্ছে। পরিকল্পিতভাবে একটি মহল আমাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করছে।’

কাটাখালী পৌরসভা আওয়ামী লীগের এক নেতা জানান, কাটাখালীর শাহাপুরের বাক্কার হত্যা মামলার আসামি আব্বাস। এ মামলায় আব্বাস ও তার ভাই আসের আলী সাত থেকে আট বছর জেল খেটেছেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক লালন ভক্ত ড. একেএম শফিউল ইসলাম লিলন হত্যা মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি আব্বাসের আরেক ভাই আরিফুল ইসলাম ওরফে মানিক। রাজশাহী জেলা যুবদলের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক মানিক বর্তমানে রাজশাহী কারাগারে রয়েছেন। পুঠিয়া থেকে আগ্নেয়াস্ত্রসহ মানিকও গ্রেফতারও হয়েছিলেন। তার অন্য দুই ভাইও দুর্ধর্ষ প্রকৃতির।

মেয়র আব্বাসের অডিওটি ফাঁস হওয়ার পর আওয়ামী লীগ এবং অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষুুব্ধ প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা গেছে। মেয়র আব্বাসের বহিষ্কারের দাবিতে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের অসংখ্য পোস্ট ফেসবুকে লক্ষ্য করা গেছে। রাজশাহী মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি রকি কুমার ঘোষ ফেসবুকে আব্বাসকে উদ্দেশ করে লিখেছেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, দেশরত্ন জননেত্রী শেখ হাসিনা, এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন ভাইকে অপমানজনক মন্তব্য করে এখনও আওয়ামী লীগ করেন কীভাবে? আব্বাসের জনতার আদালতে বিচার হওয়া উচিত। মুখে মিষ্টি কথা আর অন্তরে বিষ, এদের জন্য আওয়ামী লীগের আজ এই অবস্থা। পরিবারের খোঁজ নেন, তাহলেই আসল চরিত্র বেরিয়ে আসবে এই আব্বাসের। ... কত বড় বেইমান। মাননীয় নেত্রী, এরকম অসংখ্য আব্বাস আওয়ামী লীগে বিদ্যমান। অভিযান শুরু করুন।’ রাজশাহী মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের দপ্তর সম্পাদক অরবিন্দ দত্ত ফেসবুক আইডিতে লেখেন, আব্বাস আলীর বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কার, মেয়র পদ থেকে দ্রুত অপসারণ এবং আইন অনুযায়ী দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। বঙ্গবন্ধু ও মুজিব আদর্শের ক্ষেত্রে কোনো আপস চলবে না।’

রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অনিল কুমার সরকার বলেন, বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কেউ কটূক্তি করলে তার আওয়ামী লীগ করার অধিকার থাকে না। বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল নিয়ে কাটাখালীর মেয়র আব্বাস কোনো কটূক্তি করে থাকলে তার বিরুদ্ধে দলীয় ও আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

যুগান্তর ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন