ঢাবি ১৮ হলে ৩৩০ পদপ্রত্যাশী
এত পদপ্রত্যাশী আগে দেখেনি ছাত্রলীগ
সম্মিলিত হল সম্মেলন আজ * দশ বছরের ব্যবধানে প্রার্থী সংখ্যা বেড়েছে তিনগুণ
মাহাদী হাসান
প্রকাশ: ২৯ জানুয়ারি ২০২২, ০৬:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
দীর্ঘ ৫ বছর পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ছাত্রলীগের হল সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে আজ। ১৮টি আবাসিক হলে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের ৩৬টি পদের বিপরীতে পদপ্রত্যাশীর ৩৩০ জনেরও বেশি। যা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের ইতিহাসে সর্বোচ্চ সংখ্যক প্রত্যাশীর ইতিহাস ছুঁয়েছে। অনেকে মনে করছেন সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক হলে আবাসিক হলের নিয়ন্ত্রণ পাওয়া, প্রটোকল পাওয়ার পাশাপাশি কেন্দ্রীয় ও ঢাবি ছাত্রলীগের কমিটিতে পদ পাওয়ার পথ সহজ করতে বেড়েছে পদপ্রত্যাশীর সংখ্যা।
আবিদ আল হাসান এবং মোতাহার হোসেন প্রিন্স ঢাবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক থাকাকালে ২০১৬ সালের ২৭ নভেম্বর সর্বশেষ হল সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। আর সম্মেলনের ১৬ দিন পর দেওয়া হয় হল কমিটি। আবিদ আল হাসান এবং মোতাহার হোসেন প্রিন্সের দায়িত্বের মেয়াদ শেষে ২০১৮ সালের ২৯ এপ্রিলে অনুষ্ঠিত হয় ঢাবি শাখা ছাত্রলীগের সম্মেলন।
এ সম্মেলনের মাধ্যমে একই বছরের ৩১ জুলাই সনজিত চন্দ্র দাস সভাপতি ও সাদ্দাম হোসেন হন সাধারণ সম্পাদক। দায়িত্বের রদবদল হলেও পাঁচ বছরেও আলোর মুখ দেখেনি হল সম্মেলন। সর্বশেষ ১৬ জানুয়ারি রাতে ঘোষণা করা হয় বহুল আকাঙ্ক্ষিত হল সম্মেলনের তারিখ। আর হল সম্মেলনের তারিখ ঘোষণার আগেই গত বছরের ২৭ নভেম্বর থেকে পদপ্রত্যাশীদের জীবনবৃত্তান্ত আহ্বান করা হয়। আর এতে প্রায় ৩৩০ জনেরও বেশি পদপ্রত্যাশী জীবনবৃত্তান্ত জমা দেন।
১০ বছরের ব্যবধানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোতে পদপ্রত্যাশীদের সংখ্যা তিনগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে বলে জানান ছাত্রলীগ নেতারা। তারা বলেন, ১০ বছর আগে একটি হলে ৫-৬ জনের বেশি পদপ্রত্যাশী খুঁজে পাওয়া যেত না। এখন হলে পদপ্রত্যাশী বৃদ্ধির অন্যতম কারণ হচ্ছে-সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক হলে আবাসিক হলগুলোর নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হয়, কেউ যদি হলের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক নাও হতে পারেন তাহলে তিনি সহজে ঢাবি ছাত্রলীগ বা কেন্দ্রীয় কমিটিতে পদ পান। তবে অনেকে মনে করছেন শিক্ষার্থীদের মাঝে ছাত্রলীগের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পাওয়ায় হলের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক হতে চাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা।
তবে ছাত্রী হলগুলোতে ভিন্ন চিত্র দেখ গেছে, এখানে দুই পদের বিপরীতে পদপ্রত্যাশীর সংখ্যা ছাত্রদের হলের তিন ভাগের এক ভাগ অর্থাৎ ৫-৬ জন। কবি জসীমউদ্দীন হল শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সৈয়দ আরিফ হোসাইন যুগান্তরকে বলেন, মেহেদী মোল্লা ও ওমর শরীফ ঢাবি ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক থাকাকালীন জসীমউদ্দীন হলে পদপ্রত্যাশী সংখ্যা ছিল ৬-৭ জন এরপর আবিদ-আল-হাসান ও মোতাহার হোসেন প্রিন্সের সময় এটা দাঁড়ায় ১৪-১৫ জনে। আর এবার এ সংখ্যা প্রায় ২৭ এ।
কেন পদপ্রত্যাশীদের সংখ্যা বাড়ছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, হলে পদপ্রত্যাশী হলে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক হওয়ার সম্ভাবনা তো থাকেই। আর সেটা না হলে তাদের ঢাবি ও কেন্দ্রীয় কমিটিতে পদায়ন করা হয়। অর্থাৎ তিনি কোনো না কোনো পদ পাচ্ছেন।
এক ছাত্রলীগ নেতা বলেন, হলের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক হলে বড় ধরনের প্রটোকল পাওয়া যায়। একই সঙ্গে আবাসিক হলে সিটও তাদের নিয়ন্ত্রণে থাকে। অধিকন্তু হলের দোকান ও ক্যান্টিন নিয়ন্ত্রণ, কর্মচারীসহ বিভিন্ন নিয়োগের সময় তাদের মোটা অঙ্কের টাকা পাওয়ার সম্ভাবনা থাকায় এসব সুযোগ-সুবিধার জন্যই পদপ্রত্যাশীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
সলিমুল্লাহ মুসলিম (এসএম) হলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের মুক্তিযুদ্ধ ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক মেহেদী হাসান তাপস যুগান্তরকে বলেন, এসএম হলে ১০ বছরের ব্যবধানে প্রায় তিনগুণ পদপ্রত্যাশীর সংখ্যা বেড়েছে। ছাত্রলীগ বিভিন্ন শিক্ষার্থীবান্ধব কর্মসূচির কারণেই এ পদপ্রত্যাশীর সংখ্যা বাড়ছে বলে আমি মনে করি।
পদপ্রত্যাশীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার বিষয়টি ইতিবাচকভাবে দেখছেন পদপ্রত্যাশীরাও। তারা মনে করেন, যত বেশি পদপ্রত্যাশী হবে তত ভালো নেতৃত্ব বাছাইয়ের সুযোগ পাবেন শীর্ষ নেতারা।
সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের সভাপতি পদপ্রত্যাশী খান মিলন হোসাইন নীরব যুগান্তরকে বলেন, ছাত্রলীগ মেধাবীদের সংগঠন আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যেহেতু মেধাবীরাই পড়াশোনা করে তাই পদপ্রত্যাশীদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে সেটাই স্বাভাবিক। আমরা এটাকে স্বাগত জানাই।
বিজয় একাত্তর হলের আরেক পদপ্রত্যাশী তারেক রহমান এলিট যুগান্তরকে বলেন, ছাত্রলীগ ঢাবি তথা উপমহাদেশের সবচাইতে বড় সংগঠন তাই সেখানে একটি পদ পাওয়া মানে রাজনৈতিক জীবনের একটি বড় অর্জন। তবে অনেক সময় দুঃখ হয় কারণ রাজনীতিতে দীর্ঘ সময় নিষ্ক্রিয় থাকার পর কমিটি দেওয়ার সময় নিজেকে পদপ্রত্যাশী দাবি করেন। তবে আমরা আশাবাদী যোগ্যরই নেতৃত্বে আসবেন।
সম্মিলিত হল সম্মেলন আজ : দীর্ঘ পাঁচ বছর পর আজ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ঢাবি ছাত্রলীগের সম্মিলিত হল সম্মেলন। করোনা সংক্রমণের কারণে টিএসসির ভেতরের মাঠে সীমিত পরিসরে এ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে। এতে প্রধান অতিথি থাকবেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। বিশেষ অতিথি থাকবেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, আওমী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক।
শনিবার বেলা ১১টায় হল সম্মেলন উপলক্ষ্যে ঢাবির মধুর ক্যান্টিনে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন হল সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক ও ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বরিকুল ইসলাম বাঁধন, ঢাবি ছাত্রলীগ সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস, সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেনসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মী ও পদপ্রত্যাশীরা।
লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস। তিনি বলেন, নেতৃত্ব নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্টিভঙ্গিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হবে। বিশেষ করে একুশ শতকের এ পর্যায়ে ‘নিউ নরমাল রিয়েলিটি’কে বিবেচনায় নিয়ে রূপকল্প-২০৪১ বাস্তবায়নের উপযোগী মানবসম্পদ গড়তে নেতৃত্ব দেওয়ার সক্ষমতাসম্পন্ন কর্মীদের দায়িত্ব দেওয়া হবে।
