Logo
Logo
×

শেষ পাতা

পর্যবেক্ষক সংস্থার সঙ্গে ইসির সংলাপে সিইসি

অস্বচ্ছের চেষ্টা হলে নির্বাচন ‘ব্ল্যাক আউট’

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ০৯ জুন ২০২২, ০২:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

অস্বচ্ছের চেষ্টা হলে নির্বাচন ‘ব্ল্যাক আউট’

জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে অস্বচ্ছ করার জন্য যদি ইন্টারনেট ব্ল্যাক আউট করা হয়, তাহলে সেই নির্বাচনই ব্ল্যাক আউট (বন্ধ) করে দেওয়া হতে পারে-এমন মন্তব্য করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল।

তিনি বলেছেন, ‘নির্বাচনকে অস্বচ্ছ করার জন্যই যদি কোনো ব্ল্যাক আউট করা হয়, তাহলে আমরা নির্বাচন ব্ল্যাক আউট করে দিতে পারি-এমন পদক্ষেপ হয়তো আমাদের নিতে হবে। আমরা হয়তো নির্বাচন ব্ল্যাক আউট করে দেব। আমরা স্পষ্ট করে বলছি, নির্বাচন স্বচ্ছ হতে হবে। নির্বাচন নিয়ে কূটকৌশল কেউ করতে পারবেন না। নির্বাচনকে আড়াল করার জন্য কেউ ব্ল্যাক আউট করলে নির্বাচন কমিশনের তরফ থেকে স্পষ্ট বক্তব্য থাকবে সেটা টলারেট করা হবে না। এটুকু সাহস আমার (সিইসি) ও আমার সহকর্মীদের (নির্বাচন কমিশনারদের) রয়েছে।’

বৃহস্পতিবার নির্বাচন ভবনে স্থানীয় পর্যবেক্ষকদের সঙ্গে সংলাপের একপর্যায়ে সিইসি এসব কথা বলেন। এ সংলাপে দেশের ৩২ নির্বাচন পর্যবেক্ষণকারী সংস্থার প্রতিনিধিদের আমন্ত্রণ জানানো হয়। এতে অংশ নেন ২০ জন প্রতিনিধি।

সংলাপে একজন পর্যবেক্ষক গত নির্বাচনে ইন্টারনেট বন্ধ বা গতি কমিয়ে রাখায় অনিয়মের তথ্য দেওয়া যায় না বলে অভিযোগ করেন। তার ওই বক্তব্যের রেশ ধরে সিইসি এসব কথা বলেন। এছাড়া সিইসি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন, নির্বাচনের সময়ে ইসিকে সরকারের সহায়তা, ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনসহ (ইভিএম) বিভিন্ন বিষয়ে বক্তব্য দেন।

এতে নির্বাচনের সময়ে ইসিকে রাজনৈতিক সরকারের সহযোগিতা বিষয়ে কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘কমিশন বিশ্বাস করে, সরকার এবং দলের মধ্যে পার্থক্য আছে। সেই বিভাজনকে ভুলে গেলে চলবে না। কমিশনকে সাহায্য করবে সরকার, দল নয়।’ নির্বাচনে অংশগ্রহণমূলক না হলে গ্রহণযোগ্যতা অনেক কমে বলে জানান সিইসি। তিনি বলেন, ‘নির্বাচন যদি অংশগ্রহণমূলক না হয়, তাহলে প্রকৃত অর্থে সেটা নির্বাচন হয় না। ২০০ বা ২৫০ আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলে হয়তো সরকার গঠন হবে। কিন্তু সেটার গ্রহণযোগ্যতা অনেক কমে যাবে।’ তিনি বলেন, ‘নির্বাচনে প্রতিযোগিতা প্রত্যাশিত, অংশগ্রহণ প্রত্যাশিত। বিরোধী দলগুলোকে সাহস নিয়ে নির্বাচনে এগিয়ে আসতে হবে। দৃঢ়ভাবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হবে।’

সংলাপে আইনের শাসনের পরিবর্তে নৈতিকতার শাসন দরকার-একজন পর্যবেক্ষকের এমন মন্তব্যের রেশ ধরে সিইসি বলেন, ‘নৈতিক দিক থেকে আমরা অনেক পিছিয়ে গেছি। আমাদের যে সংস্কৃতি-কৃষ্টি গঠিত হয়, এটা গঠিত হয় নৈতিক মূল্যবোধ দিয়ে। এই জিনিসটা আমাদের চর্চা করতে হবে। নির্বাচন সংক্রান্ত নয়, সবকিছুর সততা-অসততা বিভিন্ন বিষয়ে আমাদের যে নৈতিক মূল্যবোধ ক্ষয়ে গেছে, সেটাকে পুনরুদ্ধার করতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘অনেকে বলেছেন, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন দলীয় প্রতীকে হওয়ার কারণে সামাজিক সমস্যা হচ্ছে। আমি নিজেও দেখেছি, ওখানে (গ্রামে) নতুন এক ধরনের সহিংস মূল্যবোধ তৈরি হয়েছে। সেখান থেকে আমাদের উঠে আসা উচিত।’

নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার প্রসঙ্গে সিইসি বলেন, ‘ইভিএম আমাদের জন্য খুবই সুবিধাজনক একটি জিনিস। ভোটকেন্দ্রে যে সহিংসতা হয়, তা নিয়ন্ত্রণ করা অনেক সময় কঠিন হয়ে পড়ে। ইভিএম মেশিন আমি এতদিন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে নিজেও বুঝেছি, যদি এটার সপক্ষে সমর্থন পাই, এর নেতিবাচক দিকগুলো সম্পর্কে সন্দেহ দূর করতে পারি, তাহলে এটার একটা যুক্তিসঙ্গত ব্যবহার করেও নির্বাচন কেন্দ্রগুলোকে সহিংসতা থেকে কিছুটা অহিংস করে তুলতে পারি। কারণ ইভিএমে আমি (একজন) ১০টি ভোট দিতে পারব না। আরেকজন ৫০টি ব্যালট ছিনতাই করে ভোট দিতে পারবে না। কারণ ভোট দেওয়ার আগে ভোটার আইডেন্টিফাইড হতে হবে, তার বায়োমেট্রিক্স মিলতে হবে।’

সংলাপে পর্যবেক্ষক সংস্থার প্রতিনিধিরা তাদের মতামত তুলে ধরেন। মুভ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান সাইফুল হক নির্বাচনের সময় নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে ইন্টারনেট বন্ধ না করার পরামর্শ দেন।

তিনি বলেন, বিগত কয়েক নির্বাচনে ভোট না দিতে পারার কারণে নতুন ভোটারদের মধ্যে অনীহা ও ভীতি জন্মেছে। তাই নির্বাচনে ভোটারদের আগ্রহী করতে দেশব্যাপী ভোটার উদ্বুদ্ধকরণ কর্মসূচি করা যেতে পারে।

নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণ না থাকলে বিদেশি অনেক পর্যবেক্ষক সংস্থা ভোট পর্যবেক্ষণে আসে না বলে জানান নির্বাচন বিশেষজ্ঞ আব্দুল আলীম। ইভিএম নিয়ে পুরো বিশ্বে বিতর্ক আছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘প্রার্থীদের সামনে ইভিএম কাস্টোমাইজেশন দেখানোর উদ্যোগ বেশ ভালো। সিকিউরিটি বিশ্লেষণ করে দেখা যেতে পারে। পাশাপাশি সোর্স কোড উন্মুক্ত করার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন তিনি। বাংলাদেশের রাজনীতিতে বিভক্তি রয়েছে মন্তব্য করে ব্রতীর নির্বাহী পরিচালক শারমিন মুরশিদ বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনে আপনাদের (ইসি) কাজ প্রচণ্ড কঠিন। ভোটের মাঠে সহিংসতা ও অনিয়মের কারণে ভোট অংশগ্রহণমূলক হয় না। সহিংসতা কমাতে পারলে ভোটে নারীর অংশগ্রহণ বাড়তে পারে। কোস্ট ট্রাস্টের নির্বাহী পরিচালক রেজাউল করীম চৌধুরী বলেন, নির্বাচন কমিশন যত চেষ্টা করুক, নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না। যতক্ষণ পর্যন্ত সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলো সুষ্ঠু নির্বাচনের ইচ্ছা প্রকাশ না করবে। জানিপপ চেয়ারম্যান অধ্যাপক নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ বলেন, পর্যবেক্ষকদের মান বাড়াতে হবে। তাদের মান আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন।

বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের সাইফুল ইসলাম দিলদার নির্বাচন কমিশনকে জনগণের বিশ্বাস অর্জন করার পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, আমরা দেখেছি, ভোটাররা ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে পারে না। ভোটাররা ছলনার শিকার হন। রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের ভোটাধিকার সম্পর্কে সচেতন করার পরামর্শ দেন। নির্বাচন কমিশন আইন কঠোর করার প্রতি গুরুত্বারোপ করেন তিনি। ইভিএমে ত্রুটি আছে উল্লেখ করে মানবাধিকার ও সমাজ উন্নয়ন সংস্থার চেয়ারম্যান গোলাম রহমান ভূঁইয়া বলেন, ইভিএমের ভিতরে জিনের উপস্থিতি আছে। সেই জিন দূর করতে হবে। তিনি বলেন, নির্বাচনে বিএনপিসহ রাজনৈতিক দলগুলোকে সম্পৃক্ত করতে হবে। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় যে নির্বাচন হয় তা যেন প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রূপ নেয় সেদিকে নজর রাখার পরামর্শ দেন।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম