বিজয়ের ৫১ বছর
চারিদিকে উড়তে থাকে বাঙালির বিজয় নিশান
সাংস্কৃতিক প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১২ ডিসেম্বর ২০২২, ০৬:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
একাত্তরের ডিসেম্বরে মিত্রবাহিনীর সহযোগিতায় বীর মুক্তিযোদ্ধারা মরণপণ লড়াই করে বিজয়ের বেশে ঢাকার দিকে এগোতে থাকে। চারিদিকে উড়তে থাকে বাঙালির বিজয় নিশান। বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় শত শত পাকিস্তানি সেনা আত্মসমর্পণ করে। শুধু ময়নামতীতেই আত্মসমর্পণ করে ১ হাজার ১৩৪ জন। আর সৈয়দপুরে আত্মসমর্পণ করে ৪৮ পাঞ্জাব রেজিমেন্টের অধিনায়কসহ ১০৭ পাকিস্তানি সেনা। খুলনা, বগুড়া ও চট্টগ্রামে হানাদারদের সঙ্গে মুক্তিবাহিনী ও স্থানীয় মানুষের অবিরাম যুদ্ধ চলে। চারদিকে তখন বিজয়ের চরম উত্তেজনা।
১৯৭১ সালের ১৩ ডিসেম্বর ছিল সোমবার। এদিন পূর্ব ও উত্তরদিক থেকে মিত্রবাহিনী ঢাকার প্রায় ১৫ মাইলের মধ্যে পৌঁছে যায়। ৫৭ নম্বর ডিভিশনের দুটি ব্রিগেড এগিয়ে আসে পূর্বদিক থেকে। উত্তরদিক থেকে আসে জেনারেল গন্ধর্ব নাগরার ব্রিগেড এবং টাঙ্গাইলে নামা ছত্রীসেনারা। পশ্চিমে ৪ নম্বর ডিভিশনও মধুমতী পার হয়ে পৌঁছে যায় পদ্মার তীরে। রাত ৯টায় মেজর জেনারেল নাগরা টাঙ্গাইল আসেন। ব্রিগেডিয়ার ক্লের ও ব্রিগেডিয়ার সান সিং সন্ধ্যা থেকে টাঙ্গাইলে অবস্থান করছিলেন। রাত সাড়ে ৯টায় টাঙ্গাইল ওয়াপদা রেস্ট হাউজে তারা পরবর্তী যুদ্ধ পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনায় বসেন।
লে. কর্নেল শফিউল্লাহর ‘এস’ ফোর্স ঢাকার উদ্দেশে রওয়ানা হয়ে এদিন ঢাকার উপকণ্ঠে ডেমরা পৌঁছায়। সৈয়দপুরে এদিন আত্মসমর্পণ করে ৪৮ পাঞ্জাব রেজিমেন্টের অধিনায়কসহ ১০৭ পাকসেনা। এদিন যৌথবাহিনীর অগ্রবর্তী সেনাদল শীতলক্ষ্যা ও বালু নদী অতিক্রম করে ঢাকার খুব কাছে পৌঁছে যায়। বালু নদীর পূর্বদিকে পাকিস্তানি বাহিনী শক্ত প্রতিরক্ষাব্যবস্থা গড়ে তোলে। বাসাবো ও খিলগাঁও এলাকার চারদিকে আগে থেকেই পাকিস্তানি বাহিনী আক্রমণ প্রতিহত করার জন্য অবস্থান করছিল।
বগুড়ায় মুক্তিবাহিনীর গেরিলা দল মহিমাগঞ্জে দুলুর নেতৃত্বে এবং সিহিপুরের বাবলু, খালেক, হামিদ, খলিল, নুরুল, শুকু, ফিনু, জগলু, হাল্লু, লিন্টুসহ আরও অনেকের সহযোগিতায় সুকানপুকুর রেল স্টেশনের কাছে সিহিপুরে পাকিস্তানি সেনাবাহীর একটি স্পেশাল ট্রেন ডিনামাইটের সাহায্যে সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দেয়। এতে প্রায় দেড়শ পাকিস্তানি সেনা নিহত হয়। কুমিল্লায় মুক্তিবাহিনী চাওড়া এলাকায় পাকিস্তানি সেনাদের ওপর আক্রমণ চালায়। এ সময় ২ পাকিস্তানি সেনা নিহত এবং তিনজন আহত হয়।
৮ নম্বর সেক্টরে মুক্তিবাহিনী একদল পাকিস্তানি সেনাকে রাজাপুরে অ্যাম্বুশ করে। এতে পাকিস্তানি বাহিনীর চার সেনা নিহত ও দুজন আহত হয়। মুক্তিবাহিনী কুষ্টিয়ার প্রতাপপুরে পাকিস্তানি সেনাদের অ্যাম্বুশ করে। এতে পাকিস্তানি বাহিনীর ১১ সেনা নিহত ও চারজন আহত হয়। ২ নম্বর সেক্টরে সুবেদার মেজর লুৎফর রহমানের নেতৃত্বে এক প্লাটুন যোদ্ধা লক্ষ্মীপুর রাজাকার ঘাঁটি আক্রমণ করেন। আকস্মিক এ আক্রমণে অনেক রাজাকার হতাহত হয়। এ সময় এলাকার জনসাধারণ মুক্তিযোদ্ধাদের সাহায্য করে।
৬ নম্বর সেক্টরে মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় সহায়ক সেনাদের সম্মিলিত বাহিনী ভুরুঙ্গামারী পাকিস্তানি সেনা অবস্থানের ওপর তীব্র আক্রমণ চালায়। এ যুদ্ধে বহু পাকিস্তানি সেনা নিহত ও তিনজন বন্দি হয় এবং ভুরুঙ্গামারী থানা মুক্তিবাহিনীর দখলে আসে। এ অভিযানে ভারতীয় বাহিনীর নেতৃত্ব দেন ব্রিগেডিয়ার যোশী এবং মুক্তিযোদ্ধাদের পরিচালনা করেন সেক্টর কমান্ডার কেএম বাশার ও সাব-সেক্টর কমান্ডার মেজর নওয়াজেশ। রাতে যৌথ বাহিনী চারদিক থেকে বগুড়া শহর ঘিরে ফেলে এবং মধ্যরাতে তিনটি ব্যাটালিয়ন উত্তর, দক্ষিণ ও পূর্ব-উত্তরদিক থেকে শত্রুর ওপর আঘাত হানে।
এই দিনে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী উইলিয়াম রজার্স আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে শিগগিরই যুদ্ধ বেধে যেতে পারে। তিনি ঘোষণা করেন, যুক্তরাষ্ট্র এ যুদ্ধ চায় না, যুদ্ধ বাধলে সে তাতে জড়িয়ে পড়বে না। তিনি এমন কথা বললেও একই দিন বঙ্গোপসাগরের দিকে যাত্রা শুরু করে যুক্তরাষ্ট্রের সপ্তম নৌবহর।
