ফোরাম ফর বাংলাদেশ স্টাডিজ
পঞ্চদশ সংশোধনীর পরিণতি হলো দুটি একতরফা নির্বাচন
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২৯ জানুয়ারি ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করে দিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের রাজনৈতিক বন্দোবস্ত ভেঙে দেওয়া হয়েছে। এতে দেশে গণতন্ত্র ও সুশাসনের ঘাটতি তৈরি হয়েছে। এ সংশোধনীর মধ্য দিয়ে ক্ষমতাসীনরা আইনকে অস্ত্রে পরিণত করেছে। শনিবার ‘ফোরাম ফর বাংলাদেশ স্টাডিজ’ আয়োজিত ‘সংবিধান সংশোধনের (অপ) রাজনীতি’ শীর্ষক ওয়েবিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন।
ওয়েবিনারে বক্তারা আরও বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিলের রায় দেশের ৫০ বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি অশান্তি সৃষ্টিকারী রায়। এমন পরিস্থিতিতে বর্তমান রাজনৈতিক সংকট থেকে উত্তরণের জন্য সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে শান্তিপূর্ণভাবে (বিজয়ীর কাছে) ক্ষমতা হস্তান্তরের জন্য নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত প্রয়োজন। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন কেন্দ্র করে সৃষ্ট বর্তমান সংকট যতটা না সাংবিধানিক, তার চেয়ে বেশি রাজনৈতিক।
সাংবাদিক মনির হায়দারের সঞ্চালনায় ওয়েবিনারে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার প্রবন্ধ উপস্থাপনা করেন। আলোচক ছিলেন সুপ্রিমকোর্টের সিনিয়র আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক, অস্ট্রেলিয়ার চার্লস ডারউইন বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র আইন কর্মকর্তা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. রিদওয়ানুল হক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক এম শাহীদুজ্জামান, কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ফেলো ব্যারিস্টার আদিবা আজিজ খান প্রমুখ।
ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, পঞ্চদশ সংশোধনী পাশের বিধ্বসী পরিণতি হলো ২০১৪ ও ২০১৮ সালের অনুষ্ঠিত দুটি ব্যর্থ ও একতরফা নির্বাচন। এতে দেশে গণতন্ত্র ও সুশাসনের ঘাটতি তৈরি হয়েছে। এর মাধ্যমে ক্ষমতাসীনরা আইনকে অস্ত্রে পরিণত করেছে। পঞ্চদশ সংশোধনী পাশের প্রক্রিয়া ও গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। এটি পাশ করার আগে গণভোটের আয়োজন না করায় জনগণের অভিপ্রায় প্রতিফলিত হয়নি। এতে সংবিধান লঙ্ঘন হয়েছে। এছাড়া সংসদীয় বিশেষ কমিটি এবং আমন্ত্রিত ১০৪ জন বিশেষজ্ঞ অতিথিদের প্রায় সবাই তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা রেখেই সংবিধান সংশোধনের সুপারিশ করেছিলেন। এসব উপেক্ষা করে পঞ্চদশ সংশোধনী সংসদে পাশ করা হয়।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থাকে অবৈধ উল্লেখ করে এবং পরবর্তী দুই মেয়াদের জন্য সংসদ নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে হতে পারে-রায়ের এমন কথাকে সম্পূর্ণ অযৌক্তিক বলে মন্তব্য করেন ড. শাহদীন মালিক। তিনি বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিলের রায় বাংলাদেশের ৫০ বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি অশান্তি সৃষ্টিকারী রায়। একই সঙ্গে এটি সবচেয়ে বেশি ক্ষতিকর রায়ও বটে। তিন মাসের জন্য বৃহত্তর স্বার্থে নির্বাচনকালে কিছু অনির্বাচিত ব্যক্তি থাকলে মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যায় না। মূলত দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন আয়োজন করে ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্যই এ সংশোধনী আনা হয়েছে।
অধ্যাপক ড. রিদওয়ানুল হক বলেন, যারা তত্ত্বাবধায়ক সরকার তুলে দেওয়ার পক্ষে মত দিয়েছেন সেসব বিচারপতিকে পুরস্কৃত করা হয়েছে। রাষ্ট্র ও জনগণের স্বার্থেই এ অবস্থা থেকে উত্তরণ দরকার। আদালত অতি উৎসাহী হয়ে রাজনৈতিক বিষয়ে হস্তক্ষেপ করেছেন মন্তব্য করে অধ্যাপক এম শাহীদুজ্জামান বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে সবাই একমত। কিন্তু বর্তমান সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়।
বর্তমান সংকট যতটা না সাংবিধানিক, তার চেয়ে বেশি রাজনৈতিক-এমন মন্তব্য করে ওয়েবিনারে যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির রাজনীতি ও সরকার বিভাগের ডিস্টিংগুইশড প্রফেসর আলী রীয়াজ বলেন, বর্তমান বাস্তবতায় দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতি ঠিক করতে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে মেরামত করা প্রয়োজন। এজন্য সবার অংশগ্রহণের জায়গা নিশ্চিত করতে হবে।
