মহান ভাষার মাস
বইমেলাকে এগিয়ে নিতে
খান মাহবুব
প্রকাশ: ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
প্রায় বাংলাদেশের সমবয়সি অমর একুশের বইমেলা। ১৯৭২ সালে জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের আয়োজনে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে আন্তর্জাতিক গ্রন্থমেলার অঙ্কুরে ছিল আজকের অমর একুশের বইমেলার সূচনা।
এর ধারাবাহিকতায় ১৯৮৪ সালে বাংলা একাডেমি মেলার উপযোগী মাঠ প্রস্তুত করে নির্দিষ্ট নিয়মাবলির আলোকে কাঠামোবদ্ধভাবে বইমেলার আয়োজন শুরু করে। বইমেলার জন্য বাংলা একাডেমি কতটা উপযুক্ত, সেই বির্তকের চেয়ে বড় বিষয়-বইমেলার ধারাবাহিকতা রক্ষা করে বাংলা একাডেমি বইমেলার আয়োজন করছে এখনো।
একুশের বইমেলার আয়োজনের বিভিন্ন বিষয়ে অংশীজনসহ অনেকের বিবিধ মত আছে। সংশ্লিষ্ট অনেক পক্ষের নিজেদের মহান করার প্রবণতার পাশে আছে আয়োজনকে অধিকতর প্রিয় করতে নানা মাত্রিক পরামর্শ। আছে দ্বৈরথ। সবকিছু ছাপিয়ে বইমেলায় এত বই প্রকাশ, এত পাঠকসমাবেশ-এসব সুযোগকে কাজে লাগিয়ে এগিয়ে নেওয়ার বড় সুযোগ এখনো রয়ে গেছে।
গত তিন বছরে বিশ্বমারি করোনা সমাজব্যবস্থার খোলনলচে পালটে দিয়েছে। সঙ্গনিরোধ জীবন, জীবিকার শঙ্কা-সব মিলিয়ে দেশ এক কঠিন সময় পার করেছে। প্রকাশনা শিল্প মহামরিতে ক্ষতির তালিকার চূড়ার দিকে। যদি সত্যই সাংস্কৃতিক জাগরণ চাই, মানুষের মনোভুবনের উন্নয়ন চাই, সমাজের সবাইকে অগ্রগতির মিছিলে শামিল করতে চাই তবে বইমেলাসংশ্লিষ্ট সবার ভাবনা ও পরিকল্পনার একটা সমন্বয় প্রয়োজন। এখানে নিজস্ব ধ্যানধারণ, বিশ্বাস ও চিন্তায় অবিচল না থেকে বহুমত ও পথের সম্মিলন প্রয়োজন।
বাস্তবতার নিরিখে বইমেলাকে নিয়ে ভাবতে হবে চতুর্থ শিল্পবিপ্লব, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসহ বর্তমান সমাজ বাস্তবতায়। প্রতিবছর বইমেলায় ৪-৫ হাজার বই প্রকাশে আমাদের একটা ভ্রান্ত অহমিকাবোধ আছে। কিন্তু গুণ বিচারে সেসব বই কতটা মানোত্তীর্ণ, সেই প্রশ্ন এড়িয়ে যাওয়ার উপায় নেই। আবার একুশের বইমেলায় কেন প্রতিবেশী পশ্চিমবঙ্গ ও ত্রিপুরার প্রকাশকরা অংশ নেন না, সেই প্রশ্নও আছে অনেকের মাঝে। বইমেলার আয়োজন বাংলা একাডেমি ব্যাতীত অন্য সংস্থার বিশেষত প্রকাশনা সংঘের হাতে দিতে হবে-এমন একটা দাবিও শোনা যায়। কিন্তু এর জন্য সার্বিক প্রেক্ষাপট ও প্রস্তুতি কি আছে? কিংবা দায়িত্ব ছেড়ে দেওয়ার বা দায়িত্ব গ্রহণের আন্তরিক প্রচেষ্টাই বা কতটুকু?
প্রকাশকদের উৎপাদিত বইয়ের একটা বড় অংশ মেলার সময়ে বিক্রি হয়। বইমেলা বিশ্বের বাংলা ভাষী মানুষের প্রাণের উৎসব। বইমেলার মাঠকে শুধু বিকিকিনি আবদ্ধ না রেখে সাহিত্য-সংস্কৃতির মননশীলতার মিলনকেন্দ্র হিসাবে গড়ে তুলতে হবে।
লেখক-প্রকাশককে পেশাদার হয়ে ওঠার দীক্ষায় দীক্ষিত হতে হবে। লেখক-পাঠক-প্রকাশক সবার সার্বিক বোঝাপড়া ও হাত ধরে সমতালে এগিয়ে যাওয়ার সূচনা করতে হবে। এখানে নেতা বা নায়ক হওয়ার চেয়ে অংশীজন হওয়াই বড় কথা। আমরা যদি সে বিষয়টি আন্তরিকভাবে গ্রহণ করে এগোতে পারি তবে অবশ্যই বইমেলা শুধু সাহিত্য, সংস্কৃতি ও মানবিক সূচকের অগ্রগতি ঘটাবে না, জাতীয় অগ্রগতির দীপশিখা হয়ে উঠবে-এ আমার দৃঢ়বিশ্বাস। এ মেলায় আমার ভ্রমণগ্রন্থ ‘দেখতে দেখতে বহুদূরে’ প্রকাশ করেছে চন্দ্রাবতী একাডেমি।
অনুলিখন : শুচি সৈয়দ
