সরকার দেশে অশান্ত পরিবেশ সৃষ্টির চেষ্টা করছে: মির্জা ফখরুল
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১৪ মার্চ ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ফাইল ছবি
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, মানুষের ভোট ও মতপ্রকাশের অধিকার হরণকারী সরকার পরিকল্পিতভাবে দেশে অশান্ত পরিবেশ সৃষ্টির অপচেষ্টা করছে। বর্তমানে দেশের মানুষের জানমালের নিরাপত্তা নেই। যেখানেই সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হচ্ছে, সেখানেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং দলীয় সন্ত্রাসীদের লেলিয়ে দেওয়া হচ্ছে। সাধারণ মানুষের ওপরও গুলি চালাতে কুণ্ঠাবোধ করছে না আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
সোমবার গণমাধ্যমে পাঠানো প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে তিনি এ কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল অভিযোগ করেন, পঞ্চগড়ে বিনা উসকানিতে গুলি চালিয়ে মানুষ হত্যা করা হয়েছে। সেখানে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টি করে ফায়দা লুটে নেওয়ার চেষ্টা করছে সরকার। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সাধারণ শিক্ষার্থী ও নিরীহ মানুষের ওপর পুলিশ যেভাবে গুলি চালিয়েছে, তা সরকারের নিষ্ঠুরতার আরেক বহিঃপ্রকাশ। পুলিশের নির্বিচার গুলি ও হামলায় শত শিক্ষার্থী এবং সাধারণ মানুষ হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে। একদিকে গুম-খুন-লুটপাট ও নিপীড়ন চলছে, অন্যদিকে চলছে গোয়েবলসীয় কায়দায় অকথ্য মিথ্যাচার। ক্ষমতা হারানোর ভয়ে সরকারের লোকজন উন্মাদ হয়ে গেছে।
নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগ ৩০টির বেশি আসন পাবে না : ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি জানান, সোমবার সকালে জেলা বিএনপি আয়োজিত বর্ধিত সভার আগে ঠাকুরগাঁওয়ের পৈতৃক বাসভবন চত্বরে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, ‘নির্বাচনকালে নিরপেক্ষ সরকারে আওয়ামী লীগের আপত্তির একটাই কারণ, তারা জানে যদি নিরপেক্ষ সরকারের অধীন নির্বাচন হয়, তাদের কারও জামানত থাকবে না। ৩০টির বেশি আসনও তারা পাবে না।’
পঞ্চগড়ে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের ওপর হামলা প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এটা অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। এ ঘটনার কারণে দেশের ভাবমূর্তি কিছুটা ক্ষুণ্ন হয়েছে, পাশাপাশি সরকারের ভাবমূর্তি অনেক বেশি ক্ষুণ্ন হয়েছে। পঞ্চগড়ের ঘটনাটি সংঘটিত হয়েছে পূর্বপরিকল্পিতভাবে। দেশে এখন গণতন্ত্রের জন্য আন্দোলন শুরু হয়েছে। এ আন্দোলন যখন পুরোপুরিভাবে বিস্ফোরণের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, তখন সরকার পরিকল্পিতভাবে এ ধরনের সাম্প্রদায়িক ঘটনা ঘটিয়ে জনগণের দৃষ্টি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে চায়। বিএনপির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতে চায়। তা না হলে ঘটনার পরপরই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কীভাবে বলে ফেললেন, এটা বিএনপির কাজ?’
আহমদিয়া সম্প্রদায়ের ওপর হামলার ঘটনা কাজে লাগিয়ে সরকার বিএনপি নিধনে নেমেছে দাবি করে তিনি বলেন, ‘ঘটনার পর রেলপথমন্ত্রী আহমদিয়া সম্প্রদায়ের লোকজনের বাড়িতে যান। তিনি যাওয়ার পর সেখানে বিরূপ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। আহমদিয়া সম্প্রদায়ের লোকেরা বিক্ষুব্ধ হন। সে সময় তারা মন্ত্রীকে বলেন, আপনার আশপাশের যারা আছেন, তারা এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত। তারা সে সময় কয়েকজনের নামও বলেছেন। কিন্তু তাদের নামে মামলা হয়নি।’
মির্জা ফখরুল দাবি করেন, ‘এই সরকার গোয়েন্দা বাহিনীকে ব্যবহার করে বিএনপির বিরুদ্ধে যত রকম অপপ্রচার চালানো যায়, তা করে যাচ্ছে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে মিডিয়ার কয়েকটি সংস্থাও এমন অপপ্রচারের সঙ্গে সম্পৃক্ত। গণমাধ্যমের সবসময় নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করা উচিত। যদি নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন না করেন, তাহলে জনগণ কিন্তু তা মনে রাখেন। যখন সময় আসে, তখন কিন্তু সেগুলোর উপযুক্ত জবাব জনগণই দেন।’
এ সময় উপস্থিত ছিলেন জেলা বিএনপির সভাপতি তৈমুর রহমান, সহসভাপতি নুর করিম, ওবায়দুল্লাহ মাসুদ, আল মামুন, ঠাকুরগাঁও-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য জাহিদুর রহমান, জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক মাহবুব হোসেন প্রমুখ।
এরপর বিকালে ঠাকুরগাঁওয়ের বিএনপি কার্যালয়ে হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান কল্যাণ ফ্রন্টের আয়োজিত সদস্য সংগ্রহ অভিযান অনুষ্ঠানে যোগ দেন বিএনপি মহাসচিব। সেখানে তিনি বলেন, ‘সাধারণ আয়ের মানুষের আজ নাভিশ্বাস উঠেছে। চাল-ডাল-তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম আকাশ ছোঁয়া। ধনীরা আজ আরও ধনী হচ্ছে। তারা মালয়েশিয়া, কানাডাসহ বিদেশে টাকা পাচার করে বাড়ি তৈরি করছে। আর আমরা গরিবরা দেশের মাটি কামড়িয়ে দেশেই আছি।’
মির্জা ফখরুল তার এক ছাত্রের কথা স্মরণ করে বলেন, ‘আওয়ামী লীগের কাছে হিন্দুরা হচ্ছে বিয়ের পাগড়ির মতো। বিয়ের দিনে যেমন পাগড়ির দরকার হয়, বিয়ে শেষ হলে তা তুলে রাখা হয়। কিন্তু বিএনপি বোঝে না কে হিন্দু, কে মুসলিম আর কে খ্রিষ্টান? বিএনপি মানুষকে মর্যাদা দেয়।’
মনোরঞ্জন সিংয়ের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কমিটির মহাসচিব এসএন তরুণ দে, যুগ্ম মহাসচিব মিল্টন বৈদ্য, জেলা বিএনপির সভাপতি তৈমুর রহমান প্রমুখ।
