দেবিদ্বারে ছাত্রীকে শ্লীলতাহানি
শিক্ষক অবরুদ্ধ সংঘর্ষ, গুলি
দেবিদ্বার (কুমিল্লা) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৭ মার্চ ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
কুমিল্লার দেবিদ্বারে ছাত্রীকে শ্লীলতাহানির অভিযোগে ওই এলাকার একটি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে অবরুদ্ধ করে বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থীসহ স্থানীয়রা। এ সময় তার মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেওয়া হয়।
খবর পেয়ে শিক্ষকের লোকজন বিক্ষোভকারীদের ওপর হামলা চালালে উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে কয়েকজন আহত হন। এরপর শিক্ষককে উদ্ধারে পুলিশ মাশিকাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ে এলে তাদের সঙ্গে এলাকাবাসীর সংঘর্ষ হয়। এ সময় পাঁচ পুলিশসহ আহত হন অন্তত ৩২ জন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশের ছোড়া রাবার বুলেট অন্তত ১৫ জনের শরীরে বিদ্ধ হয়।
আহত ও গুলিবিদ্ধদের দেবিদ্বার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। বুধবার দুপুরে সংঘর্ষ শুরু হয়ে রাত ১০টা পর্যন্ত চলে। এ ঘটনায় রাতেই পৃথক দুটি মামলা হয়েছে। গ্রেফতার হয়েছে অন্তত ১০ জন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বুধবার সকাল ৯টার দিকে মাশিকাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দশম শ্রেণির এক ছাত্রীকে ডেকে নিয়ে তার শরীরের স্পর্শকাতর স্থানে হাত দেন। এরপর ১০টার দিকে আবার একটি শ্রেণিকক্ষে একই ঘটনা ঘটান ওই শিক্ষক। ঘটনার পর ছাত্রীর সহপাঠীরা তাকে নিয়ে বাড়ি গিয়ে পরিবারকে বিষয়টি জানান।
ইতোমধ্যে বিষয়টি জানাজানি হলে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসী ওই শিক্ষকের কার্যালয় ঘেরাও করেন। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সহযোগিতায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। বিক্ষুব্ধ জনতা বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ করতে থাকেন। এরই মধ্যে প্রধান শিক্ষকর লোকজন এসে ছাত্রদের ওপর হামলা চালায়।
এতে ৮-১০ জন শিক্ষার্থী আহত হন। তাদেরকে দেবিদ্বার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। ছাত্রদের ওপর হামলার পর পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। ছাত্র, অভিভাবক ও এলাকাবাসী শিক্ষকের শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ অব্যাহত রাখেন।
বিকালে একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে শিক্ষককে উদ্ধার ও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে। কিন্তু সেখানে পুলিশও অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। এরই মধ্যে সন্ধ্যা নেমে আসে। বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় স্কুল ক্যাম্পাসের বিদ্যুৎসংযোগ। এ সময় পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড, রাবার বুলেট ও শটগানের গুলি ছোড়ে। এতে ৫-৬ জন গুলিবিদ্ধ হন। তাদেরকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এক পর্যায় বিক্ষুব্ধ জনতা বিদ্যালয়ের দরজা-জানালা ভাঙচুর করে।
রাত পৌনে ৯টায় কুমিল্লার পুলিশ সুপার আব্দুল মান্নান ও দেবিদ্বার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ডেজী চক্রবর্তী আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিপুলসংখ্যক সদস্য নিয়ে প্রধান শিক্ষকসহ পুলিশ সদস্যদের উদ্ধার করেন। এরপর তাদের নিয়ে ফেরার পথে বিক্ষুব্ধ জনতা পুলিশকে ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। এ সময় ৩ পুলিশ সদস্যকে মারধর করে জনতা।
এক পুলিশ সদস্যকে আটক করে রাখেল রাত সাড়ে ৯টায় বিপুলসংখ্যক পুলিশ তাকে উদ্ধারে আবার অভিযান চালায়। এ সময় এলাকাবাসীর সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়। পুলিশের রাবার বুলেট ও শটগানের গুলি ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে।
এদিকে শ্লীলতাহানির ঘটনায় ভিকটিমের বাবা বাদী হয়ে দেবিদ্বার থানায় প্রধান শিক্ষককে আসামি করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেছেন। অপরদিকে পুলিশের ওপর হামলা, পুলিশের কাজে বাধাদানের ঘটনায় দেবিদ্বার থানার উপ-পরিদর্শক মুক্তার আহমেদ বাদী হয়ে ১০ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাতনামা ২১০ জনকে আসামি করে মামলা করেছেন।
ঘটনার পর ওই এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। বৃহস্পতিবার স্থানীয় মাশিকাড়া বাজারের দোকানপাট বন্ধ ছিল। ঘটনাস্থল মাশিকাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ে কোনো শিক্ষার্থী আসেনি।
এ ব্যাপারে দেবিদ্বার থানার অফিসার ইনচার্জ কমল কৃষ্ণ ধর জানান, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ৩ শতাধিক শটগানের গুলি ছোড়া হয়েছে। ভিকটিমের বাবা বাদী হয়ে মামলা করেছেন। আর পুলিশের কাজে বাধাদান এবং পুলিশের অন্ত্র ছিনতাইয়ের ঘটনায় মামলা হয়েছে। উভয় মামলায় গ্রেফতারকৃতদের বৃহস্পতিবার বিকালে কোর্ট হাজতে চালান করা হয়েছে।
