Logo
Logo
×

শেষ পাতা

রাহুল গান্ধীর সংসদ-সদস্য পদ খারিজ

একজোট বিরোধীরা

Icon

কৃষ্ণকুমার দাস, কলকাতা থেকে

প্রকাশ: ২৫ মার্চ ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

রাহুল গান্ধীর সংসদ-সদস্য পদ খারিজ

‘মোদি’ পদবি নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্যের দায়ে দুবছর কারাদণ্ড পাওয়া রাহুল গান্ধীর সংসদ-সদস্য পদ খারিজ করলেন ভারতীয় সংসদের লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লা। শুক্রবার লোকসভা সচিবালয় থেকে বিজ্ঞপ্তি জারি করে এ তথ্য জানানো হয়। এরপরই ভারতজুড়ে তীব্র রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া শুরু হয়েছে। কংগ্রেসের এই ‘দুর্দিনে’ মতানৈক্য দূরে সরিয়ে সোনিয়া-পুত্রের পাশে দাঁড়িয়েছেন দেশের অধিকাংশ বিরোধী নেতা। মমতা ব্যানার্জি, অখিলেশ যাদব থেকে সীতারাম ইয়েচুরিরা সবাই রাহুলের সংসদ-সদস্য পদ খারিজের প্রতিবাদে এক সুরে গর্জে উঠলেন।

ভারতের নয়া জনপ্রতিনিধিত্ব আইন বলছে, সংসদ-সদস্য পদ খারিজ হওয়া রাহুল অন্তত আগামী ৬ বছর কোনো ভোটে লড়তে পারবেন না। এ নিয়ে শুক্রবার ভারতীয় সময় বিকাল ৫টা ২৭ মিনিটে এক টুইটে রাহুল গান্ধী লিখেছেন, ‘দেশের কণ্ঠস্বরের জন্য লড়াই করছি। প্রতিটি মূল্য চোকাতে প্রস্তুত।’

২০১৯ সালে কর্নাটকে ভোটের প্রচারে গিয়ে ‘মোদি’ পদবি নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্যের দায়ে বৃহস্পতিবার গুজরাটের সুরাত জেলা আদালত রাহুলকে ২ বছর জেলের সাজা দেন। তারই ভিত্তিতে ভারতীয় সংবিধানের ১০২(১)-ই অনুচ্ছেদ এবং জনপ্রতিনিধিত্ব আইন (১৯৫১)-র ৮ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাহুলের সংসদ-সদস্য পদ খারিজের বিজ্ঞপ্তি জারি হয়েছে।

ওই বছর লোকসভা ভোটে কর্নাটকে প্রচারে গিয়ে রাহুল প্রশ্ন তুলেছিলেন, সব চোরদের পদবি ‘মোদি’ হয় কেন? আইপিএল কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত ললিত মোদি, ব্যাংক-ঋণ মামলায় ‘পলাতক’ নীরব মোদির সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির তুলনা টেনেছিলেন তিনি। ওই ঘটনায় রাহুলের বিরুদ্ধে ‘পদবি অবমাননার’ অভিযোগে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৪৯৯ ও ৫০০ ধারায় অপরাধমূলক মানহানির মামলা করেছিলেন গুজরাটে বিজেপি নেতা পূর্ণেশ মোদি। সেই মামলাতেই দোষী সাব্যস্ত হয়ে সংসদ-সদস্য পদ খারিজ হলো রাহুলের। এ নিয়ে মোদি সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপপ্রয়োগের অভিযোগ তুলে অন্য বিরোধী দলগুলোকে নিয়ে আন্দোলনের পথে নামছে কংগ্রেস। দলের সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে দুপুরেই দিল্লিতে ১২টি বিরোধী দলের নেতার সঙ্গে বৈঠক করেন। বাম, জেডি (ইউ), ডিএমকের পাশাপাশি ওই বৈঠকে ছিল অরবিন্দ কেজরীওয়ালের আম আদমি পার্টিও। এরপর সংসদ ভবন থেকে মিছিল করে রাষ্ট্রপতি ভবনে যান তারা।

রাহুলের পাশে দাঁড়িয়ে এদিন মমতা ব্যানার্জি টুইটারে লিখেছেন, প্রধানমন্ত্রী মোদির নতুন ভারতে বিরোধী নেতারাই বিজেপির মূল নিশানা হয়ে উঠেছেন। যখন অপরাধের ইতিহাস থাকা বিজেপি নেতাদের মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে, তখন বিরোধী নেতাদের বরখাস্ত করা হচ্ছে ভাষণ দেওয়ার জন্য! আজ গণতন্ত্র নতুন নীচুতায় পৌঁছল।

মমতার মতোই রাহুলের নাম না করে আরেক টুইটে বিজেপি সরকারকে নিশানা করেছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। আরজেডি সংসদ-সদস্য মনোজ ঝা বলেছেন, এটা লজ্জার এবং দুর্ভাগ্যজনক। সংসদীয় গণতন্ত্রের ইতিহাসে এরচেয়ে বড় চক্রান্ত কিছু হতে পারে না।

রাহুলের পাশে দাঁড়িয়ে সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি টুইটারে লিখেছেন, বিরোধী নেতাদের কোণঠাসা করতে বিজেপি এখন ফৌজদারি মানহানির পথ নিচ্ছে, যা নিন্দনীয়। যেমনটা রাহুল গান্ধীর সঙ্গে করা হলো।

বিজেপিকে নিশানা করে মহারাষ্ট্রের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরে বলেছেন, চোর এবং লুটেরারা স্বাধীনভাবে ঘুরছেন। কিন্তু শাস্তি পেলেন রাহুল। সরাসরি গণতন্ত্রকে হত্যা করা হলো। সব সরকারি ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণাধীন। এটা একনায়কতন্ত্রের শেষের শুরু।

আম আদমি নেতা তথা দিল্লির মন্ত্রী সৌরভ ভরদ্বাজ বলেছেন, কংগ্রেসের সঙ্গে আমাদের অনেক মতপার্থক্য রয়েছে... কিন্তু কেন্দ্র যদি বিরোধীদের কণ্ঠরোধ করতে চায়, তাহলে মানুষের হয়ে কে সরব হবে? যদি এটা চলতে থাকে, তাহলে বিরোধীদের ছাড়াই সব নির্বাচনে একা লড়াই করুন প্রধানমন্ত্রী এবং বিজেপি। এটা স্বৈরাচারী মনোভাব।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম