জাবিতে নেতার মাথা ফাটিয়ে বহিষ্কার ৫ ছাত্রলীগ নেতাকর্মী
তদন্ত কমিটি গঠন
জাবি প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৫ মার্চ ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি সাইফুল ইসলামকে রড দিয়ে পিটিয়ে মাথা ফাটিয়ে দিয়েছে সংগঠনের পাঁচ নেতাকর্মী। বৃহস্পতিবার রাতে এ ঘটনা ঘটে। সাইফুল কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ৪৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী। রাতেই অভিযুক্ত পাঁচ শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলমের সভাপতিত্বে শৃঙ্খলা কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়েছে। এছাড়া সভায় পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি এই মারধরসহ আগের কয়েকটি ঘটনা নিয়ে তদন্ত করবে।
বহিষ্কৃতরা হলো-আইন ও বিচার বিভাগের ইমরুল হাসান অমি, বাংলা বিভাগের আহমেদ গালিব, দর্শন বিভাগের কাইয়ূম হাসান ও আরিফুল ইসলাম এবং প্রাণিবিদ্যা বিভাগের তানভিরুল ইসলাম। তারা সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৭তম ব্যাচের এবং মীর মশাররফ হোসেন হলের আবাসিক শিক্ষার্থী। এদের মধ্যে অমি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের উপ-আইন বিষয়ক সম্পাদক, গালিব ও কাইয়ূম সহ-সম্পাদক, আরিফুল ইসলাম কেন্দ্রীয় কমিটির কার্যকরী সদস্য এবং তানভিরুল কর্মী বলে পরিচিত। বহিষ্কৃতরা হলে অবস্থান করতে পারবে না বলেও সিদ্ধান্ত হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ উল হাসান শৃঙ্খলা কমিটির সভা শেষে সাংবাদিকদের এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
জানা যায়, বুধবার রাতের মারামারির ঘটনার জের ধরে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জহির রায়হান মিলনায়তনে ‘বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ’ শীর্ষক আলোচনা সভা শেষে শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি সাইফুল ইসলামকে রড দিয়ে পেটানো হয়। এ সময় সাইফুলের মাথা ফেটে গেলে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। তার মাথায় তিনটি সেলাই দেওয়া হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন হাসপাতালের ডিউটি ম্যানেজার পলাশ চন্দ্র দাশ।
সাইফুল বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের আবাসিক শিক্ষার্থী। এ ঘটনার পর বিশ্বকবি হলের শিক্ষার্থীরা উত্তেজিত হয়ে মীর মশাররফ হোসেন হল অভিমুখে যেতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল টিম বাধা দেয়। পরে আহত শিক্ষার্থী বহিষ্কৃত পাঁচজনকে অভিযুক্ত করে প্রক্টর বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দিলে রাতে শৃঙ্খলা কমিটির জরুরি সভা বসে। সভায় পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটি রোববার সাভারের একটি রেস্টুরেন্টে বসাকে কেন্দ্র করে মীর মশাররফ হোসেন হল ও বিশ্বকবি হলের শিক্ষার্থীদের মধ্যকার মারধরের ঘটনা, বুধবার সংঘটিত মীর মশাররফ হোসেন হলের শিক্ষার্থীকে বিশ্বকবি হল শিক্ষার্থীর মারধর, মীর মশাররফ হোসেন হলের শিক্ষার্থীদের অস্ত্রের মহড়ার ঘটনা, প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যদের সঙ্গে অসদাচরণ, প্রক্টরকে উদ্দেশ করে নেতিবাচক কথাবার্তা, সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনা এবং সর্বশেষ মাথা ফাটানোর ঘটনার তদন্ত করবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯নং হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক শফি মুহাম্মদ তারেককে প্রধান করে এই কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন-আলবেরুনী হলের প্রাধ্যক্ষ সিকদার মোহাম্মদ জুলকারনাইন, শহিদ রফিক-জব্বার হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক শাহেদ রানা, জাহানারা ইমাম হলের প্রাধ্যক্ষ মোরশেদা বেগম। এছাড়া কমিটিতে সদস্য সচিব হিসাবে রয়েছেন ডেপুটি রেজিস্ট্রার মাহতাব উজ জাহিদ।
শৃঙ্খলা কমিটির সভা শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান সাংবাদিকদের বলেন, মারধরের ঘটনায় পাঁচজনকে চিহ্নিত করে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। বহিষ্কারাদেশ আজ থেকেই কার্যকর হবে। তদন্ত কমিটিকে ১০ কার্য দিবসের মধ্যে সুপারিশসহ প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কৃত পাঁচ শিক্ষার্থীর মধ্যে দুজনের এবং দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে একজনের রাজনৈতিক পদবি স্থগিত করেছে শাখা ছাত্রলীগ। শুক্রবার শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আকতারুজ্জামান সোহেল এবং সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান লিটন স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে তিন নেতাকর্মীর পদ স্থগিত করা হয়।
এরা হলেন-উপ-আইন বিষয়ক সম্পাদক ইমরুল হাসান অমি, সহ-সম্পাদক আহমেদ গালিব ও সদস্য আহসানুল হাবীব রেজা। এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালি আসিফ ইনান বলেন, যারা এ ধরনের কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। শাখা ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কার করার জন্য বলা হয়েছে। বহিষ্কারের বিষয়টি তারা জানাবে।
