Logo
Logo
×

শেষ পাতা

বাঞ্ছারামপুর থানা পুলিশ

হত্যা নির্যাতন সালিশ বাণিজ্যের অভিযোগ

Icon

সাব্বির আহমেদ সুবীর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া

প্রকাশ: ২৮ মার্চ ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

হত্যা নির্যাতন সালিশ বাণিজ্যের অভিযোগ

প্রতীকী ছবি

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর মডেল থানা পুলিশের বিরুদ্ধে হত্যা, নির্যাতন, মিথ্যা মামলা দিয়ে ফাঁসানোসহ নানা অভিযোগ উঠেছে। এছাড়া থানায় সালিশ বসিয়ে মীমাংসার নামে অর্থ নেওয়ার অভিযোগও তাদের বিরুদ্ধে।

ভুক্তভোগী কয়েকজন জানান, নারী নির্যাতন, হত্যাচেষ্টাসহ নানা ঘটনায় থানায় লিখিত অভিযোগ দেওয়া হলেও সেগুলো রেকর্ড না করে বাঁদিকে চাপ দিয়ে আপসে বাধ্য করে পুলিশ। অনেক সময় পুলিশ নিজের লেখা এজাহারে বাদীকে স্বাক্ষর করতে বাধ্য করে। হত্যা, ডাকাতি, নাশকতা ও বিস্ফোরক আইনের মামলার গ্রেফতারি পরোয়ানাভুক্তরা পুলিশকে ম্যানেজ করে এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছে। মাদক ব্যবসায়ীরাও ধরাছোঁয়ার বাইরে। পুলিশের এসব কর্মকাণ্ডে ক্ষুব্ধ বাঞ্ছারামপুরবাসী। ওসি নূরে আলম ২০২২ সালের ৩ জুলাই বাঞ্ছারামপুর থানায় যোগদানের পর থেকেই সেখানকার পুলিশ সদস্যরা নানা অনিয়মে জড়িয়ে পড়েন।

২০২২ সালের ১৯ নভেম্বর বাঞ্ছারামপুর ছাত্রদলের সহসভাপতি মো. নয়ন মিয়াকে গুলি করে হত্যার অভিযোগে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার তৎকালীন এসপি মোহাম্মদ আনিসুর রহমান, বাঞ্ছারামপুর থানার ওসি নূরে আলমসহ কয়েকজন কর্মকর্তাকে আসামি করে মামলা হয়। মামলা করেন নয়নের বাবা রহমত উল্লাহ। কিন্তু ব্রাহ্মণবাড়িয়া আদালতে করা ওই মামলা খারিজ হয়ে যায়।

সোনার বার আত্মসাতের অভিযোগে উপজেলার চরশিবপুর গ্রামের আবদুল আহম্মদ রুবেলকে থানায় আটকে নির্যাতন করা হয়। ওই ঘটনায় ১৯ মার্চ রুবেলের মা আমেনা বেগম বাদী হয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা ও দায়রা জজ আদালতে মামলা করেন। এতে আসামি করা হয় বাঞ্ছারামপুর থানার ওসি (তদন্ত) তরুণ কান্তি দে, সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) আল আমিন মানিক ও বাঞ্ছারামপুর সদরের মধ্যপাড়ার রবি উল্লাহকে। তবে আদালত কিছু নির্দেশনা দিয়ে মামলাটি খারিজ করে দেন।

এ বিষয়ে আমেনা বেগম বলেন, ‘আমার প্রবাসী ছেলেকে পুলিশ বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে দুদিন থানায় আটকে রেখে নির্যাতন করে। পরে পুলিশ ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা দিয়ে আদালতে পাঠায়। ওই ঘটনায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া আদালতে মামলা করেছিলাম। কিন্তু সেটা নাকি খারিজ করে দেওয়া হয়েছে। তাই হাইকোর্টে আপিল করব। পুলিশের ভয়ে আমি এখন পলাতক আছি। জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে এসপি স্যারের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।’

এ ধরনের নানাবিধ অভিযোগ রয়েছে বাঞ্ছারামপুর থানা পুলিশের বিরুদ্ধে। যাদের বিরুদ্ধে বেশি অভিযোগ তারা হলেন- এসআই রফিকুল ইসলাম, এএসআই আল আমিন মানিক, এএসআই হানিফ খান, এএসআই শাহ আলম, এসআই নুরুজ্জামান, এএসআই মোজাম্মেল হোসাইন ও দরিকান্দি বিটের এএসআই আল আমিন।

সম্প্রতি বাঞ্ছারামপুর উপজেলার কয়েকটি সড়ক ও বাড়িতে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনায়ও পুলিশের ভূমিকা রহস্যজনক। ফরদাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রাশেদুল ইসলাম জানান, গত ডিসেম্বরে ফতেপুর-রূপসদী সড়কে তিনি একদল ডাকাতের কবলে পড়েন। তার কাছ থেকে ৩টি মোবাইল ফোন ও নগদ প্রায় ৫০ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেওয়া হয়। কিন্তু ওই ঘটনায় এখনো কেউ গ্রেফতার হয়নি।

এএসআই হানিফ খানের বিরুদ্ধে মাদক ব্যবসায়ী রেজন মিয়া ও কানাইনগরের ওয়ারেন্টভুক্ত এক আসামিকে ছেড়ে দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া মেঘনা নদীতে পিকনিকের নৌকায় সাউন্ড বক্স বাজানোর বিনিময়ে টাকা নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। তবে এসব অভিযোগ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন এএসআই হানিফ খান।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে বাঞ্ছারামপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নূরে আলম বলেন, আমরা যেহেতু মাঠে কাজ করি তাই কেউ কেউ মিথ্যা অভিযোগ তুলতেই পারেন। তবে এসব অভিযোগ সঠিক নয়। আমরা কাউকে বলি না থানায় এসে সালিশ করতে। এলাকায় সমাধান না হলে হয়তো ভুক্তভোগীরা থানায় এসে বসেন। আমরা থানায় সালিশকে নিরুৎসাহিত করছি। আর নয়ন হত্যার বিষয়টি তো আদালত খারিজ করে দিয়েছেন। কয়েকদিন আগে রুবেল নামের যে ছেলের মা পুলিশের বিরুদ্ধে নির্যাতনের অভিযোগ এনে মামলা করেছিলেন সেটিও খারিজ করে দিয়েছেন আদালত। আরও যেসব অভিযোগের কথা বলছেন তা সঠিক নয়।

এ ব্যাপারে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শাখাওয়াত হোসেন বলেন, বাঞ্ছারামপুর থানা পুলিশের বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির সুনির্দিষ্ট তথ্য পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব। পুলিশ ক্লিয়ারেন্সের ব্যাপারে অনেক জায়গা থেকে কমপ্লেইন আসছে। আমরা কিছু ব্যবস্থা নিয়েছি। লোকজন যাতে হয়রানির শিকার না হয় সেজন্য আমরা সতর্ক।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া পুলিশ

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম