দুর্গাপুরে বিজিবির ওপর হামলায় মামলা হয়নি
নেত্রকোনা ও দুর্গাপুর প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০২ এপ্রিল ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
নেত্রকোনার দুর্গাপুরে সীমান্তবর্তী বারমারি-লক্ষ্মীপুরে বিজিবির ওপর হামলার ঘটনায় শনিবার রাত ১০টা পর্যন্ত মামলা হয়নি। তবে বিজিবির পক্ষ থেকে মামলা করা হবে বলে জানা গেছে। শুক্রবার রাতে ওই সীমান্তে চোরাকারবারিদের হামলার পর বিজিবির গুলিতে মো. আমিনুল ইসলাম (৩০) নামের এক ব্যক্তি নিহত হন। এ সময় মো. জায়েদুল ইসলাম (৩৮) নামের আরেক ব্যক্তি গুলিবিদ্ধ হন। পাচারকারীদের হামলায় মো. মিনহাজ উদ্দিন নামের বিজিবির একজন হাবিলদার আহত হয়েছেন।
নিহত আমিনুল ইসলাম দুর্গাপুর উপজেলার লক্ষ্মীপুর গ্রামের আবদুল বারেকের ছেলে। আহত জায়েদুল একই গ্রামের জালাল মিয়ার ছেলে।
বিজিবি নেত্রকোনা-৩১ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ আরিফুর রহমান স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বারমারী সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশ থেকে ভারতে সুপারি পাচারের বিনিময়ে মাদক আসার খবর পায় বিজিবি। এরপর বারমারী বিওপি থেকে হাবিলদার মিনহাজ উদ্দিনের নেতৃত্বে একটি টহল দল বিশেষ অভিযানে যায়। লক্ষ্মীপুর এলাকায় রাত সাড়ে ৮টার দিকে সংঘবদ্ধ একটি চোরাকারবারি দল সুপারি মাথায় করে অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশ করতে যাচ্ছিল। বিজিবির টহল দল চ্যালেঞ্জ করলে চোরাকারবারিরা দা ও লাঠিসোঁটা নিয়ে অতর্কিত আক্রমণ করে। একপর্যায়ে টহল কমান্ডার হাবিলদার মিনহাজ উদ্দিনকে চোরাকারবারিদের একজন দা দিয়ে কয়েকটি কোপ দেয়। মিনহাজ উদ্দিন আÍরক্ষার্থে দুই রাউন্ড গুলি করে। এতে চোরাকারবারি আমিনুল ইসলাম ও জায়দুল ইসলাম গুলিবিদ্ধ হয়।
বিজিবির বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, পরে আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসার জন্য দুর্গাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক আমিনুলকে মৃত ঘোষণা করেন। আহত চোরাকারবারি জায়েদুল ও বিজিবি সদস্য মিনহাজ উদ্দিনকে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে পাচারের উদ্দেশ্যে আনা সাত বস্তা সুপারি জব্দ করা হয়েছে।
বারমারী ক্যাম্পের নায়েক সুবেদার আইনুল হক বলেন, পাচারকারীরা বিজিবির ওপর হামলা চালালে গুলি করা ছাড়া কোনো পথ ছিল না। তাদের ধারালো দায়ের কোপে বিজিবির হাবিলদার মিনহাজ গুরুতর আহত হয়েছেন। তার বাঁ-হাতের তিন জায়গায় কেটে গেছে।
তবে নিহত আমিনুলের মা কুলসুমা খাতুন, তার স্ত্রী সুজেতা খাতুন, ভাই রমজান মিয়া ও প্রতিবেশী মুসলেম উদ্দিনের দাবি, আমিনুল চোরাকারবারির সঙ্গে জড়িত নন। তিনি শ্রমিকের কাজ করেন। কুলসুমা খাতুন যুগান্তরকে বলেন, আমার ছেলে দিনমজুরের কাজ করে। সে পাচারকারিদের টাকার বিনিময়ে সুপারির বস্তা মাথায় করে নিয়ে যাচ্ছিল। বিজিবি সদস্যরা কোনো কিছু না বলেই প্রথমে তাকে মারধর করে পরে কাছ থেকে গুলি করে হত্যা করেছে। আমি বিষয়টি তদন্ত করে দায়ীদের শাস্তির দাবি জানাই।
কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শীসহ নিহতের ভাই রমজান মিয়া যুগান্তরকে বলেন, আমিনুলকে গুলির খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখি, সে সীমান্তের কাছে গুলিবিদ্ধ হয়ে বাঁচার জন্য ছটফট করছে। আমরা কাছে যেতে চাইলে বিজিবি বাধা দেয়। প্রায় ১৫ মিনিট পর তার মৃত্যু হলে লাশ হাসপাতালে নিয়ে যায় বিজিবি। তিনি বলেন, আমার নিরীহ ভাইকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। তার ছয় মাসের একটি সন্তান রয়েছে। এখন তার সংসার কিভাবে চলবে।
নেত্রকোনা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) মোহাম্মদ হারুন অর রশিদ শনিবার রাতে যুগান্তরকে জানান, আমিনুলের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য নেত্রকোনা আধুনিক সদর হাসপাতাল মর্গে রাখা আছে। এ ঘটনায় থানায় এখনো কোনো মামলা হয়নি।
