১২৪তম জন্মজয়ন্তীতে শ্রদ্ধা
কাজী নজরুল ইসলাম সব সময় প্রাসঙ্গিক
সাংস্কৃতিক প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২৬ মে ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
প্রয়াণের সাতচল্লিশ বছর কেটে গেলেও জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের চিন্তা-চেতনা, আদর্শ আজও প্রাসঙ্গিক। দ্রোহ-প্রেম আর সাম্যের মন্ত্রে নজরুল তার বাঙালি হৃদয়ে চির আসিন। তিনি অসাম্প্রদায়িকতার যে শিক্ষা দিয়েছেন তার লেখনিতে তা যেকোনো সময়ের জন্য আদর্শনীয়।
কবি নজরুলের ১২৪তম জন্মজয়ন্তী উপলক্ষ্যে বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদসংলগ্ন কবির সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর এসব কথা বলেছেন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বরা। বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৬টা থেকে শুরু হয় শ্রদ্ধাঞ্জলি পর্ব। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় শুরুতে কবির সমাধিতে ফুলেল শ্রদ্ধা নিবেদন করে।
পরে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর, কবি নজরুল ইনস্টিটিউট, জাতীয় আর্কাইভস ও গ্রন্থাগার অধিদপ্তর, বাংলা একাডেমি, শিল্পকলা একাডেমি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পক্ষে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা শাজাহান খান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বাহাউদ্দিন নাসিম, দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া ও সংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল।
কবির পরিবারের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন করে কবির নাতনি খিলখিল কাজী বলেন, সারাটি জীবন তিনি মানুষকে নিয়ে পথ চলেছেন বলে আজও তিনি প্রাসঙ্গিক। তার কবিতা, গান আজও আমাদের অনুপ্রাণিত করে। নজরুলের ‘বিদ্রোহী’ কবিতাকে ইনটেনজিবল কালচারাল হেরিটেজ হিসাবে স্বীকৃতির জন্য তিনি জাতিসংঘের কাছে আবেদন করবেন বলে জানান।
জাতীয় কবির সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর ওবায়দুল কাদের বলেন, সাম্প্রদায়িকতার বিষবৃক্ষ বাংলাদেশে এখনো শাখা-প্রশাখা বিস্তার করে আছে। নজরুলের অসাম্প্রদায়িক, মানবতাবাদী চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে বঙ্গবন্ধুর আদর্শে, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গঠন করব। সেজন্য আমাদের আরও লড়াই করে যেতে হবে, সেটাই হচ্ছে আমাদের অঙ্গীকার।
বিএনপির পক্ষে শ্রদ্ধা নিবেদন করে দলের যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন বলেন, অন্যায় ও অবিচারের বিরুদ্ধে, নিপীড়নের বিরুদ্ধে, সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে সবসময় সোচ্চার ছিলেন কবি কাজী নজরুল, যা তার লেখনীতে উঠে এসেছে। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে কবির যে ভূমিকা ছিল তা থেকে অনুপ্রেরণা নিয়েই বাঙালি মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে লড়াই করেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আখতারুজ্জামান বলেন, নজরুলের মর্মবাণী ছিল অসাম্প্রদায়িক চেতনা ও সাম্যের সমাজ প্রতিষ্ঠা। বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা বলেন, কবি নজরুলের আদর্শকে রাজনৈতিক আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করে বঙ্গবন্ধু জাতিরাষ্ট্র হিসাবে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করেছেন। নজরুল সংগীত শিল্পী ফেরদৌস আরা বলেন, বাঙালির জীবনের সঞ্চিত শক্তির সবটুকু নজরুল দিয়েছেন।
এদিকে নজরুলের স্মৃতিবিজড়িত ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার দরিরামপুরে তিন দিনব্যাপী জাতীয় পর্যায়ের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার বিকালে দরিরামপুরে এ আয়োজনে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন সংসদ উপনেতা মতিয়া চৌধুরী। সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কেএম খালিদের সভাপতিত্বে বক্তব্য দেন জাতীয় কবির নাতনি খিলখিল কাজী।
আজ দ্বিতীয় দিনের আয়োজনে বক্তব্য দেবেন কবির আরেক নাতনি মিষ্টি কাজী। সমাপনী দিনের আয়োজনে প্রধান অতিথি হিসাবে থাকবেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। জাতীয় পর্যায়ের অনুষ্ঠানের অংশ হিসাবে ঢাকাসহ জাতীয় কবির স্মৃতিবিজড়িত কুমিল্লার দৌলতপুর, মানিকগঞ্জের তেওতা, চুয়াডাঙ্গার কার্পাসডাঙ্গা এবং চট্টগ্রামে স্থানীয় প্রশাসনের ব্যবস্থাপনায় যথাযোগ্য মর্যাদায় নজরুল মেলা, নজরুলবিষয়ক আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টায় রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালায় গান, কবিতা ও নৃত্যে উদযাপিত হয় নজরুলের ১২৪তম জন্মজয়ন্তী। দুই দিনব্যাপী নজরুল উৎসবের আয়োজন করেছে ছায়ানট। দুদিনের এই উৎসব সাজানো হয়েছে একক ও সম্মেলক গান, নৃত্য, পাঠ-আবৃত্তি পরিবেশনায়।
