Logo
Logo
×

শেষ পাতা

চট্টগ্রাম বন্দর

দুই মাসে জেটিতে বড় ১টি জাহাজও ভেড়েনি

Icon

মজুমদার নাজিম উদ্দিন, চট্টগ্রাম

প্রকাশ: ২৯ মে ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

দুই মাসে জেটিতে বড় ১টি জাহাজও ভেড়েনি

অনুমতি দেওয়ার পরও চট্টগ্রাম বন্দরের জেটিতে ভিড়ছে না ২০০ মিটার লম্বা ও ১০ মিটার গভীরতার জাহাজ। গত ১৯ মার্চ বন্দরের ডেপুটি কনজারভেটর ক্যাপ্টেন ফরিদুল আলম স্বাক্ষরিত চিঠিতে এ ধরনের বড় জাহাজ ভেড়ানোর সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়। এর আগে ঢাকঢোল পিটিয়ে বড় আকারের দুই জাহাজ পরীক্ষামূলকভাবে প্রবেশ করানো হয় বন্দর জেটিতে। ২০০ মিটার লম্বা ও ১০ মিটার ড্রাফট বা গভীরতার প্রথম জাহাজ ‘কমন এটলাস’ জেটিতে প্রবেশের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ছিলেন নৌ-প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। বড় আকারের দুই জাহজ পরীক্ষামূলক প্রবেশ সফল হওয়ার পর বন্দর কর্তৃপক্ষ সার্কুলার জারি করে। এর পর প্রায় দুই মাস অতিক্রান্ত হলেও বড় আকারের আর একটি জাহাজও জেটিতে আসেনি। তবে এই না আসার জন্য বন্দর কর্তৃপক্ষ ও শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশন পরস্পরকে দুষছে।

শিপিং এজেন্টরা বলছেন, বন্দর কর্তৃপক্ষ বড় আকারের জাহাজ ভেড়ানোর অনুমতি দিলেও জুন পর্যন্ত যে ড্রাফট চার্ট তৈরি করেছে, তাতে কোথাও ২০০ মিটার লম্বা ও ১০ মিটার ড্রাফটের (পানির নিচে থাকা জাহাজের অংশ) জাহাজের কথা উল্লেখ করা হয়নি। তাই এ ধরনের জাহাজ আনা যাচ্ছে না। তবে বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছে, তারা বড় জাহাজ প্রবেশ করাতে প্রস্তুত। কিন্তু শিপিং এজেন্টরা এ ব্যাপারে উদ্যোগী নন। ভিন্ন একটি সূত্র জানায়, ডলার সংকটে এলসি খুলতে জটিলতাসহ নানা কারণে পণ্য আমদানি কমেছে। তাই বড় জাহাজে পণ্য আনতে এই মুহূর্তে আগ্রহী নন আমদানিকারক ও শিপিং এজেন্টরা।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, একটি পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের সমীক্ষায় চট্টগ্রাম বন্দরের জেটিতে আগের চেয়ে আরও বড় আকারের জাহাজ প্রবেশ করতে পারবে বলে উল্লেখ করা হয়। এরপর থেকেই বন্দর কর্তৃপক্ষ বড় জাহাজ ভেড়ানোর তৎপরতা শুরু করে।

গত ১৫ জানুয়ারি সিসিটি-১ জেটিতে এমভি কমন এটলাস নামের ২০০ মিটার লম্বা একটি জাহাজ বার্থিং দেওয়া হয় পরীক্ষামূলকভাবে। এরপর ২৫ ফেব্রুয়ারি পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনালে পরীক্ষামূলকভাবে একই আকারের আরও একটি জাহাজ আনা হয়, নাম মেঘনা ভিক্টরি। এই দুটি জাহাজ নির্বিঘ্নে প্রবেশ করাতে সক্ষম হওয়ায় বন্দর কর্তৃপক্ষ জেটিতে বড় জাহাজ প্রবেশের অনুমতি দেয়। ১৯ মার্চ জারি করা এ সংক্রান্ত একটি সার্কুলারে বলা হয়, ‘এখন থেকে চট্টগ্রাম বন্দরের জেটিতে সর্বোচ্চ ২০০ মিটার লম্বা ও ১০ মিটার গভীরতার জাহাজ প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হবে। তবে তা জোয়ার-ভাটার প্রকৃত সময়ের ওপর নির্ভর করবে।’

চট্টগ্রাম বন্দর জোয়ার ভাটার ওপর নির্ভরশীল একটি বন্দর। ভাটার সময় চ্যানেলের গভীরতা কমে যাওয়ায় ওই সময় জেটিতে জাহাজ ভেড়ানো হয় না। জোয়ারের সময় পানির উচ্চতা বাড়লে কেবল তখনই বন্দরের নিজস্ব পাইলটদের দিয়ে বহির্নোঙর থেকে নির্দিষ্ট আকারের সমুদ্রগামী জাহাজ (মাদার ভেসেল) জেটিতে আনা হয় পণ্য লোডিং-আনলোডিংয়ের জন্য।

সূত্র জানায়, ১৯৭৫ সালে বন্দর জেটিতে ১৬০ মিটার দৈর্ঘ্য ও ৭ দশমিক ৫ মিটার ড্রাফটের জাহাজ প্রবেশের অনুমতি ছিল। এরপর চ্যানেলের গভীরতার ওপর নির্ভর করে ১৯৮০ সালে আরও কিছুটা বড় আকারের অর্থাৎ ১৭০ মিটার লম্বা ও ৮ মিটার ড্রাফটের জাহাজ প্রবেশ করানো হয়। এরপর ১৯৯০ সালে ১৮০ মিটার লম্বা ও ৮ দশমিক ৫ মিটার গভীরতা, ১৯৯৫ সালে ১৮৬ মিটার লম্বা ও ৯ দশমিক ২ মিটার গভীরতা, ২০১৪ সালে ১৯০ মিটার লম্বা ও ৯ দশমিক ৫ মিটার গভীরতার জাহাজ ভেড়ার অনুমতি ছিল। সর্বশেষ ২০২৩ সালে এসে আরও বড় আকারের অর্থাৎ ২০০ মিটার লম্বা ও ১০ মিটার গভীরতার জাহাজ প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়।

বন্দর ও শিপিং সংশ্লিষ্টরা জানান, সাড়ে ৯ মিটার গভীরতা ও ১৯০ মিটার লম্বা জাহাজে ১৮০০ থেকে ২৪০০ কনটেইনার বহন করা যায়। ১০ মিটার গভীরতা আর ২০০ মিটার লম্বা জাহাজে সাড়ে তিন হাজার পর্যন্ত কনটেইনার পরিবহণ করা সম্ভব। অর্থাৎ বড় জাহাজ জেটিতে আসতে পারলে একই সঙ্গে অনেক বেশি পরিমাণ পণ্য আনা সম্ভব হবে। এতে ব্যবসায়ীদের খরচ কমবে। অন্যদিকে পণ্য হ্যান্ডলিংয়েও গতি বাড়ে। ছোট আকারের জাহাজ বেশি আসলে বন্দরের জাহাজ জট সৃষ্টি ও অপেক্ষমাণ সময় বাড়ার আশঙ্কা থাকে। কিন্তু বড় জাহাজ এলে সংখ্যায় কম জাহাজে বেশি পণ্য আসবে। তাই জাহাজ জটের আশঙ্কাও থাকে না। ২০২২ সালে দেশের প্রধান এ সমুদ্র বন্দর ৩১ লাখ ৪২ হাজার টিইইউএস (২০ ফুট সমমানের) কনটেইনার হ্যান্ডলিং করেছে। জেনারেল কার্গো ওঠানামা হয়েছে ১১ কোটি ৯৬ লাখ মেট্রিক টন। জাহাজ হ্যান্ডলিং হয়েছে ৪ হাজার ৩৬১ টি।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো. ওমর ফারুক যুগান্তরকে বলেন, ‘সার্কুলার অনুযায়ী ২০০ মিটার লম্বা ও ১০ মিটার গভীরতার জাহাজ আসলে আমরা জেটিতে প্রবেশের অনুমতি দেব। তবে আমার জানা মতে কোনো শিপিং এজেন্ট এখনো এই আকারের জাহাজ আনার ঘোষণা দেয়নি। ঘোষণা দিলে সেই অনুযায়ী উদ্যোগ নেব। মালিক ও এজেন্টরা জাহাজ আনবে। তারা যদি এ ধরনের জাহাজ না আনে, সেটা তাদের ব্যাপার। কিন্তু আমাদের কাছে সুবিধাটা পর্যাপ্ত আছে। জাহাজ আনলে সেটা আমরা ভেড়াতে পারব। যেহেতু চট্টগ্রাম বন্দর জোয়ার-ভাটার ওপর নির্ভরশীল তাই এই বিষয়টাও মাথায় রাখতে হবে।

তবে ভিন্ন কথা বলছেন শিপিং এজেন্টরা। বাংলাদেশ শিপিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সৈয়দ মোহাম্মদ আরিফ বলেন, বন্দর কর্তৃপক্ষ জুন পর্যন্ত যে ড্রাফট চার্ট তৈরি করেছে, তাতে ২০০ মিটার লম্বা ও ১০ মিটার ড্রাফটের জাহাজের অপশন রাখেনি। এখন যদি এই আকারের জাহাজ আনা হয়, আর বন্দর যদি বার্থিং দিতে না পারে, তা হলে তো বড় সমস্যায় পড়তে হবে। কেননা, বাল্ক জাহাজের পণ্য বহির্নোঙরে লাইটারিংয়ের মাধ্যমে খালাস করা গেলেও সেখানে কনটেইনার খালাস সম্ভব নয়। কনটেইনার জাহাজকে জেটিতে আনতেই হবে। তাছাড়া যে সার্কুলার বন্দর দিয়েছে, তাতে কনটেইনার জাহাজ না বাল্ক জাহাজ ভেড়ানো হবে তা উল্লেখ করা হয়নি। এ বিষয়টি নিয়ে অস্পষ্টতা আছে। বাল্ক জাহাজের জন্য নির্ধারিত আছে ১-৮ নম্বর জেটি। সেখানে আবার ড্রাফট হলো সাড়ে ৮ মিটার। এ বিষয়ে ব্যাখ্যা চেয়ে আমরা বন্দরকে চিঠি দেব। তাছাড়া বিষয়টি নিয়ে শিগগিরই বন্দর চেয়ারম্যানের সঙ্গে আলোচনায় বসব।

জাহাজ

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম