Logo
Logo
×

শেষ পাতা

বরিশাল সিটি নির্বাচন

প্রচারণায় মুখর মহানগরীর সড়কে রঙিন সাজ

প্রার্থিতা ফিরে পেলেন তিনজন

Icon

সাইদুর রহমান পান্থ, বরিশাল

প্রকাশ: ৩০ মে ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

বরিশাল সিটি করপোরেশন (বিসিসি) নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক প্রচার-প্রচারণা শুরুর পর থেকে মুখরিত হয়ে উঠেছে গোটা নগরী। বিভিন্ন সড়কে প্রার্থীদের পোস্টার ব্যানারে শোভা পাচ্ছে নানা সাজসজ্জা। শুধু ব্যানার পোস্টারই নয়, বাড়ি বাড়ি গিয়ে গণসংযোগ করছেন ৭ মেয়র প্রার্থী, সাধারণ কাউন্সিলর পদের ১১৬ প্রার্থী ও ৪২ সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর প্রার্থী। সরাসরি গণসংযোগের পাশাপাশি এবার প্রচার প্রচারণা গড়িয়েছে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মেও। ডিজিটাল নানা মাধ্যম ব্যবহার করেও তারা ভোট প্রার্থনা করছেন।

বিসিসি নির্বাচন সামনে রেখে সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত প্রার্থীরা ভোটারদের দ্বারে দ্বারে গিয়ে ভোট চাইছেন। সেই সঙ্গে তারা বিভিন্ন ওয়ার্ডে নির্বাচনি অফিস উদ্বোধন ও উঠোন বৈঠক করেও সময় কাটাচ্ছেন। এরই অংশ হিসাবে সোমবার নগরীর কাকলীর মোড় ও চকবাজার রোড এলাকায় গণসংযোগ করেন নৌকার মেয়র প্রার্থী আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাত। নগরীর কাউনিয়া মড়ক খোলারপুল এলাকায় গণসংযোগ করেন জাতীয় পার্টির মনোনীত প্রার্থী ইকবাল হোসেন তাপস। চরমোনাই পীরসহ অন্য প্রার্থীরাও নগরীর বিভিন্ন স্থানে গণসংযোগ অব্যাহত রেখেছেন। শুধু মেয়র প্রার্থীরাই নন, কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর প্রার্থীরাও নিজ নিজ ওয়ার্ডে গণসংযোগ করে ব্যস্ত সময় পার করছেন।

তবে এবার শুধু ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোট প্রার্থনা নয়, প্রার্থী ও তাদের কর্মী-সমর্থকরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও সরব রয়েছেন। এরই মধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে বরিশাল সিটি নির্বাচনে প্রার্থীদের ব্যানার-পোস্টারের ছবি। যা অনেক ক্ষেত্রে প্রার্থী নিজে, আবার কর্মী-সমর্থকরাও শেয়ার করছেন। ক্যাপশনে তারা ভোট চাওয়ার পাশাপাশি নিজের জন্য জনগণের কাছে দোয়া চাচ্ছেন।

মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের দাবি, হালের সাথে তালমিলিয়ে চলতে গিয়েই ডিজিটাল মাধ্যমগুলোয় তারা প্রচারণা চালাচ্ছেন। কিছু মানুষ আছে এখান থেকেও দেখে দোয়া করে, আবার অনেকের ভোটের কথাও মনে পড়ে যায়।

ভোটার এলবার্ট রিপন বলেন, বিষয়টি বেশ সহজলভ্য প্রচারণা। ব্যানার, পোস্টার, মাইকিং করে প্রচারণা চালাতে যে কসরত করতে হয়, এখানে তার প্রয়োজন হয় না। তবে এ মাধ্যমে প্রচারণাটা যে নিশ্চিত ভোট এনে দিচ্ছে সেটা এখনো বলার সময় আসেনি। এজন্য প্রার্থীকে সশরীরে ভোটারদের সাথে দেখা করতেই হবে।

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রধান মো. সোহেল রানা বলেন, প্রচারণায় প্রযুক্তির ব্যবহার না বলে রাজনীতিতে প্রযুক্তির ব্যবহার বিষয়টিকে এভাবে নিতে পারলে ভালো হয়। ভোটের রাজনীতিতে আনুষ্ঠানিক প্রচারণার সময়কাল সীমিত, কিন্তু পুরো নির্বাচন প্রক্রিয়ার কাজ পুরো মেয়াদ বা তারও অধিক সময় ধরে চলতে থাকে। প্রার্থীরা প্রযুক্তির ব্যবহারের মূল উদ্দেশ্যটি বুঝতে পারলেই সেটি সার্বিক কল্যাণ বয়ে আনবে। জনগণের কাছে জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণে প্রযুক্তি হলো সবচেয়ে আধুনিক ও সহজলভ্য মাধ্যম। এক্ষেত্রে প্রার্থীর ভূমিকাই মূখ্য। কতটা আন্তরিকতায় তিনি তার উন্নয়ন পরিকল্পনা জনগণকে অবহিত করবেন সেটি একান্তই তার ওপর নির্ভর করে। তবে মনে রাখতে হবে, শাসন প্রক্রিয়া যত অংশগ্রহণমূলক, ততই তা মঙ্গলজনক। সুশাসন প্রতিষ্ঠার যতগুলো শর্ত রয়েছে, প্রযুক্তির ব্যবহার তার প্রায় প্রত্যেকটি নিশ্চিতে সুনির্দিষ্ট ভূমিকা রাখতে পারে।

তিনি বলেন, প্রচার-প্রচারণায়ও কিছু প্রার্থীকে দেখছি, প্রযুক্তির ব্যবহার করছেন। তবে, প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার করতে পারলে সেটি আজকের বাস্তবতায় ভালো ফল বয়ে নিয়ে আসবে। খুব কমক্ষেত্রেই দেখছি, প্রার্থীরা ভোটারদের সঙ্গে আই-টু-আই কন্টাক্টের সুবিধাটি নিতে পারছেন। একটি সু-পরিকল্পিত ইশতেহার এই নির্বাচনকে আরও স্পন্দিত করতে পারে যেখানে মানুষের প্রকৃত ও প্রাসঙ্গিক দাবি দাওয়া ও প্রার্থীর সম্ভাব্য করণীয় সম্পর্কে আলাপ থাকতে পারে। নির্বাচিত হওয়ার পর বিসিসির প্রত্যেকটি ওয়ার্ডভিত্তিক মাসিক ভার্চুয়াল টাউন হল মিটিং হতে পারে।

আগামী ১২ জুন অনুষ্ঠেয় বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোটার রয়েছে দুই লাখ ৭৬ হাজার ২৯৮ জন। নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী সাতজন, ৩০ ওয়ার্ডে সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১১৬ এবং ১০ সংরক্ষিত ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৪২ জন প্রার্থী।

প্রার্থিতা ফিরে পেলেন তিনজন : বিসিসি নির্বাচনে মনোনয়ন বাতিল হওয়া আরও তিন প্রার্থী উচ্চ আদালতের নির্দেশে প্রার্থিতা ফিরে পেয়েছেন। তারা হলেন ১নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী রাশেদ খান মেনন, ২নং ওয়ার্ডের রইজ আহম্মেদ মান্না ও ৩নং ওয়ার্ডের ফিরোজ মল্লিক। সোমবার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা হুমায়ূন কবির। উচ্চ আদালতের আদেশ প্রার্থীরা কমিশনে পৌঁছে দিয়েছেন। এর আগে ১৮ মে মনোনয়ন যাচাই-বাছাই শেষে ১৬ জনের প্রার্থিতা বাতিল করে নির্বাচন কমিশন। তবে আপিলে ৬ জনের প্রার্থিতা পুনর্বহাল হয়। শেষে উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হয়ে নির্বাচনে সুযোগ পান আরও তিনজন। এর ফলে মোট প্রার্থীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৬৮। এর মধ্যে মেয়র পদে সাতজন, সাধারণ ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে ১১৯ জন এবং সংরক্ষিত ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে ৪২ জন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

১৫শ ইভিএম এখন বরিশালে : গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ব্যবহৃত ইভিএম বরিশাল এসে পৌঁছেছে। সোমবার বিকালে ১৫শ ইভিএম পৌঁছায় বরিশালে। বরিশাল শিল্পকলা একাডেমিতে রাখা হয়েছে এসব মেশিন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনের সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম। তিনি জানান, গাজীপুরে যে ইভিএম দিয়ে ভোট গ্রহণ করা হয়েছে বরিশালে সেই মেশিনেই ভোট দেবেন ভোটাররা। বরিশালের এই নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্নে ইতোমধ্যে প্রায় দেড় শতাধিক ব্যক্তিকে ইভিএমের ওপর বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম