বাজেট ২০২৩-২৪
বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধিতে করছাড়
রয়েছে অবকাঠামো উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি
হামিদ-উজ-জামান
প্রকাশ: ০২ জুন ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
বাজেট ২০২৩-২৪
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
আগামী অর্থবছরে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বাড়াতে প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা রয়েছে জাতীয় বাজেটে। এক্ষেত্রে অবকাঠামো উন্নয়ন, দক্ষতা বৃদ্ধি এবং চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার প্রস্তুতিও আছে। সেই সঙ্গে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ, আমদানির বিকল্প পণ্য উৎপাদন এবং দেশীয় শিল্পের গতি অব্যাহত রাখতে বিভিন্ন খাতে মূসক অব্যাহতি ও বহাল রাখা হচ্ছে। বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপনের সময় অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এসব বিষয় তুলে ধরেন। এ প্রসঙ্গে তিনি তার বক্তব্যে বলেন, সার্বিকভাবে উৎপাদনশীল খাতে বিনিয়োগ ও উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির মাধ্যমে আমরা উচ্চ প্রবৃদ্ধিতে ফিরে আসব। এর সঙ্গে সুসংহত অভ্যন্তরীণ চাহিদা কল্যাণে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন করা হবে।
বাজেট প্রস্তাব পর্যালোচনা করে দেখা যায়, প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য পূরণে ক্রমান্বয়ে কৃচ্ছ সাধনের নীতি থেকে বের হয়ে আসছে সরকার। এর অংশ হিসাবে মেগা প্রকল্পসহ প্রবৃদ্ধি সঞ্চালক চলমান ও নতুন প্রকল্পে বিনিয়োগ করা হবে। এ কারণে আগামী অর্থবছরের বাজেটে সরকারি বিনিয়োগ বৃদ্ধি করে জিডিপির ৬ দশমিক ৩ শতাংশে উন্নীত করা হচ্ছে। একই সঙ্গে বিনিয়োগ অনুকূল পরিবেশ তৈরির জন্য নিষ্কণ্টক জমি, উন্নত অবকাঠামো, নিরবচ্ছিন্ন ইউটিলিটি, আর্থিক প্রণোদনা এবং সহজ ব্যবসায়িক প্রক্রিয়ার সুযোগ দেওয়া হবে। এছাড়া অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগ সুবিধা অব্যাহত থাকবে। লজিস্টিক খাতের উন্নয়ন ও আর্থিক ব্যবস্থাপনা সংস্কারের ফলে বিনিয়োগ ও ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রক্রিয়াকরণ সময়, ব্যয় ও জটিলতা কমবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। এর ফলে আগামী অর্থবছর বেরসকারি বিনিয়োগ বৃদ্ধি পেয়ে জিডিপির ২৭ দশমিক ৪ শতাংশ হবে। এই লক্ষ্যে বাজেটে রয়েছে নানা উদ্যোগ।
বাজেট প্রস্তাবে বলা হয়েছে, রেফ্রিজারেটর ও ফ্রিজার উৎপাদনের ক্ষেত্রে স্থানীয় উৎপাদন পর্যায়ে ৫ শতাংশের অতিরিক্ত মূল্য সংযোজন কর অব্যাহতি সুবিধা অব্যাহত থাকবে। এছাড়া এসব উৎপাদনে ব্যবহৃত প্রয়োজনীয় উপকরণ ও খুচরা যন্ত্রাংশ আমদানি ও স্থানীয় ক্রয়ের ক্ষেত্রে বিদ্যমান মূসক (আগাম করসহ) ও সম্পূরক শুল্ক অব্যাহতির সুবিধা ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে। ওয়াশিং মেশিন, মাইক্রোওয়েভ ওভেন, ইলেকট্রিক ওভেনের উৎপাদন পর্যায়ে মূল্য সংযোজন কর ও এগুলো উৎপাদনে প্রয়োজনীয় উপকরণ ও যন্ত্রাংশ আমদানি এবং ক্রয়ের ক্ষেত্রে সমুদয় মূল্য সংযোজন কর সম্পূরক শুল্ক (যদি থাকে) অব্যাহিত সুবিধা ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত বাড়ানো হচ্ছে। ব্লেন্ডার, জুসার, মিক্সার, গ্রাইন্ডার, ইলেকট্রিক কেটলি, রাইস কুকার, মাল্টি কুকার এবং প্রেসার কুকার উৎপাদন পর্যায়ে যেসব সুবিধা আছে সেগুলো ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে। এছাড়া স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনে তথ্যপ্রযুক্তি ও কম্পিউটার শিল্পের বিকাশে নেওয়া হয়েছে নানা উদ্যোগ। এক্ষেত্রে প্রিন্টার, টোনারসহ কম্পিউটার ও ল্যাপটপসহ তথ্যপ্রযুক্তি সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পণ্যের উৎপাদন পর্যায়ে বিদ্যমান রেয়াতি সুবিধা ২০২৬ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বাড়ানো হচ্ছে। স্থানীয় শিল্পের বিকাশে এলএবিএসএ অ্যাসিড এবং এসএলইএস সালফেটের স্থানীয় উৎপাদন পর্যায়ে ৫ শতাংশের অতিরিক্ত মূল্য সংযোজন কর অব্যাহতি সুবিধা ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে বাজেটে।
আরও বলা হয়েছে, ব্যবসার পরিবেশ উন্নয়নে অপটিক্যাল ফাইবার কেবল উৎপাদন পর্যায়ে ৫ শতাংশের অতিরিক্ত মূল্য সংযোজন কর অব্যাহিত দেওয়া হবে। এই অব্যাহতির মেয়াদ ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত রাখা হচ্ছে। হাতে তৈরি বিস্কুটের অব্যাহতি সীমা প্রতিকেজি ১৫০ টাকার পরিবর্তে ২০০ টাকা করা হচ্ছে। এছাড়া কেক (পার্টি কেক ছাড়া) অব্যাহতির সীমার প্রতি কেজি ২৫০ টাকার পরিবর্তে ৩০০ টাকার প্রস্তাব করা হয়েছে। মিষ্টান্নভাণ্ডার সেবা থেকে কাক্সিক্ষত রাজস্ব আদায়ে এ খাতের বর্তমান মূসক হার ১৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ করা হচ্ছে। কৃত্রিম আঁশের তৈরি কাটা ফ্যাবি ক এবং নষ্ট টুকরা (এক মিটারের বেশি দীর্ঘ নয়), বিএসটিআই এ নমুনা হিসাবে বিনামূল্যে সরবরাহ করা ফ্যাব্রিকস (তিন বর্গমিটারের নিচে আকৃতির) এবং ট্যাপস অ্যান্ড ব্র্যান্ডের উৎপাদন পর্যায়ের মূসক অব্যাহতির প্রস্তাব করা হয়েছে। পশুখাদ্য হিসাবে ব্যবহৃত নারিকেল বা এর বর্জ্যরে উৎপাদন পর্যায়ে মূসক অব্যাহতি দেওয়া হচ্ছে। ব্যবসা-বাণিজ্য সহজীকরণ ও উৎপাদন ব্যয় কমাতে কৃষি কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন যন্ত্রাংশ, আমদানি করা সব ধরনের কনটেইনার, সৌরবিদ্যুতে চলা লবণাক্ত পানি পানযোগ্য করার যন্ত্র এবং নিবন্ধিত এয়ারলাইন্সের আমদানি করা উড়োজাহাজের বিভিন্ন যন্ত্রাংশে আগাম কর অব্যাহতি দেওয়া হচ্ছে।
অর্থমন্ত্রীর বাজেট প্রস্তাবে দেখা যায়, শ্রমিকদের তথ্য সংশ্লিষ্ট ডাটাবেজ করার কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। নারী ও শিশুবান্ধব কর্মস্থল তৈরিতে নানা উদ্যোগ আছে বাজেটে। পরিকল্পনা অনুযায়ী এর মধ্যে আগামী অর্থবছর ঝুঁকিপূর্ণ খাতে কর্মরত শিশুর সংখ্যা ২ হাজার ৮০০ জন কমানোর লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। এছাড়া আইটি ফ্রিল্যান্সিং, সফটওয়্যার ও হার্ডওয়্যার শিল্প, বিপিও, ই-কমার্স রাইড শেয়ারিংসহ ইন্টারনেটভিত্তিক কাজে ২০৩০ সাল নাগাদ কর্মসংস্থান ৩০ লাখে উন্নীত করার পরিকল্পনা রয়েছে। যেটি এখন ২০ লাখ রয়েছে। সেই সঙ্গে তরুণদের দক্ষতা বৃদ্ধি, বৈদেশিক কর্মোপযোগী প্রশিক্ষণ, অর্থনৈতিক অঞ্চল ও আইটি পার্কসহ চলমান উদ্যোগগুলোকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে। সেই সঙ্গে বিভিন্ন পর্যায়ে প্রশিক্ষণ গ্রহণকারীদের ঋণের ব্যবস্থা করার প্রতিশ্রুতিও আছে।
