Logo
Logo
×

শেষ পাতা

ফৌজদারি অপরাধের তথ্য গোপন

চিকিৎসক দম্পতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আইনি নোটিশ

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ১০ জুন ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

চিকিৎসক দম্পতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আইনি নোটিশ

শিশু গৃহকর্মী নির্যাতনের মামলায় গ্রেফতার ও কারাবাসের তথ্য গোপন করে ১৯ বছর চাকরি, পদোন্নতি ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা গ্রহণের অভিযোগে এক চিকিৎসক দম্পতিকে আইনি নোটিশ দেওয়া হয়েছে। ওই দম্পতি হলেন-অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মো. জামাল ও অধ্যাপক ডা. ফাতেমা দোজা।

বর্তমানে ডা. জামাল স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (চিকিৎসা শিক্ষা) ও ডা. ফাতেমা দোজা জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের রেডিওলজি অ্যান্ড ইমেজিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক। তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা ও সাজা হওয়ার কথা থাকলেও তা হয়নি। তাই তিন সচিব, দুই মহাপরিচালক ও এক পরিচালককেও আইনি নোটিশ দেওয়া হয়েছে। তারা হলেন, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব এবং স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এবং জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের পরিচালক। সুপ্রিমকোর্টের অ্যাডভোকেট মো. খবির উদ্দিন ভূঁইয়া এ আইনি নোটিশ দেন।

নোটিশে বলা হয়, তথ্য গোপন এবং সরকারকে মিথ্যা তথ্য দিয়ে সুযোগ-সুবিধা আদায় করার অপরাধে ডা. জামাল ও ডা. ফাতেমা দোজার বিরুদ্ধে কেন বিভাগীয় ও আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না, তা নোটিশ পাওয়ার দুই সপ্তাহের মধ্যে জানাতে বলা হয়েছে। না হয় তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ২২ মে একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত সংবাদের সূত্র ধরে জনস্বার্থে এ নোটিশটি দেওয়া হয়।

নোটিশে আইনজীবী খবির উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, অধ্যাপক ডা. জামাল ও অধ্যাপক ডা. ফাতেমা দোজা তাদের শিশু গৃহকর্মীকে গুরুতর দগ্ধ করে গ্রেফতার হয়ে হাজতবাস করেছিলেন। ফৌজদারি মামলা ও কারাবাসের তথ্য কর্তৃপক্ষকে জানানোর বিধান থাকলেও তা লুকিয়ে প্রতারণার আশ্রয় নেন। জামিনে মুক্তি পাওয়ার পর কারাবাসের দিনগুলো ব্যক্তিগত, পারিবারিক কারণে কর্মস্থলে অনুপস্থিতি দেখিয়ে অর্জিত ছুটি মঞ্জুর করান। অতঃপর ১৯ বছর কর্মরত থেকে দফায় দফায় পদোন্নতি এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করেন।

সরকারি চাকরি বিধিমালা অনুযায়ী ডা. জামাল (গৃহকর্মী নির্যাতনের মামলার ২ নম্বর আসামি) গ্রেফতার হওয়ার দিন থেকে মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তির দিন পর্যন্ত সাময়িক বরখাস্ত থাকার কথা। সেই সময়ে শুধু খোরপোষ ভাতা প্রাপ্য ছিল। ফৌজদারি মামলায় গ্রেফতার হয়ে হাজতবাসের তথ্য গোপন করা সত্ত্বেও ডা. জামাল সাময়িক বরখাস্ত হননি এবং সম্পূর্ণ বেতন-ভাতা নিয়েছেন, যা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। একইসঙ্গে তিনি ১৯ বছরে পর্যায়ক্রমে অধ্যাপক হিসাবে পদোন্নতি পেয়েছেন এবং ১ জানুয়ারি থেকে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালকের (চিকিৎসা শিক্ষা) দায়িত্ব পালন করছেন বলেও নোটিশে উল্লেখ করা হয়। সরকারি চাকরি বিধিমালা অনুযায়ী ডা. জামালের স্ত্রী ও গৃহকর্মী নির্যাতনের মামলার ১ নম্বর আসামি ডা. ফাতেমা দোজার ক্ষেত্রেও সেটি হয়েছে।

নোটিশে তারা দুটি গর্হিত অপরাধ করেছেন বলে উল্লেখ করা হয়। একটি তথ্য গোপন ও অন্যটি সরকারকে মিথ্যা তথ্য দিয়ে সুযোগ-সুবিধা আদায় করা। এ অপরাধের জন্য তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা ও দণ্ড হওয়ার প্রয়োজনীয়তা থাকলেও তিন সচিব, দুই মহাপরিচালক ও এক পরিচালক যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি। তাদের এমন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড এবং তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ না করাটা সরকারি কর্মচারী বিধিমালা লঙ্ঘন এবং জনস্বার্থবিরোধী। তারা সরকারি চাকরি করার যোগ্যতা হারিয়েছেন এবং যে বেতনভাতা গ্রহণ করছেন তা জনগণের অর্থ আত্মসাতের শামিল। আর এ কারণেই এই আইনি নোটিশ বলে উল্লেখ করেছেন আইনজীবী খবির উদ্দিন ভূঁইয়া।

জানা যায়, নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলার বিন্নাকুড়ি গ্রামের মাতৃহীন শিশু গৃহকর্মী মোস্তাকিনাকে ২০০৪ সালের ১ মে গরম ইস্তিরি দিয়ে দগ্ধ করেছিলেন চিকিৎসক দম্পতি ফাতেমা দোজা ও জামাল। ফাতেমা দোজা তখন ছিলেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার আর জামাল ছিলেন স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতালের ক্যাজুয়ালটি বিভাগের রেজিস্ট্রার। ওই ঘটনার পরদিন ২ মে তাদের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেছিলেন রমনা থানার তৎকালীন উপপরিদর্শক (এসআই) মো. আবদুল্লাহেল বাকী। সেদিনই ঢাকার পরীবাগ থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। পরদিন আদালতের আদেশে এ চিকিৎসক দম্পতিকে জেলহাজতে পাঠানো হয়। পরে তারা জামিনে বের হন।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম