Logo
Logo
×

শেষ পাতা

জাবিতে ৪ দিন লেগুনা আটকে রাখার পেছনে ছাত্রলীগের চাঁদাবাজি

Icon

মোসাদ্দেকুর রহমান, জাবি

প্রকাশ: ০৩ আগস্ট ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

জাবিতে ৪ দিন লেগুনা আটকে রাখার পেছনে ছাত্রলীগের চাঁদাবাজি

ফাইল ছবি

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) ৪ দিন লেগুনা আটকে রাখার পেছনে ছাত্রলীগের চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগে জানা যায়, ২৫ জুলাই বিকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হল গেটের সামনে অবস্থান নিয়ে সাভার-আশুলিয়া রুটে চলাচলকারী লেগুনাগুলো আটকাতে শুরু করেন শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। জাবি ছাত্রলীগের সহসভাপতি আবুল কালাম আজাদ, আব্দুল্লাহ আল ফারুক ইমরান, শাহ পরাণ ও হাসান মাহমুদ ফরিদ, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন ও লেলিন মাহবুব এবং উপ-ছাত্রবৃত্তি বিষয়ক সম্পাদক আল-রাজি সরকার প্রমুখের নির্দেশে লেগুনাগুলো আটকে রাখা হয়। পরে যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন লেগুনাগুলোর চাবি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে চলে যান।

এরপর রাতে মালিক সমিতির নেতারা এলে কয়েকটি লেগুনা ছেড়ে দেওয়া হয়। আর বাকি ১১টি লেগুনা আটকে রাখা হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে। এরপর ২৬ জুলাই বিকালে আরও ১৩টি লেগুনা আটকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে আনা হয়। মোট ২৪টি লেগুনা ২৮ জুলাই পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হলের পাশে রাখা হয়। তখন ছাত্রলীগ নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা জানান, মালিকপক্ষের সঙ্গে আলোচনা না করে লেগুনাগুলো ছাড়বেন না।

চালক ও মালিকপক্ষ জানান, এ রুটে প্রায় দুই শতাধিক লেগুনা চলাচল করে। সেগুলোকে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ নেতাদের দিনপ্রতি ২৫ টাকা করে চাঁদা দিতে হতো। সে হিসাবে মাসিক দেড় লাখ টাকা চাঁদা দিতেন তারা। তবে ২ মাস ধরে চাঁদা দেওয়া বন্ধ ছিল। কিন্তু আবারও চাঁদা আদায় করতে চান ছাত্রলীগ নেতারা। এবার লেগুনা প্রতি ১০০ টাকা দাবি করছেন তারা। তা দিতে অস্বীকৃতি জানানোয় লেগুনাগুলো আটকে রাখেন তারা।

এদিকে লেগুনা আটকে রেখে মালিকপক্ষের কাছে চাঁদা আদায়ের একটি ভিডিও এ প্রতিবেদকের হাতে এসেছে। ভিডিওতে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের মওলানা ভাসানী হল মসজিদের ছাদে শাখা ছাত্রলীগের ১নং সহসভাপতি সাজ্জাদুল ইসলাম সাজ্জাদের কাছে চাঁদার টাকা নিয়ে আসেন লেগুনা মালিক মিন্টু গাজী ও ফজা। এ সময় মিন্টু গাজী সাজ্জাদের হাতে তিন বান্ডিল টাকা তুলে দেন।

শাখা ছাত্রলীগের এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, মিন্টু গাজী ও ফজা সহসভাপতি সাজ্জাদের হাতে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা তুলে দেন। চাঁদার টাকার একটা অংশ চলে যায় মীর মশাররফ হোসেন হলে অবস্থানকারী ছাত্রলীগ নেতাদের কাছে। তারা হলেন-সহসভাপতি আজাদ, ইমরান, শাহ পরাণ, ফরিদ, দেলোয়ার, লেলিন এবং আল-রাজি সরকার।

এ ব্যাপারে জানতে লেনিন মাহবুব ও দেলোয়ার হোসেনকে একাধিকবার ফোন করলেও কেউ তা ধরেননি। চাঁদার বিষয়ে লেগুনার মালিক ফজা বলেন, লেগুনা চালানো বাদ দিতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগকে টাকা দিতে হয়, এমনকি পুলিশকেও। এছাড়া আরও মানুষকেও টাকা দিতে হয়। সাজ্জাদকে কত টাকা দিয়েছেন-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি মন্তব্য করতে রাজি হননি।

সাজ্জাদুর রহমান সাজ্জাদ বলেন, মিন্টু গাজীর সঙ্গে আমার ব্যবসায়িক সম্পর্ক রয়েছে। সেই হিসাবে সে আমাকে টাকা দেয়। যে ভিডিওটার কথা বলা হচ্ছে, সেটি গত বছরের। আমাকে ফাঁসানোর জন্য এসব করা হচ্ছে। গত সপ্তাহে লেগুনা আটকে রেখে টাকা আদায়ের অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা।

শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান লিটন বলেন, চাঁদা আদায়ের ব্যাপারে আমি অবগত নই। কোনো অভিযোগও আসেনি। তবে কেউ যদি এমন কাজে জড়িত থাকে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আকতারুজ্জামান সোহেল বলেন, ‘আমি এ বিষয়ে কিছু জানি না। বিশ্ববিদ্যালয়ে তাদের লেগুনা ৩ দিনের মতো আটকে ছিল এজন্যই তারা আমাদের ওপর মিথ্যা অভিযোগ দিচ্ছে। এটি গত বছর নভেম্বরের ঘটনা। তারা এটা এখন কেন টেনে আনছে তা বুঝছি না। সাজ্জাদ এ টাকা পেতেন। তবে এখানে চাঁদাবাজির কোনো ঘটনা ঘটে থাকলে আমরা শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেব।’

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ মীর মশাররফ হোসেন নেতাকর্মী

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম