কুবি ভিসির বেফাঁস মন্তব্য
সাংবাদিক ইকবালকে বহিষ্কারে ৩৩ নাগরিকের উদ্বেগ
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০৭ আগস্ট ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
সংবাদ প্রকাশের জেরে একটি জাতীয় দৈনিকের কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় (কুবি) সংবাদদাতা ইকবাল মনোয়ারকে বহিষ্কারের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন দেশের ৩৩ বিশিষ্ট নাগরিক। তারা অবিলম্বে নিবর্তনমূলক বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার ও দুর্নীতির সপক্ষে বক্তব্য দেওয়ায় ভিসিকে জাতির কাছে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানান।
সংবাদমাধ্যমে রোববার পাঠানো এ সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা এবং নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগগুলো অন্যতম উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় সাংবাদিক ইকবাল মনোয়ারকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এক্ষেত্রে যথাযথ প্রশাসনিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়নি। ৩১ জুলাই মার্কেটিং বিভাগের নবীনবরণ অনুষ্ঠানে ভিসি অধ্যাপক ড. এএফএম আবদুল মঈন বলেন, ‘দুর্নীতি হচ্ছে, তাই বাংলাদেশে উন্নয়ন হচ্ছে।’ ভিসির এই আলোচিত বক্তব্য নিয়ে দৈনিক যায়যায়দিন পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হয়। এতে ক্ষুব্ধ হন ভিসি। প্রকাশিত সংবাদের সূত্র ধরে ২ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয় সংবাদদাতা ইকবালকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ইকবাল মনোয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হিসাবে নয়, বরং একজন সংবাদকর্মী হিসাবে তিনি তার পেশাগত দায়িত্ব পালন করেছেন। তার রিপোর্টে কেউ সংক্ষুব্ধ হলে প্রতিবাদের সুনির্দিষ্ট আইনি প্রক্রিয়া রয়েছে। সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি এজন্য প্রতিবাদলিপি পাঠাতে পারেন। প্রয়োজনে প্রেস কাউন্সিলে অভিযোগও করতে পারেন। কিন্তু তা না করে শাস্তি দেওয়া হয়েছে। যা স্বাধীন সাংবাদিকতার অধিকার হরণের পর্যায়ে পড়ে।
বিবৃতিদাতাদের মধ্যে রয়েছেন-অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক মাহবুব উল্ল্যাহ, সাবেক রাষ্ট্রদূত মেজর জেনারেল (অব.) আ ম স আ আমিন, মানবাধিকারকর্মী নূর খান লিটন, রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক আবদুল লতিফ মাসুম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক আসিফ নজরুল, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ কামরুল আহসান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ তানজীম উদ্দিন খান, সাবেক কূটনীতিক সাকিব আলী, পরিকল্পনাবিদ ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আকতার মাহমুদ, বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (আইপিডি) নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক আদিল মুহাম্মদ খান, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমেদ প্রমুখ।
এছাড়া বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন প্রকৌশলী ম. ইনামুল হক, পরিবেশ ও জলবায়ু অর্থায়ন বিষয়ক বিশ্লেষক এম জাকির হোসাইন খান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক কামরুন্নেসা খন্দকার, পরিবেশবিজ্ঞানী অধ্যাপক আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার, সিনিয়র সাংবাদিক ও কলামিস্ট আবুল কালাম মানিক, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সভাপতি ফজলে রেজা সুমন, সাধারণ সম্পাদক শেখ মুহম্মদ মেহেদী আহসান, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি এম আবদুল্লাহ, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল- ইউএসর বাংলাদেশ ও পাকিস্তান কান্ট্রি স্পেশালিস্ট সুলতান মোহাম্মদ জাকারিয়া, সায়েন্টিফিক বাংলাদেশের সম্পাদক ড. মুনির উদ্দিন আহমেদ, নাগরিক বিকাশ ও কল্যাণের (নাবিক) সভাপতি ব্যারিস্টার শিহাব উদ্দিন খান, জলবায়ু গবেষক ও আবহাওয়াবিদ মোস্তফা কামাল পলাশ, আইনজীবী অধিকার পরিষদের সমন্বয়ক ব্যারিস্টার মো. জীশান মহসীন, নাগরিক পরিষদের আহ্বায়ক মোহাম্মদ শামসুদ্দিন, বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার মুসতাসীম তানজীর, নারী উদ্যোক্তা ও মানবাধিকারকর্মী আশরাফি হাসান, সিভিল রাইটস ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (সিআরআই,বি) এক্সিকিউটিভ প্রেসিডেন্ট আহসান হাবীব, লেখক ও গবেষক জাকারিয়া পলাশ, মানবাধিকারকর্মী ইজাজুল ইসলাম, লেখক ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক সোহেল রানা এবং ইন্টার প্রেস নেটওয়ার্কের (আইপিএন) নির্বাহী পরিচালক এহসানুল হক জসিম।
বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের দাবি বিএফইউজে’র : কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) উপাচার্যের বক্তব্য নিয়ে প্রতিবেদন করায় সাংবাদিক ও শিক্ষার্থী ইকবাল মনোয়ারকে কুবি থেকে সাময়িক বহিষ্কারের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে)। অবিলম্বে তার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে নেতারা বলেন, অন্যথায় পেশাদার সাংবাদিকদের শীর্ষ সংগঠন বিএফইউজে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করতে বাধ্য হবে।
দপ্তর সম্পাদক সেবীকা রানী স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে বিএফইউজে সভাপতি ওমর ফারুক ও মহাসচিব দীপ আজাদ বলেন, আত্মপক্ষ সমর্থনের কোনো সুযোগ না দিয়ে ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন কুবি উপাচার্য। প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদ করার সুযোগ ছিল। কিন্তু প্রচলিত নিয়মকানুন না মেনে স্বেচ্ছাচারী আচরণ করা হয়েছে। নবীনবরণ অনুষ্ঠানে কুবি উপাচার্য যে বক্তব্য দিয়েছেন-তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠে কারও এমন বক্তব্য দেওয়া বিস্ময়কর।
