৯ জনকে আসামি করে স্ত্রীর মামলা
এমপি ওয়ারেসাতকে প্রতারণার ফাঁদে ফেলে সুবিধা আদায়
নেত্রকোনা প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৬ আগস্ট ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
নেত্রকোনা-৫ (পূর্বধলা) আসনের সংসদ-সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা ওয়ারেসাত হোসেন বেলাল বীর প্রতীককে অপহরণ, তার স্বাক্ষর জাল ও নাম ভাঙিয়ে টাকা আদায়ের অভিযোগে মামলা হয়েছে। বুধবার রাতে ওয়ারেসাত হোসেনের স্ত্রী রওশন হোসেন নয়জনের নামোল্লেখ করে পূর্বধলা থানায় মামলাটি করেন।
মামলায় প্রধান আসামি করা হয়েছে নাদিয়া আক্তার (২৬) নামের স্নাতকোত্তর পড়ুয়া এক তরুণীকে। ২ নম্বর আসামি করা হয়েছে তরুণীর ছোট ভাই পূর্বধলা সরকারি কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তাইফকে (২০)। অন্য আসামিরা হলেন-পূর্বধলা উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সোলায়মান হোসেন, সংসদ-সদস্যের ঘনিষ্ঠ (পিএস) হিসাবে পরিচিত ফেরদৌস আলম (৪২), কামরুজজামান উজ্জ্বল (৪২), কলেজ শিক্ষক নাদেরুজ্জামান স্বপন (৪২) ও রতন পাল (৩২), ছাত্রলীগ কর্মী শাহ আলীম (৩২) এবং সংসদ সদস্যের গাড়িচালক শফিকুল ইসলাম (৪৫)। তবে আসামিরা অভিযোগকে ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, আসামিরা ওয়ারেসাত হোসেনের কাজকর্ম দেখাশোনা করতেন। একপর্যায়ে তারা এমপি’র আস্থাভাজন হয়ে ওঠেন। এই সুযোগে তারা নানাভাবে ওয়ারেসাত হোসেনকে প্রতারণার ফাঁদে ফেলে বিভিন্ন ধরনের সুযোগ-সুবিধা নিতেন।
এজাহারে বাদী উল্লেখ করেন, ফেরদৌস আলম ও কামরুজ্জামান উজ্জ্বলকে সংসদ-সদস্য ওয়ারেসাত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও অফিস আদালতে কাজ দেখভালের মৌখিক দায়িত্ব দেন। কিন্তু তারা সংসদ-সদস্যের নাম ভাঙিয়ে অনকে টাকা আত্মসাৎ করে। অন্য আসামিরা ৭ ফেব্রুয়ারি ওয়ারেসাত হোসেনকে ভুল বুঝিয়ে তার গ্রামের বাড়ি কাজলা থেকে একটি গাড়িতে ঢাকায় নিয়ে যায়। সেখানে সংসদ-সদস্যের নিজের বাসা উত্তরায় না নিয়ে ধানমন্ডি এলাকায় একটি বাসায় নিয়ে আটকে রাখে। পরে গাড়িচালক সংসদ-সদস্যের পরিবারকে জানায়, ওয়ারেসাত হোসেন বিদেশে চলে গেছেন।
বাদী আরও উল্লেখ করেন, তার স্বামীকে (ওয়ারেসাত হোসেন) জিম্মি করে স্বাক্ষর জাল করে নাদিয়া আক্তারের সঙ্গে বিয়ের একটি ভুয়া কাবিননামা তৈরি করা হয়। এরপর স্বাক্ষর জাল করে তাকে (রওশন হোসেন) তালাকের একটি কাগজ ফটোকপি করে বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে দেওয়া হয়। পরে ২৭ মার্চ বিকালে পরিবারের লোকজন খোঁজাখুঁজি করে ঢাকার একটি বাসা থেকে সংসদ-সদস্যকে অসুস্থ অবস্থায় উদ্ধার করেন। পরদিন চিকিৎসার জন্য তাকে মালয়েশিয়ায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে মেয়ের বাসায় রেখে চিকিৎসা শেষে ১১ আগস্ট দেশে আনা হয়।
এ বিষয়ে বক্তব্যের জন্য ওয়ারেসাত হোসেনের মুঠোফোন নম্বরে কল করা হলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়। মামলার বিষয়ে আসামি ফেরদৌস আলম যুগান্তরকে বলেন, ‘মামলাটি সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। একজন সংসদ-সদস্যকে অপহরণ করলে দেশজুড়ে আন্দোলন শুরু হয়ে যেত। এছাড়া এজাহারে অপহরণ করে যে সময়ে আটকিয়ে রাখার কথা বলা হয়েছে, ওই সময়ের মধ্যে সংসদ-সদস্য নির্বাচনি এলাকায় বিভিন্ন সভা-সমাবেশে যোগ দিয়েছেন। কেন যে এমন ঘটনা সাজিয়ে মামলা করা হলো, তা বুঝতে পারছি না।’
প্রধান আসামি নাদিয়া আক্তার বলেন, ‘এসব ঘটনা শুনলে খারাপ লাগে। বিষয়টি খুবই লজ্জাজনক। অনেকেই আমাকে ফোন করে জানতে চাচ্ছেন। আমার সঙ্গে যদি বিয়ে হয়ে থাকে, তবে আমি আমার স্বামীকে কেন আটকিয়ে রাখব? আর কেনই বা স্বাক্ষর জাল করতে যাব? আমি এখন এসব বিষয় নিয়ে বিব্রত। সংসদ-সদস্যের সঙ্গে আমাদের পরিবারের সখ্য আছে, তা ঠিক। আমার ভাইকে তিনি নেতা বানিয়েছেন। আসা-যাওয়া হতো, কিন্তু অন্য কোনো বিষয় নেই। মামলায় যা উল্লেখ করা হয়েছে তা ভিত্তিহীন।’
পূর্বধলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম জানান, মামলায় অপহরণ ও বিশ্বাস ভঙ্গ করে প্রতারণার উদ্দেশ্যে জাল কাবিননামা ও জাল তালাকনামা তৈরির কথা বলা হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করে আসামিদের গ্রেফতার করা হবে।
বীর মুক্তিযোদ্ধা ওয়ারেসাত হোসেন বেলাল দীর্ঘ ২০ বছর ধরে পূর্বধলা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি টানা তিনবারের সংসদ-সদস্য।
