চলতি মাসেই দুটি শৈত্যপ্রবাহ
আজ থেকে তাপমাত্রা আরও কমবে
ঘূর্ণিঝড় মিগজাউমের প্রভাবে শীতের আগমনি বার্তা
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০৮ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
ঘূর্ণিঝড় মিগজাউমের প্রভাবে দেশের তাপমাত্রা কমেছে। গত দুই দিন দেশের বিভিন্ন স্থানে মাঝারি থেকে ভারি বৃষ্টিপাত হয়েছে। আবহাওয়া অফিস বলেছে, আজ থেকে তাপমাত্রা ১ থেকে ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমতে পারে।
এছাড়াও চলতি ডিসেম্বরে দেশে মৃদু থেকে মাঝারি আকারে দুটি শৈত্যপ্রবাহের আশঙ্কা রয়েছে। সংস্থাটির মতে, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব পড়েছে ঋতু পরিবর্তনে। যে কারণে অগ্রহায়ণ শেষ হয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত শীতের দেখা নেই।
এদিকে তাপমাত্রার এই তারতম্যে শীতকালীন ফসলে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, এ অবস্থা চলতে থাকলে আগামী দিনি জলবায়ুর উপযোগী ফসলের ব্যাপারে চিন্তাভাবনা করতে হবে। এজন্য দীর্ঘমেয়াদি গবেষণা দরকার।
জানতে চাইলে সহকারী আবহাওয়াবিদ কাজী জেবুননেসা বৃহস্পতিবার যুগান্তরকে বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আবহাওয়ায় তারতম্য হচ্ছে। কারণ, স্বাভাবিকভাবেই এখন শীতের মৌসুম চলছে; কিন্তু শীতের দেখা মিলছে না।
তিনি বলেন, সম্প্রতি বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড়ের কারণে সারা দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি থেকে ভারি বৃষ্টিপাত হয়েছে। শুক্রবার সকাল থেকে এটি স্বাভাবিক হবে। তবে এদিন থেকে সারা দেশে তাপমাত্রা ১ থেকে ৩ ডিগ্রি কমতে পারে। এতে শীতের প্রভাব বাড়বে। তিনি আরও বলেন, এ মাসে দুটি শৈত্যপ্রবাহের আশঙ্কা করা হচ্ছে। দেশের উত্তরাঞ্চল তেঁতুলিয়া থেকেই শৈত্যপ্রবাহ শুরু হবে। অন্যান্য জায়গায়ও পড়বে।
ছয় ঋতুর এ বাংলাদেশে অগ্রহায়ণ ও পৌষকে শীতকাল বলা হয়। এ দুই মাসে বেশি শীত পড়ে। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে গত কয়েক বছরে তাতে ছন্দপতন হয়েছে। বৃহস্পতিবার ছিল ২২ অগ্রহায়ণ। এ সময়ে শীত থাকার কথা। কিন্তু এখনো রাজধানীতে মানুষ রাতে সিলিং ফ্যান চালিয়ে ঘুমায়। গায়ে শীতের পোশাকও ওঠেনি। এ অবস্থা শুধু ঢাকায় নয়, ঢাকার বাইরেও।
বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলেও শীতের তীব্রতা এখন পর্যন্ত অনুভূত হচ্ছে না। আবহাওয়া পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, এ মাসে দিন ও রাতের তাপমাত্রা স্বাভাবিক অপেক্ষা কিছুটা বেশি থাকতে পারে। তবে মাসের শেষভাগে দেশের কোথাও কোথাও ১-২টি মৃদু বা মাঝারি মাত্রার শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। অর্থাৎ, তীব্র শীতের অনুভূতি পেতে হলে ডিসেম্বরের শেষভাগ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। বৃহস্পতিবার ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ২৭ ডিগ্রি এবং সর্বনিম্ন ১৯ ডিগ্রি। এ অবস্থায় ১ থেকে ৩ ডিগ্রি কমলে শীত বাড়বে। শীতের সময়কাল সাধারণত ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত হিসাব করা হলেও এ সময়কালটা ধীরে ধীরে পরিবর্তন হচ্ছে।
আবহাওয়াবিদদের মতে, প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে একটা নির্দিষ্ট মাত্রায় উষ্ণতা বাড়লে একে এল নিনো পরিস্থিতি বলে। আর এই এল-নিনোর প্রভাবে তাপমাত্রা বাড়ে এবং শীতের প্রভাব কম থাকে। এ সময়ে পূর্ব থেকে পশ্চিমে প্রবাহিত বায়ুর গতিবেগ কম থাকে। সাগরপৃষ্ঠে বাষ্পায়নের হার কমে যায়, যে কারণে বায়ুতে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ কমে। জলীয় বাষ্পের পরিমাণ কমে গেলে তা তাপমাত্রা কমাতে কম প্রভাব রাখে।
এটি বৃষ্টিপাত কমানোর ক্ষেত্রেও ভূমিকা রাখে। আর এই ‘এল নিনো’র প্রভাবে এবার শীতে তাপমাত্রা স্বাভাবিকের তুলনায় একটু বেশি থাকতে পারে। আবহাওয়া অফিসের রিপোর্টে বলা হয়েছে, বছরের একটি নির্দিষ্ট সময় সূর্য পৃথিবীর কাছে চলে আসে। আবার আরেক সময়ে দূরে চলে যায়। সূর্য দূরে অবস্থানের কারণেও শীত পড়ে। সাধারণত জুন থেকে ২১ সেপ্টেম্বর সূর্য বাংলাদেশের অংশে খুব কাছে চলে আসে। আবার ২১ সেপ্টেম্বর থেকে ২১ ডিসেম্বর সূর্য দূরে যেতে থাকে। দূরত্ব বৃদ্ধির ফলে সৌরশক্তির পরিমাণ কমে আসে।
দিনের ছোট হয়ে আসে রাত বড় হয়। এতে দিনে সূর্যকিরণ কম পায় রাতে বিকিরণের সময় বেশি থাকে। এ কারণে রাত ঠান্ড থেকে ঠান্ডাতর হতে থাকে। এ হিসাবে ডিসেম্বরের মাঝামাঝি থেকে শেষের দিকে সাময়িকভাবে বাংলাদেশের উত্তর ও পশ্চিমের সীমান্তবর্তী জেলায় মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে।
সাধারণত তাপমাত্রা ৮ থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকলে সেটাকে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বলে। তাপমাত্রা ৬ থেকে ৮ ডিগ্রি হলে মাঝারি, ৪ থেকে ৬ ডিগ্রি তীব্র এবং চার ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমে এলে অতি তীব্র শৈত্যপ্রবাহ বলা হয়ে থাকে। তবে জানুয়ারির আগে এবার জাঁকিয়ে শীতের আশঙ্কা নেই।
বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন, উষ্ণতা বৃদ্ধিসহ নানা কারণেই তাপমাত্রা পরিবর্তনের ধরন পালটে যাচ্ছে। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, ২৪ ডিগ্রি সেলসিয়ায় তাপমাত্রাকে সর্বোচ্চ স্বস্তিদায়ক তাপমাত্রা হিসাবে বিশ্বব্যাপী বিবেচনা করা হয়। এটা ধীরে ধীরে কমে ২০-১৮ ডিগ্রির নিচে নামতে থাকলে শীতের অনুভূতি হতে থাকে।
এ মাসে দেশের সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা স্বাভাবিক অপেক্ষা যথাক্রমে ১ দশমিক ২ ডিগ্রি বেশি এবং সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস কম ছিল। অধিদপ্তরের তথ্যে, এ বছর স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণও কম ছিল। এতেও ছিল এল নিনোর প্রভাব। জুন-জুলাইয়ে রেকর্ড পরিমাণ কম বৃষ্টিপাত হয়েছে। আগস্ট-সেপ্টেম্বরে বৃষ্টি বেশি হলেও তা ছিল স্বাভাবিকের তুলনায় খানিকটা কম। যে কারণে এ বছর বিশ্বব্যাপী সর্বোচ্চ উষ্ণতার রেকর্ড হয়েছে।
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা বলছেন, দেশের অন্যতম খাদ্যশস্য গম। আর গমের জন্য দিনে পর্যাপ্ত আলো এবং রাতে প্রচণ্ড শীত দরকার। অর্থাৎ গম উৎপাদনের জন্য ১৮-২২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা সবচেয়ে উপযোগী। কিন্তু এবারের আবহাওয়ার যে চিত্র এবং শীত কম হওয়ার যে পূর্বাভাস করা হচ্ছে, তাতে গমের ভালো ফলন পাওয়া যাবে না।
এছাড়াও শীতে আমাদের আলু, নানা ধরনের সবজি, সরিষাসহ বিভিন্ন ফসল হয়ে থাকে। এ ফসলগুলোর জন্য পর্যাপ্ত শীত দরকার। শীত বেশি হলে ফসলের উৎপাদন বাড়ে, কম হলে উৎপাদনে প্রভাব পড়ে। এ অবস্থার মোকাবিলায় জলবায়ু উপযোগী নতুন নতুন ফসল উৎপাদনে যেতে হবে। এজন্য গবেষণায় গুরুত্ব আরও বাড়াতে হবে।
