Logo
Logo
×

শেষ পাতা

চার বছরে অগ্রগতি ৫৮ শতাংশ

ঢাকা অঞ্চলে সেতু প্রকল্পে ধীরগতি

৮১ সেতুর মধ্যে ১৩টির উদ্বোধন * আড়াই বছরের প্রকল্প গড়াচ্ছে সাড়ে ৪ বছরে * গাফিলতির মাধ্যমে প্রকল্প তৈরির ফল -এমএ মান্নান, সংসদীয় কমিটির চেয়ারম্যান

Icon

হামিদ-উজ-জামান

প্রকাশ: ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

ঢাকা অঞ্চলে সেতু প্রকল্পে ধীরগতি

চার বছর পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত বাস্তবায়ন হয়েছে প্রকল্পের ৫৮ শতাংশ। এক হাজার ১৯০ কোটি টাকার মধ্যে খরচ হয়েছে ৬৭২ কোটি টাকা। এর আগে দুই বছর মেয়াদ বাড়ালেও সেই সময়ও শেষ হবে ডিসেম্বরে। কিন্তু বাকি থাকবে অনেক কাজই। এ অবস্থায় প্রকল্পটি সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। কারণ হিসাবে বলা হয়েছে, হাতিরদীয়া ও কুন্ডের বাজার সেতু নির্মাণে জটিলতা, ভূমি অধিগ্রহণের প্রয়োজনীয়তা, সেতুর ধরন পরিবর্তন এবং নতুন সেতু অন্তর্ভুক্তি ইত্যাদি। ‘জরাজীর্ণ, অপ্রশস্ত ও গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে বিদ্যমান বেইলি সেতু এবং আরসিসি সেতু প্রতিস্থাপন (ঢাকা জোন)’ প্রকল্পে বিরাজ করছে এমন চিত্র।

৩০ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হয় প্রকল্পটির বিভাগীয় প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (ডিপিইসি) সভা। সড়ক ও জনপথ বিভাগের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত সভায় সভাপতিত্ব করেন সড়ক পরিবহণ ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এবিএম আমিন উল্লাহ নূরী। সভা সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান এমএ মান্নান রোববার যুগান্তরকে বলেন, নির্বাহী মন্ত্রণালয় এবং পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের যৌথ সহযোগিতার মাধ্যমে প্রকল্প এগিয়ে নিতে হয়। এক্ষেত্রে পারস্পরিক সহায়তা দরকার। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই আমি দেখেছি ডিজাইন, অ্যালাইনমেন্ট নির্ধারণ, ব্যয় প্রাক্কলন এবং সম্ভাব্যতা সমীক্ষা ঠিকমতো না করেই প্রকল্প তৈরি করা হয়। গাফিলতির মাধ্যমে প্রকল্প এলাকায় না গিয়ে ম্যাপ দেখে তাড়াহুড়া করে এসব করার ফলে পরবর্তীতে প্রকল্প সংশোধনের প্রয়োজন দেখা দেয়। এটার দায়িত্ব সম্পূর্ণ নির্বাহী মন্ত্রণালয়ের। অর্থাৎ যে মন্ত্রণালয় প্রকল্প নেয় এবং বাস্তবায়ন করে তাদের। এমন পরিস্থিতি কাম্য নয়। পরিকল্পনা কমিশনে প্রশাসনিকভাবে তেমন কিছু করার থাকে না।

সূত্র জানায়, ২০২০ সালের ১ জানুয়ারি থেকে শুরু হয়ে ২০২২ সালের জুনের মধ্যে বাস্তবায়নের লক্ষ্য ছিল। কিন্তু এর মধ্যে কাজ এগিয়ে নিতে ব্যর্থ হওয়ায় ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত দুই বছর সময় বাড়ানো হয়। এক্ষেত্রে বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) সুপারিশ নেওয়া হয়েছিল। ডিপিইসি সভায় জানানো হয়, প্রকল্পের মূল অনুমোদিত ডিপিপিতে (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) ৩৬টি প্যাকেজ রয়েছে। এর একটি প্যাকেজে ছিল মানিকগঞ্জ সড়ক বিভাগের আওতাধীন পরিদর্শন বাংলো নির্মাণ। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে এটির দরপত্র প্রক্রিয়া গ্রহণ না করে স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বাকি ৩৫টি প্যাকেজ সেতু নির্মাণসংক্রান্ত। এগুলোর মধ্যে ৩৩টির ইতোমধ্যেই কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে। ৮টির কাজ শেষ হয়েছে। বাকি ২৫টির কাজ চলছে। শেষ হওয়া প্যাকেজগুলোর আওতায় ১৩টি সেতু এরই মধ্যে উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী। এছাড়া দুটি প্যাকেজের দরপত্র অনুমোদন প্রক্রিয়াধীন।

সভায় জানানো হয়, প্রকল্পটির আওতায় মুন্সীগঞ্জ সড়ক বিভাগের অধীনে মুন্সীগঞ্জ (হাতিমারা) কুন্ডের বাজার-শ্রীনগর জেলা সড়কে ১২০ মিটার সেতু নির্মাণের সংস্থান ছিল। কিন্তু ওই স্থানে করা হাইড্রোমরফোলজি স্টাডির ফলাফল অনুযায়ী ১৫০ মিটার সেতুর প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। পাশাপাশি অনুমোদিত এ সেতুটি ইছামতি নদীর উপর হওয়ায় ভার্টিক্যাল ক্লিয়ারেন্স জটিলতায় উচ্চতা বৃদ্ধিরও প্রয়োজন পড়েছে। এদিকে প্রকল্পটির আওতায় নির্মিতব্য গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার মাওনা-শ্রীপুর-মনোহরদী আঞ্চলিক মহাসড়কে ৯৭ মিটার সেতুর উচ্চতা বেড়ে যাওয়ায় আগের জায়গায় করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদের উপর ৫০০ মিটার দক্ষিণে নতুন জায়গায় সরিয়ে নেওয়ার প্রয়োজন পড়েছে।

সভায় সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের প্রতিনিধি জানান, বিভিন্ন সেতুর ক্ষেত্রে ভূমি অধিগ্রহণের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। কিন্তু নতুনভাবে ভূমি অধিগ্রহণ করা হলেও মৌজাভিত্তিক জমির দাম কম হওয়ায় এ খাতে বাড়তি টাকার প্রয়োজন হবে না। তিনি আরও বলেন, মূল অনুমোদিত ডিপিপিতে পিসি গার্ডার বা আরসিসি গার্ডার হিসাবে ৭৮টি এবং স্ল্যাব সেতু হিসাবে ৩টিসহ ৮১টি সেতুর সংস্থান ছিল। ডিপিপি অনুমোদনের সময় কিছু সেতুর নকশা অনুমোদন প্রক্রিয়াধীন ছিল। সেতুগুলোর চূড়ান্ত নকশায় সেতুর ধরনে কিছুটা পরিবর্তন হয়। সেক্ষেত্রে পিসি গার্ডার বা আরসিসি গার্ডার হিসাবে ৬০টি এবং স্ল্যাব সেতু বা কালভার্ট হিসাবে ২১টি সেতু চূড়ান্ত নকশা পাওয়া যায়। ডিপিইসি সভায় আরও জানানো হয়, প্রকল্পটির প্রথম সংশোধনী প্রস্তাবে প্রস্তাবিত চারটি নতুন প্যাকেজের আওতায় ৫টি সেতু অন্তর্ভুক্ত করা হবে।

ডিপিইসি সভার সভাপতি এবিএম আমিন উল্লাহ নুরী স্বাক্ষরিত কার্যবিবরণীতে বলা হয়েছে, পরিকল্পনা কমিশন, আইএমইডি, অর্থবিভাগ ও সভায় উপস্থিত অন্যান্য সদস্যদের ঐকমত্যের ভিত্তিতে গৃহীত সিদ্ধান্তগুলো প্রতিপালন করতে হবে। এছাড়া সড়ক পরিবহণ ও সেতু মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী পর্যায়ে ডিপিপি সংশোধনের প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য সুপারিশ করা হলো। প্রকল্পের আওতায় চলমান প্যাকেজগুলোর চুক্তির মেয়াদ বৃদ্ধি করা যাবে না। প্রকল্পে যেসব প্যাকেজের দরপত্র আহ্বান প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করে কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে সেসব প্যাকেজে পুনরায় কোনো ভেরিয়েশন প্রস্তাব করা যাবে না। সরেজমিন পরিদর্শন করে ভূমি অধিগ্রহণের পরিমাণ ও ব্যয় নির্ধারণ করে প্রথম সংশোধিত ডিপিপিতে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

ঢাকা ধীরগতি

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম