ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সাহিত্য নিয়ে বিশেষ আয়োজন
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সাহিত্য
সাব্বির আহমেদ সুবীর
প্রকাশ: ১৯ আগস্ট ২০২১, ০৬:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
সাহিত্যে দেশের অন্যতম অগ্রণী জনপদ ব্রাহ্মণবাড়িয়া। প্রাচীনকাল থেকেই ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সমৃদ্ধ সাহিত্যের একটি নিজস্ব পরিবেশ গড়ে উঠেছে। লোক কাহিনি, লোকসংগীত, ছড়া ও প্রবাদ-প্রবচনে এখনো এর কিছু কিছু নিদর্শন বর্তমান রয়েছে।
মীর্জা হোসেন আলী থেকে কবি আল মাহমুদ এবং সাধক কবি মনোমোহন দত্ত থেকে অদ্বৈত মল্লবর্মণ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সাহিত্যের উজ্জ্বল অধ্যায়। বলা যায়, সাহিত্য সাধনা ও লেখালেখিতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কবি, সাহিত্যিক ও লেখকদের বিশেষ অবদান রয়েছে। অবদান স্থানীয় পর্যায়ের পাশাপাশি জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়েও বিকশিত হয়েছে।
বাঙালি ঔপন্যাসিক ও সাংবাদিক অদ্বৈত মল্লবর্মণ ১৯১৪ সালের ১ জানুয়ারি বর্তমান ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সদরের গোকর্ণঘাট গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ‘তিতাস একটি নদীর নাম’ শিরোনামের একটিমাত্র উপন্যাস লিখে তিনি বাংলা সাহিত্যের চিরস্মরণীয় ও অমর প্রতিভা হিসাবে সবিশেষ স্বীকৃতি লাভ করেন। তার এ উপন্যাসটি প্রথম ‘মাসিক মোহাম্মদী; পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। মীর আবদুস শুকুর আল মাহমুদ, যিনি আল মাহমুদ নামে অধিক পরিচিত। তিনি ছিলেন আধুনিক বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কবি।
তিনি একাধারে কবি, ঔপন্যাসিক, প্রাবন্ধিক, ছোটগল্প লেখক, শিশুসাহিত্যিক এবং সাংবাদিক ছিলেন। ফজল শাহাবুদ্দীন বাংলাদেশের একজন খ্যাতিমান আধুনিক কবি। তিনি বিংশ শতকের ষাট দশকের কবি হিসাবে চিহ্নিত। র. আ. ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এমপি ১৯৫৫ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার চিনাইর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি লেখক ও সম্পাদক হিসাবে খ্যাতি অর্জন করেছেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষণধর্মী ‘মত ও পথ’ পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশকও তিনি।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদরের কবি-সাহিত্যিক ও লেখকদের তালিকায় আরও রয়েছেন- লেখক ও গবেষক রামকানাই দত্ত, কাজীপাড়ায় জন্মগ্রহণকারী মরমি কবি ও গীতিকার সৈয়দ আবদুল বারী শাহ্, ঘাটুয়া গ্রামের ইতিহাস লেখক ও ইসলামী চিন্তাবিদ আবদুল লতিফ খান, কবি মারুফুল ইসলাম, কাজীপাড়ার মরমি কবি ও গীতিকার মোহাম্মদ আবদুল কাদের আহম্মদ মাশরেকী, উত্তর মৌড়াইলের কবি জমিলা বেগম, শিলাউর গ্রামের কবি সুফিয়া কামাল, লোককবি ও গীতিকার দুলা মিয়া মাস্টার, কথাশিল্পী ও লেখক মিন্নত আলী, লেখক ও ভাষাসংগ্রামী সামিউল আহমদ খান ফটিক, মেড্ডার কবি রফিকুল ইসলাম, কবি মজিবুল কারী, কবি তপন রায়, গল্পকার স্বাতী চৌধুরী, লেখক মো. আনোয়ার হোসেন, লেখক মো. সিরাজ উদ্দিন, কবি সুভাষ রঞ্জন রায়, লেখক বজলুর রহমান, লেখক রোকেয়া রহমান, কবি ও সাহিত্যিক রুমা মোদক, পাইকপাড়ার হরলাল রায়, ছোটহরন গ্রামের ভাষাসংগ্রামী ও লেখক মহিউদ্দিন আহমাদ, কবি ও গীতিকার এ কে এম হারুনুর রশীদ, গীতিকার ও লেখক আবুল কালাম ইলিয়াস, লেখক ও শিক্ষাবিদ মোখলেছুর রহমান খান, লেখক ও গবেষক মুহম্মদ মুসা, কবি ও কথাসাহিত্যিক মানিক রতন শর্মা, কবি ও প্রাবন্ধিক তিতাশ চৌধুরী, কবি মাহবুব-উল-করিম, সাংবাদিক ও লেখক সৈয়দ আবদুল আজহার, কবি দিলীপ দাস, কবি ও শিল্পী মায়া রায়, কবি ও প্রাবন্ধিক খান মোহাম্মদ ফারাবী, কবি ও সাংবাদিক সাজ্জাদ হোসাইন খান, কবি জয়দুল হোসেন, কবি ও গবেষক মাহবুব পিয়াল, কথাসাহিত্যিক মনীশ রায়, শামছুদ্দিন আহমদ, কবি রুদ্র মোহাম্মদ ইদ্রিস, লেখক ও গবেষক ওবায়দুল্লাহ মামুন, কথাসাহিত্যিক রাজীব নূর, কবি ও সাহিত্যিক শাহীন চৌধুরী ডলি, কবি লিটন দেব, লেখক ও গবেষক রুমা মোদক, কবি ও কথাসাহিত্যিক শামস সোলমান, কবি তানজিম ইসলাম, কবি এহসানুল ইয়াসিন, কবি এইচ এম সিরাজ, কবি হেলাল উদ্দিন হৃদয়, কবি শরাফত হোসেন, কবি মো. কবির হোসেন, কবি সাইফুল ইসলাম রিপন, কবি ও ছড়াকার নাগর হান্নান, কবি সরকার আমিন, শিরীন আক্তার, কবি রাবেয়া জাহান তিন্নি, সেলিম হোসাইন হাওলাদার, কবি মনিরুল ইসলাম শ্রাবন, সুমন সাহা, হুমায়ূন কবির, রিপন দেবনাথ, কবি গোলাম মোহাম্মদ মোস্তফা, প্রাবন্ধিক ও গবেষক মানবর্ধন পালের জন্ম ময়মনসিংহের হালুয়াঘাটে হলেও কর্মজীবনে এসে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় স্থিত হয়েছেন।
কবি মহিবুর রহিমের জন্ম কিশোরগঞ্জ হলেও বর্তমানে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় অবস্থান করছেন। চিনাইর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব কলেজে অধ্যাপনা করেন। কথাসাহিত্যিক শাদমান শাহিদের জন্ম কিশোরগঞ্জের হলেও চাকরি সূত্রে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বসবাস করেন।
বিজয়নগরের সৈয়দ বাহাউদ্দিন বেনু মিয়া, কবি মিলি চৌধুরী, চৌধুরী শামসুর রহমান, প্রাবন্ধিক গবেষক ও সাহিত্যিক নারায়ণ চৌধুরী, প্রখ্যাত চিত্রশিল্পী ধীরাজ চৌধুরী, কবি ইমাউল হক, লেখক ও গবেষক এ এম আতাউল হক প্রমুখ।
জেলা সদর ছাড়াও উল্লেখযোগ্য কবি-সাহিত্যিকদের মধ্যে রয়েছেন আশুগঞ্জ উপজেলার ছান্দসিক কবি আবদুল কাদির, প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ কৈলাশচন্দ্র সিংহ, গীতিকার ও সাধক আনন্দ চন্দ্র নন্দী, লেখক অপূর্ব চন্দ্র ভট্টাচার্য, কবি ও গবেষক সুফী জুলফিকার হায়দার, কবি ও গবেষক মোহাম্মদ মাহফুজ উল্লাহ, লেখক, গবেষক ও বিপ্লবী আখিল চন্দ্র নন্দী, লেখক শেফালী নন্দী, কথাশিল্পী জ্যোতিরিন্দ্র নন্দী, লোককবি ও লোকসাহিত্য সংগ্রাহক ফয়জুল হক মৃধা, কবি শিকদার ইসহাক আলী, কবি শিহাব সরকার, কথাসাহিত্যিক নূরুদ্দিন জাহাঙ্গীর, কবি ও লেখক আনিস পারভেজ, ইতিহাস লেখক ও গবেষক অধ্যক্ষ মো. শাহজাহান আলম সাজু, লেখক সৌমিক সাত্তার, কবি ও গীতিকার কাজী বর্ণাঢ্য, কবি ও গল্পকার রবিউল আলম নবী, কবি এমরানুর রেজা, কবি কাজী রূপাই, কবি খাদিজা ঈভ প্রমুখ।
সরাইলের প্রাবন্ধিক ও সাংবাদিক আহমেদুর রহমান, সাংবাদিক ও লেখক হাবিবুর রহমান মিলন, কবি সুবীর দাস, লেখক মোহাম্মদ মোস্তফা আলী, লেখক ও গবেষক সানাউল হক, লেখক ও গবেষক মোহাম্মদ মাহবুব উল্লাহ, লেখক ও গবেষক মুহাম্মদ ছানাউল হক, কবি ও প্রাবন্ধিক জিয়াউল হক মৃধা, ছান্দসিক প্রবোদ চন্দ্র সেন, শিক্ষাবিদ ও লেখক দ্বিজ দাস দত্ত, কবি খুরশেদুল ইসলাম, কবি তালুকদার আবুল কাশেম, রম্যলেখক শামীমুল হক, কবি ও গবেষক হিমাদ্রী শেখর সরকার, কবি ওয়াহিদ রহমান, শিক্ষাবিদ ও লেখক শেখ মো. আবু হামেদ, কৃষিবিষয়ক লেখক জহিরুল হক ভূঁইয়া, লেখক ও গবেষক শেখ মজলিশ ফুয়াদ, ‘ক’ কবি হিসাবে খ্যাত এস. এম. নাজমুল কবির ইকবাল (ছদ্মনাম ইসমোনাক), শ্যামাসংগীত রচয়িতা বসন্ত কুমার তলাগাত্র, কবি, নাট্যকার, গীতিকার ও সম্পাদক আবিদুর রহমান, সম্পাদক ও লেখক ফজলে রাব্বী, মৃধা আহমাদুল কামাল, কবি আল আমিন শাহীন, রাশিদ উল্লাহ তুষার, মৃধা শামসুদ্দিন বেলাল, কবি লিটন হোসাইন জিহাদ, শেখ সিরাজুল ইসলাম, জহিরুল ইসলাম রিপন, আহমেদুর রহমান বিনকাশ, মোঃ শরীফ উদ্দিন, কথাসাহিত্যিক মুহাম্মদ সিরাজ, আহসান উল্লাহ ফরিদ, কবি ও সাহিত্যিক কাজী অমিদ হোসেন।
নাসিরনগর উপজেলার প্রাবন্ধিক গবেষক নালনী কুমার ভদ্র, কবি মতিউল ইসলাম, কবি অথির চক্রবর্তী, গীতিকার, সুরকার ও শিল্পী গিরীন চক্রবর্তী, বাউল গুরু মিয়া, গীতিকার ও বাউল গায়ক অমির ভূষণ চক্রবর্তী, কাজী আবুল কালাম ইলিয়াস, লেখক-গবেষক-প্রাবন্ধিক রমাপ্রসাদ দত্ত, ড. মো. মইনুল ইসলাম, কবি সৈয়দ মোহাম্মদ মাশুক, মোহনলাল দাস, কবি রাজিব ভট্টাচার্য, বাউল গায়ক ও গীতিকার শামসুল হক চিশতি, গীতিকার ও সুরকার মো. মনির হোসেন, লন্ডন প্রবাসী কবি তাবেদার রসুল বকুল প্রমুখ।
আখাউড়া উপজেলার কবি মাশুক চৌধুরী, কবি কল্যাণব্রত চক্রবর্তী, রফিক উদ্দিন ভূঁইয়া, কাজী উজ্জ্বল ইসলাম প্রমুখ।
কসবা উপজেলার লেখক ও গবেষক হাসনাত আবদুল হাই, প্রাবন্ধিক আনিস চৌধুরী, কবি সফিকুল ইসলাম, গল্পকার মোল্লা বাহাউদ্দিন, লেখক মো. হারুনুর রশিদ খান, কবি মো. সোলায়মান খান, লেখক ও গবেষক জহিরুল ইসলাম স্বপন, লেখক এ কে এম শিবলী, কবি গাজী আবু হানিফ, কবি শারমিন সুলতানা, লোকমান হোসেন পলা, কবি হালিমা খানম প্রমুখ।
বাঞ্ছারামপুর উপজেলার লেখক ও প্রত্নতত্ত্ব গবেষক আবুল কালাম মোহাম্ম জাকারিয়া, কবি মনজুরে মওলা, কবি ও গীতিকার আবুল ওমরাহ মোঃ ফখরুদ্দিন, অনুবাদক সাইদুর রহমান, কবি আবদুল মান্নান সরকার, কবি আবুল আজাদ, কবি ও শিশুসাহিত্যিক শাহজাহান আবদালী, কবি সেলিম রেজা, কবি নূর কামরুন নাহার, কবি কামরুজ্জামান, লেখক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) প্রফেসর ডা. এ কে মাহবুবুল হক, কবি ও গবেষক শেখ সাদী, কবি হামিদা আনজুমান, এ কে সরকার শাওন, কবি পিয়ারা পারভীন, কবি ফ. ম নাসির উদ্দিন, কবি ফেরদৌসী লাকী, লেখক ও নাট্যকার আশেক এমরান, কবি ও লেখক সাংবাদিক সাব্বির আহমেদ সুবীর, মনিরুজ্জামান পামেন, কবি কবির হুমায়ুন, কবি জহিরুল ইসলাম রোমান, কবি সনি আক্তার সুচি প্রমুখ।
নবীনগর উপজেলার গীতিকার মনোমোহন দত্ত, কবি ও ভাষাসংগ্রামী আহমদ রফিক, ভুবন রায়, কবি ও নজরুল গবেষক সুফী জুলফিকার হায়দার, গীতিকার শৈলেন্দ্র চক্রবর্তী, লেখক ও সম্পাদক অনিলধন ভট্টাচার্য, গীতিকার অজয় ভট্টাচার্য, লেখক ও সম্পাদক সঞ্জয় ভট্টাচার্য, লেখক সাইদুর রহমান, লেখক খান সারওয়ার মুরশিদ, লেখক সুনীতি চৌধুরী, আহমেদ আলী, লেখক ও সম্পাদক শফিক রেহমান, নাট্যকার আজিজ শিশির, মুহাম্মদ হারুন-উর-রশিদ, লেখক ও গবেষক মোবারক হোসেন খান, ইতিহাসবিদ ড. সিরাজুল ইসলাম, লেখক আহমেদ হুমায়ুন, প্রাবন্ধিক, লেখক ও গবেষক আকবর আলী খান, নাট্যকার ও অভিনেতা আলী যাকের, ছড়াকার ও চিত্রশিল্পী বিমলেন্দ্র চক্রবর্তী, শিশুসাহিত্যিক আলী ইমাম, কবি ফজল শাহাবুদ্দিন, সাহিত্যিক আজিজ মিসির, সিরাজুল করিম, লেখক ও ইতিহাস সংকলক শোয়েব চৌধুরী, কাজী মোঃ ওয়াজেদ উল্লাহ জসিম, আবু কামাল খন্দকার, কবি ও কথাসাহিত্যিক আমির হোসেন, সৈম আকবর, ফখরুল ইসলাম মুস্তি, ফখরুল হুদা পথিক, শামসুল আরেফিন খান, কবি তৌহিদ আহমেদ চৌধুরী, লেখক এস এম মাহবুব, আব্বাস উদ্দিন হেলাল, তপু রায়হান, শফিকুল ইসলাম, হাবিবুর রহমান স্বপন, নুসরাত জাহান জেরিন প্রমুখ।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার প্রবাদ প্রবচন
১। কম পানির মাছ বেশি পানিতে
গেলে ফরফর করে।
২। কইতে কইতে মুখ বাড়ে,
খাইতে খাইতে পেট বাড়ে।
৩। এক পাগলের জ্বালায় বাঁচি
না, আবার সাত পাগলের মেলা।
৪। আমি কি নাচন জানি না,
জাইন্যা নাচন করিনা।
৫। ওপর দিকে থুথু দিলে নিজের
গায়েই পড়ে।
৬। উচিত কথা কইলে, মোতির বাপ ভালা না।
৭। আগে গেলে বাঘে খা, পিছে
গেলে ট্যাহা ফা (পায়)।
৮। আ মানুষ অইব, আ ঘাট ঘাট
অইব, আ পথ পথ অইব।
৯। আগের আল যেমনে যা, পাছের
আল এমনে যা।
১০। অইছে পুতে ডাহে না বাপ,
অইব পুতের আশা।
