Logo
Logo
×

সাহিত্য সাময়িকী

হবিগঞ্জ জেলার সাহিত্য নিয়ে বিশেষ আয়োজন

বাংলা সাহিত্যে হবিগঞ্জ

Icon

পৃথ্বীশ চক্রবর্ত্তী

প্রকাশ: ০৯ জুন ২০২২, ০৬:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

সারি সারি টিলায় ৫৪টি মনোমুগ্ধকর চা বাগানে পরিবেষ্টিত হবিগঞ্জ সাহিত্য সংস্কৃতির ঐতিহ্যবাহী জনপদের নাম। যুগে যুগে অত্রাঞ্চল সাহিত্য সংস্কৃতির তীর্থ ভূমি হিসাবে খ্যাতি পেয়েছে আর তা সম্ভব হয়েছে এখানকার খ্যাতিমান কবি, সাহিত্যিক, দার্শনিকদের মাধ্যমেই। প্রতি পরতে পরতে ছড়িয়ে আছে এখানে সাহিত্যের মনোরম উপাদান। আর তা কাজে লাগিয়েছেন এখানকার কবি, ছড়াকার, গীতিকার, প্রবন্ধকাররা।

মধ্যযুগের বাংলাসাহিত্যের অন্যতম মহাকবি সৈয়দ সুলতান (১৫৫০-১৬৪৮) হবিগঞ্জের লস্করপুরের। তার শ্রেষ্ঠ ও বৃহত্তম কবিকীর্তি হচ্ছে ‘নবীবংশ’। কবিবল্লভ ‘পদ্মাপুরাণের লাছাড়ী’ রচনা করেছিলেন। কবীর দাস বৈষ্ণব অষ্টাদশ শতাব্দীর বৈষ্ণব কবি। তিনি সুললিত পদ্যে ‘রামকৃষ্ণ চরিত’ রচনা করেন। মধ্য যুগের বাংলাসাহিত্যে কোরেশী মাগন একটি অবিস্মরণীয় নাম। তাঁর ‘চন্দ্রাবতী’ একখানা কাহিনি কাব্য। ত্রিলোচন নন্দী অষ্টাদশ শতাব্দীর কবি। তিনি মহাভারতের আদি পর্ব ও শান্তি পর্ব রচনা করেছিলেন। পদ্মনাথ ভট্টাচার্যের ‘প্রবন্ধাষ্টক’, ‘হিন্দু বিবাহ সংস্কার’ উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ। ‘নিশীতে যাও ফুল বনে’ গানের রচয়ীতা মরমি সাধক, লেখক, কবি, তত্ত্ব কথার উদ্ভাবক শেখ ভানু (১৮৮৯-১৯১৯); যাকে নিয়ে গবেষণা হচ্ছে। বিশ শতকের ত্রিশ ও চল্লিশের দশকে অনিল কুমার রায় আনন্দবাজার ও হিন্দুস্থান স্টান্ডার্ড পত্রিকার হবিগঞ্জ সংবাদদাতা হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। ‘অলকা ও জীবন’ নামে তার একখানা উপন্যাস প্রকাশিত হয়েছিল। বিপিন চন্দ্র পাল (১৮৫৮-১৯৩২) ছিলেন বিশ্বের বাগ্মি নেতা, অখণ্ড ভারত আন্দোলনের প্রথম সারির নেতা। তার লিখিত ২৫টিরও বেশি বই বিশ্বের প্রধান বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পড়ানো হয়। আধুনিক বাংলা গদ্যের রূপকার প্রখ্যাত রম্য সাহিত্যিক ড. সৈয়দ মুজতবা আলীর (১৯০৪-১৯৭৪) পৈতৃক নিবাস হবিগঞ্জ জেলার বাহুবল উপজেলার উত্তরপুর গ্রামে। তিনি বিশ্বের ১৫টি ভাষা আয়ত্ত করেছিলেন। ভ্রমণ করেছেন অনেক দেশ। অবিশ্বাস্য, পঞ্চতন্ত্র, চাচা কাহিনি, দেশ বিদেশ, শবনম, মুসাফির তার কালজয়ী রচনা।

কাজী গোলাম রহমানের ‘বানিয়াচঙ্গ দর্পণ’ গ্রন্থটি এশিয়ার বৃহত্তম গ্রাম বানিয়াচঙ সম্পর্কে জানতে পাঠের দাবি রাখে। হেমাঙ্গ বিশ্বাস (১৯১২-১৯৮৭) একজন বাঙালি সংগীতশিল্পী ও সুরকার। বাংলা ও অসমিয়া ভাষায় তার লিখিত গ্রন্থ ‘লোকসংগীত শিক্ষা’। ক্ষিতীশচন্দ্র চৌধুরী (১৯০১) বিশ্বভারতীর উপাচার্য পদ অলংকৃত করেন। তার রচিত জীবনী গ্রন্থ ‘শ্রীরামকৃষ্ণ চরিত’ ও ইংরেজি গ্রন্থ History &

Economics of the Land System of Bengal সুধীমহলে উচ্চ প্রশংসিত হয়েছিল। ক্ষিতীশচন্দ্র দাস (১৯১৫-২০১০) রচিত গ্রন্থ ‘নানা রঙের দিনগুলি’। ক্ষীরোদচন্দ্র পুরকায়স্থের লেখা Grammar and Composition গ্রন্থটি বহুদিন বিদ্যালয়ে পাঠ্য ছিল। মনসামঙ্গল কাব্যের একজন জনপ্রিয় কবি জানকীনাথ। উনিশ শতকের শেষ দিকে অথবা বিশ শতকের প্রথম দিকে তিনি মনসামঙ্গল কাব্য রচনা করেন। বিশ শতকের প্রথম দশকে ভট্টকবি চন্দ্র মোহন ভট্টের ‘ভাওয়ালের কবিতা’ উল্লেখযোগ্য।

ইতিহাসবিদ কিরণচন্দ্র চৌধুরী (১৯১৪-১৯৮৭) রচিত ‘ভারতের ইতিহাস কথা’ (৩ খণ্ড) বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠ্য। অধ্যাপক কৃষ্ণকুমার পাল চৌধুরী প্রকাশিত গ্রন্থ : ‘আসুন দেশের কথাভাবি’ এবং ‘জীবন সায়াহ্নে ভাবনা’ ইত্যাদি। কৃষ্ণগোবিন্দ পাল রচিত ‘বৃহৎ পদ্মাপুরাণ’ ১৮৭৭ সালে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রকাশিত হয়েছিল। সাধক ও ভাবুক কবি কেশবলাল গোস্বামী ‘কৃষ্ণ সঙ্গীত’ গ্রন্থ রচয়িতা। কবি কৃষ্ণদেব ভট্টাচার্য ‘নিয়ত মঙ্গলচণ্ডীর পাঁচালী’ রচনা করেছিলেন। শিক্ষাজীবনের সব শ্রেণিতে প্রথম স্থান অধিকারী শাহ এ.এম.এস. কিবরিয়া (১৯৩১-২০০৫) ১৯৯৬-২০০১ সালে তিনি বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী ছিলেন। ২০০১ সালে তিনি হবিগঞ্জ-১ আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তার প্রকাশিত গ্রন্থ ‘মৃদু ভাষণ’, ‘চিত্ত যেথা ভয় শূন্য’, ‘বাংলাদেশ অ্যাট দ্য ক্রসরোডস্’ উল্লেখযোগ্য।

১৯৭৭ খ্রি. গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের উপদেষ্টা হিসাবে দায়িত্ব পালনকারী বীর মুক্তিযোদ্ধা ও ভাষাসৈনিক জাকারিয়া খান চৌধুরী রচিত গ্রন্থাবলি : ‘সত্য সুখের সন্ধানে’, ‘নির্বাচিত কবিতা’ এবং Songs of the Soul ইত্যাদি।

এনামুল হক মোস্তফা শহীদ (১৯৩৮-২০১৬) বাংলাদেশের একজন প্রখ্যাত রাজনীতিবিদ, বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন সংগঠক এবং লেখক ছিলেন। তিনি বাংলাদেশের একজন সাবেক জাতীয় সংসদ সদস্য এবং সমাজকল্যাণমন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তার প্রকাশিত গ্রন্থ : ‘খোয়াই নদীর বাঁকে’, ‘সবুজের দেশ’, ‘নীল সাগরের বুড়ো জেলে’। সৈয়দ হাসান ইমাম হোছেনী চিশতী রচিত গ্রন্থ ‘শানে পাঞ্জাতন’ ও ‘তরফের ইতিকথা’। আফজাল চৌধুরী (১৯৪২-২০০৪) ষাট দশকের অন্যতম কবি। তার প্রকাশিত গ্রন্থ ‘কল্যাণব্রত’, ‘শ্বেতপত্র’, ‘সামগীত দুঃসময়ের’। প্রফেসর নিখিল ভট্টাচার্য্য (১৯৪২) রচিত ‘The Essentials of business origation’ পাঠ্যগ্রন্থ। তিনি জীবন নদী, চন্দ্রপুলিসহ অনেক বিখ্যাত গ্রন্থ প্রণেতা।

শাবিপ্রবির সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান (১৯৪২-২০০৬) অসংখ্য গ্রন্থের প্রণেতা। তার সব লেখা মোটামুটি ‘মো. হাবিবুর রহমান রচনাবলি’তে উঠে এসেছে। সিলেটের ইতিহাস-ঐতিহ্যের শেকড়সন্ধানী গবেষক ও রম্য লেখক বহুগ্রন্থ প্রণেতা সৈয়দ মোস্তফা কামাল (১৯৪৩-২০১৩) রচিত প্রকাশিত গ্রন্থ : রঙের বিধি, হাসে পাকিস্তান, কৈলাশ সমাচার উল্লেখযোগ্য। এম.এ. করিম চৌধুরী রচিত ‘দেখা থেকে লেখা’। এ ছাড়া তিনি সম্পাদনা করেছেন ‘জননেতা দেওয়ান ফরিদ গাজী’। নবীগঞ্জের দেওপাড়ার এম. এ. রব প্রকাশিত গ্রন্থ : ‘নিসর্গের কষ্ট’, ‘সায়াহ্ন ধূসর’, ‘রৌদ্ররুষ্ট জীবন’। তরফদার মুহাম্মদ ইসমাইল রচিত ‘হবিগঞ্জের মরমি সাধক’, তার শ্রমের ফসল ‘ভাষা আন্দোলনে হবিগঞ্জ’ ও ‘সুফি দার্শনিক কবি শেখভানু’। সংগীত শিক্ষক ভূপিকা রঞ্জন দাশ (১৯৫৩-২০২২)-এর গবেষণামূলক গ্রন্থ ‘সংগীতজ্ঞ নজরুল’ এবং ‘কবি নজরুল ও তার বিভিন্ন সময়কাল’,

কবি ও গবেষক এ কে শেরাম (১৯৫৩) প্রকাশিত গ্রন্থ : বসন্ত কুন্নিপালগী লৈরাং (আটাশ বসন্তের ফুল), চৈতন্যে অধিবাস। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলার প্রফেসর ড. ভীষ্মদেব চৌধুরী প্রকাশিত গ্রন্থ : ‘বাংলাদেশের সাহিত্য গবেষণা ও অন্যান্য’, ‘দু-চারটি অশ্রুজল : রবীন্দ্রগল্পের ভিন্ন পাঠ’ ইত্যাদি। জীবনবাদী কবি পার্থসারথি চৌধুরী (১৯৫১-২০১২) রচিত প্রকাশিত গ্রন্থ : ‘বসন্তে বৈশাখ’, ‘শিরীষ তলার গাঁথা’ উল্লেখযোগ্য। এনায়েত হাসান মানিক রচিত গ্রন্থ ‘ভালবাসার উপাখ্যান’, ‘বাঁশি শুনেছি’, ‘সকাল মানে সূর্যমুখী’ উল্লেখযোগ্য। প্রফেসর ড. আবুল ফতেহ ফাত্তাহ্ রচিত উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ : কুসুমের তরবারি, সবুজিমা বাংলাদেশ, মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান (কিশোর জীবনী)। ড. জালাল আহমেদ (জালাল ফিরোজ)-এর প্রকাশিত উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ : ‘পার্লামেন্টারি শব্দকোষ’, সম্পাদনা : জসীম উদ্দিন জন্মশত স্মারকগ্রন্থ (যৌথ)। ড. শরদিন্দু ভট্টাচার্য বাপ্পু রচিত গ্রন্থ : সিলেটের বাউল সংগীতে শাহজালাল ও চৈতন্যের প্রভাব (গবেষণা), ঝড়ের পর ঝড় ইত্যাদি। আবদুন নুর চৌধুরী ‘পারস্য কবি শেখ সাদী’ নামে একখানা গ্রন্থ রচনা করেছিলেন। খোইরম কামিনীকুমার মণিপুরী ও বাংলাভাষায় কবিতা লিখেন। তার প্রকাশিত গ্রন্থ ‘তান্না’। বাহুবলের গুরুনারায়ণ চৌধুরী উনিশ শতকের প্রথমদিকে ‘ব্রজবধু কাব্য’ রচনা করেন।

সঞ্জীব চৌধুরী (১৯৬৪-২০০৭) তার দলছুটের চারটি অ্যালবামে কাজ করার পাশাপাশি অনেক গান লিখে সুরারোপ করেছিলেন। রবীন্দ্রসাহিত্যে বিশেষজ্ঞ কামিনীকুমার অধিকারী ভাগবতভূষণ সংস্কৃতে ‘গীতাঞ্জলি’র ভাবানুবাদ করে ভারত সরকার কর্তৃক পুরস্কৃত হয়েছিলেন। শান্তা ইসলাম রচিত গ্রন্থ তুমি রবে নীরবে, হৃদয়ে একূল ওকূল, চন্দ্রালোকে চন্দ্র গ্রহণ ইত্যাদি। হোসনে আরা জলি প্রকাশিত গ্রন্থ : নজরুল ও অন্যান্য প্রসঙ্গ (গবেষণা), কার্টুনের দেশে, শিশুদের নজরুল। কবি ও গবেষক আবু সালেহ আহমেদ রচিত ‘মোহের নিস্তদ্ধ মোহনা’, বানিয়াচঙ্গের শতজন, প্রেমের কিংবদন্তি ইত্যাদি প্রকাশিত গ্রন্থ। আমিরুল ইসলাম চৌধুরী মূলত পাঠ্যপুস্তক প্রণেতা। প্রকাশিত গ্রন্থ শিশুদের প্রারম্ভিক বিকাশে মা বাবার ভূমিকা (শিশুপাঠ্য)। প্রতিমা বনিকের ‘জয়িতা’, ‘হালুম আমি বাঘ মামা’, ‘স্বাধীনতা ডাকছে আমায়’ উল্লেখযোগ্য।

এলাকার অনেক কবি সাহিত্যিকরাই আরও আগেই পাড়ি জমিয়েছেন বিদেশ বিভুঁইয়ে। তবে তারা নিয়মিতই লিখে যাচ্ছেন সমকালীন পত্র-পত্রিকায়। গ্রন্থও প্রকাশিত হচ্ছে। তাদের অনেকের লেখাই সমৃদ্ধ করছে আমাদের বাংলাসাহিত্যকে। এ রকমই কয়েকজন লেখকের কথা এখানে বলব। কবি আহমদ শাহাবের ‘কালো জোব্বা’, ‘শঙ্খে বাজে ঝড়’, কুতুব আফতাব (১৯৬৮-২০২১)-এর ‘উড়তে দেই না কষ্টের ধুলোবালি’, ‘দহন কালের বৃষ্টি’, জাহাঙ্গীর রানার ‘আনন্দগান চোখের জলে’, ‘তবু ফুল ফোটে’, গোলশান আরা রুবীর ‘আমার মনের কথা’, লুৎফুর রহমান চৌধুরী রাকিবের ‘ছুঁইতে পারি না স্বপ্নগুলো’, আবুল কালাম আজাদ ছোটনের ‘জন্মভূমি’, এম এ ওয়াদুদের ‘হৃদয় জুড়ে অলক্তরাগ’, শাহ আলমগীরের ‘মুক্তিযুদ্ধের রক্তনদী’, মোহাম্মদ গোলাম কিবরিয়ার ‘জীবন পথের বাঁকে’ শহীদুজ্জামান চৌধুরীর ‘প্রেমবীণা’ সুখপাঠ্য।

লেখালেখিতে যারা নিরলস শ্রম দিয়ে যাচ্ছেন তাদের সংখ্যাও কম নয়। তাদের মধ্যে রুমা মোদক প্রকাশিত গ্রন্থ ‘নির্বিশঙ্ক অভিলাষ’। তিনি যুগ্মভাবে সম্পাদনা করেছেন ‘এ সময়ের গল্প’। অরূপ আফজল-এর কাব্যগ্রন্থ ‘এই শৃঙ্খল এই পরবাসে’, প্রতিশ্রুতিশীল কবি পৃথ্বীশ চক্রবর্ত্তীর প্রকাশিত গ্রন্থাবলী : ‘নোনাজলের বৃষ্টি’, ‘বৃষ্টি পড়ে তিথির বাড়ি’, ‘দুর্গম পথের যাত্রী’, ‘পড়শি আসে ভাষার মাসে’, ‘বিষটি ঝরে তিমা পড়ে’, ‘স্বাধীনতা এসেছিল শেখ মুজিবের হাতে’সহ ১১টি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। তার সম্পাদনায় সম্প্রতি মুজিববর্ষ উপলক্ষ্যে ১৭১ জনের লেখা দিয়ে ‘শতবর্ষে বঙ্গবন্ধু’ প্রকাশিত হয়েছে।

কবি আবু তাহের চৌধুরীর ‘ছন্দমাত্রা’, কবি কাজী হাসান আলী সম্পাদিত ‘হেরার নবী’, কাওসার মুমিন শাওনের কাব্যগ্রন্থ ‘সুতাং এর বাঁকে’, ছড়াকার তারেশ কান্তি তালুকদারের ‘রাশি রাশি ফুলের হাসি’, প্রাবন্ধিক সনজিৎ চৌধুরী সনজনের ‘বাংলাদেশ রাষ্ট্র ও সমাজচিন্তা’, কবি আসাদ ইকবাল সুমনের ‘যাত্রা বিরতির পর যা যা ঘটে’, গল্পকার সঞ্জয় কুমার ধামের ‘সম্পর্ক’, মোতাহার হোসেন তালুকদারের ‘সুবর্ণ রাতে বিবর্ণ স্বপ্ন’, রত্নদ্বীপ দাশ রাজু সম্পাদিত ‘বিজয় বার্তা’, তাসলিমা খানের ‘অসংবৃত অন্তরের কথা’ (কাব্য)।

হবিগঞ্জ জেলার ইতিহাস ঐতিহ্য নিয়ে প্রকাশিত গ্রন্থ নিয়ে আলোকপাত করছি।

বানিয়াচঙ্গের পণ্ডিত অনাদিচরণ বিশ্বাস অচ্যুতচরণ চৌধুরীর ‘শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত’ গ্রন্থে বানিয়াচঙ্গ সম্পর্কে প্রকাশিত কতিপয় তত্ত্ব ও তথ্যগত ভুলের প্রতিবাদ করে তিনি রচনা করেন ‘বানিয়াচঙ্গ কাহিনি’। বানিয়াচঙ্গ সম্পর্কে প্রকাশিত এ গ্রন্থখানা দুষ্প্রাপ্য। গ্রন্থটি সম্ভবত চল্লিশের দশকের প্রথমার্ধে প্রকাশিত হয়েছিল।

সাংবাদিক এস আর চৌধুরী সেলিম সম্পাদিত ‘ইতিহাস ঐতিহ্যে নবীগঞ্জ’ এবং অনুসন্ধিৎসু লেখক কাজী শাহেদ বিন জাফরের ‘নবীগঞ্জের ইতিবৃত্ত’ গ্রন্থ দুটি গবেষণামূলক। ‘হবিগঞ্জ ডাইরেক্টরি’ নামে সমগ্র হবিগঞ্জ জেলার ইতিহাস ঐতিহ্য তুলে ধরেছেন ওবায়দুল্লাহ। বর্তমান সময়ে যারা ভালো লেখালেখি করছেন তাদের মধ্যে রয়েছেন : প্রফেসর জাহান আরা খাতুন, প্রফেসর শ্রীনিবাস দে, প্রফেসর ড. আবুল ফতেহ্ ফাত্তাহ্, অধ্যাপক মুজিবুর রহমান, কবি দেওয়ান গোলাম মূর্ত্তজা প্রাবন্ধিক আবদুর রউফ চৌধুরী, কবি প্রমথ সরকার, কবি অপু চৌধুরী, কবি শেরাম নিরঞ্জন, কবি বিথী কবির, ছড়াকার নন্দ দেব রায় নানু, ছড়াকার শিমুল সূত্রধর, ঔপন্যাসিক শেখ আতাউর রহমান ও শান্তময় সূত্রধর শান্ত, কবি কোকিল দাশ, ড. সুদীপ চক্রবর্তী, উজ্জ্বল দাশ, আরিফবিল্লাহ গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী, গোপেশ চন্দ্র সূত্রধর, মৌলানা শায়খ তাজুল ইসলাম, অ্যাডভোকেট শরদিন্দু ভট্টাচার্য টুটুল, সঞ্জয় রায়, আবদুল আহাদ ছাদী, কবি বাদল কৃষ্ণ বণিক, গীতিকবি মো. গোলাম কিবরিয়া, কবি ও গবেষক আফতাব আল মাহমুদ, গীতিকার আলী আমজাদ মিলন, প্রাবন্ধিক ইসমাইল তরফদার, মাহী ইসলাম, সর্দার মোঃ মহিবুল ইসলাম, জিয়াউর রহমান, গীতিকার বিন্দু সূত্রধর ও রাজেশ চক্রবর্ত্তী, বীর মুক্তিযোদ্ধা হায়দার আলী, শায়খ আবদুর রকিব হক্কানী, স্বভাব কবি এম.এ ওয়াহিদ লাভলু, কবি সুবিনয় পুরকায়স্থ, এইচ. এম এ মুকিত পাঠান, মো. রুবেল মিয়া, প্রবাসী আমিনুর রহমান জুন্নুন, মো. রুবেল মিয়া, এম এ জলিল, মনসুর আহমদ আজাদ, মোহাম্মদ আবদুল বাছিত, আমিন আল আসাদ, শাহ সরোয়ার আলী, ডা. মোহাম্মদ আবুল হোসেন, প্রবাসী সালেহ উদদীন তালুকদার সুমন, তানভীর আহমেদ মুসা, দুর্গা বৈষ্ণব জেন্সি প্রমুখ। প্রতিশ্রুতিশীল লেখকদের মধ্যে রয়েছেন তাহের উজ জামান, আবীর ইসলাম, নির্মল দাশ, রাজন আচার্য্য, নিলুপা ইসলাম নিলু, হোসাইন আহমেদ, উত্তম কুমার পাল হিমেল, মো. হাবিবুর রহমান চৌধুরী শামীম, গোলাম রহমান লিমন, মোহিতুর রনি, মজিবুর রহমান, এস এম সাজ্জাদ, গৌছুজ্জামান চৌধুরী, এম.এ কাশেম, মো. আশিকুর রহমান, শাহ মিলাদুর আবেদ, কয়েস আহমদ মাহদী, ইব্রাহিম ইউসুফ, সৈয়দ আনোয়ার আবদুল্লাহ, রাখাল সূত্রধর, মিল্টন তালুকদার, শ্রী মন্টি ঠাকুর অন্যতম।

এই জেলার সম্ভাবনাময় যে একঝাঁক তরুণ লেখক বাংলাসাহিত্য আকাশে উঁকিঝুঁকি মারছেন তাদের মধ্যে রয়েছেন দিপংকর দাশ, মিনহাজ উদ্দীন শরীফ, খায়রুল আলম রাজু, আওতাদ উজ্জামান চৌধুরী তপু, সাহেল আহমেদ, সাইফুল সারং, নয়ন দাশ, পল্লব আচার্য্য, দীপংকর দ্বীপ, শেখ আল আমিন, এমডি হামিদুর, আনাছ মোহাম্মদ, নারায়ণ চক্রবর্ত্তী, কিরণ আচার্য্য, পল্লব আচার্য্য, সমীরণ বৈষ্ণব নিবিড়, লোকমান হোসেন হারুণ, সাদিক আহম্মদ শান্ত, রেজিয়া সুলতানা শিমু, মোস্তাক আহমেদ সানি, কলি চৌধুরী, আনু ইসলাম রেনী, তামান্না রসুল, সুবর্ণা আক্তার, সজল চৌধুরী প্রমুখ।

এই জনপদে কবি, সাহিত্যিক, ছড়াকারদের পাশাপাশি গীতিকারের সংখ্যাও কম নয়। ক্ষীরোদচন্দ্র রায়ের ‘স্বররেখায় জয়দেব’, গোবিন্দ বল্লভের ‘নির্বাণ সঙ্গীত’, ঠাকুর দয়ানন্দের গীতি সংকলন ‘রুদ্রবীণা’ ও ‘ময়নার বুলি’, ছৈয়দ জহুরুল হোসেন রচিত ‘নূরনাজাত’, মরমি কবি কফিল উদ্দিন সরকারর গানের সংকলন ‘রত্নভান্ডার’, শ্রী প্রণয় ভূষণ চক্রবর্ত্তী মিন্টু সম্পাদিত ‘পঞ্চপাঁচালী’ একটি আধুনিক পাঁচালী গ্রন্থ।

গেদু মিয়া সরকারের মরমি গানেগ্রন্থ ‘ভাবের জল’ ও ‘কালবিচ্ছেদ, মো. আবদুস সালামের ‘খুঁজি যারে পাইনা তারে’, মো. গোলাম কিবরিয়ার ‘ভাবের সাম্পান’ ও ‘জীবন নদীর ঢেউ’, জামাল উদ্দিন আহমদের ‘আঁধারে জোছনার আলো’, গোপাল রায়ের ‘মানবতরী’ কণ্ঠশিল্পীদের আলোড়িত করেছে। এখানে প্রথিতযশা কবি, সাহিত্যিক, ছড়াকার, প্রাবন্ধিক, গীতিকার, সাংবাদিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বের যেমন জন্ম হয়েছে, সাধু, সন্ন্যাসী, আউলিয়া, পীর, সাধক, যোগীপুরুষ, আবির্ভাব ঘটেছে তেমনি হবিগঞ্জ সরকারি বৃন্দাবন কলেজের প্রতিষ্ঠাতা বৃন্দাবন চন্দ্র দাসের মতো শিক্ষানুরাগী ও সমাজসংস্কারক ব্যক্তি, আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের উপ সর্বাধিনায়ক মেজর জেনারেল এম. এ. রব, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক দেওয়ান ফরিদ গাজী, মেজর জেনারেল সি আর দত্ত, বুদ্ধিজীবী অনুদ্বৈপায়ন ভট্টাচার্য ও সায়ীদুল হাসান, ব্রাকের প্রতিষ্ঠাতা স্যার ফজলে হাসান আবেদ, সংগীতজ্ঞ, সুবীর নন্দীর মতো বিখ্যাত ব্যক্তিদেরও জন্ম হয়েছে। এখানে প্রতি শতকেই প্রতিশ্রুতিশীল লেখক রয়েছেন। গদ্য, পদ্য, গীত, গান সব শতকেই এখানে সৃষ্টি হয়েছে। এবং এখানকার লেখকরা বিশ্বের যে স্থানেই অবস্থান করছেন সেখানেই বাংলাসাহিত্যের আলো ছড়াচ্ছেন।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম