Logo
Logo
×

সাহিত্য সাময়িকী

নোয়াখালী জেলার সাহিত্য নিয়ে বিশেষ আয়োজন

বাংলা সাহিত্যে নোয়াখালীর অবদান

Icon

একেএম গিয়াস উদ্দিন মাহমুদ

প্রকাশ: ০৬ অক্টোবর ২০২২, ০৬:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য্যের লীলাভূমি নোয়াখালী। উপকূলীয় জেলা নোয়াখালী, ভাঙ্গা গড়ার জেলা নোয়াখালী। শিল্প-সাহিত্যে-সংস্কৃতিতে এ জেলা নয় অবলা। আছে তা নিয়ে অনেক কথা বলা। সাহিত্য রস দূর করে কষ, এনে দেয় যশ। যে বা যিনি থাকেন এ বিষয়ে সরস। মধ্যযুগের অন্যতম খ্যাতিমান কবি ছিলেন আবদুল হাকিম এ জেলারই সন্তান। বাংলাভাষার প্রতি তার অনুরাগ ছিল সুগভীর। ‘চৌধুরী’ লড়াই এ জেলার অন্যতম পালাগান। আবদুল বারীকে সাহিত্যে বিশেষ অবদানের জন্য ব্রিটিশ সরকার ‘কবিরত্ন’ সম্মানে ভূষিত করেন। ৫০-এর দশকে বুদ্ধদেব বসু এবং গোপাল হালদার-এর নাম কার না জানা! তারা বাংলাসাহিত্যে অনন্য অবদান রাখেন। বলা যেতে পারে সাহিত্যের নানা শাখায় নোয়াখালীর বিদগ্ধজনদের দৃঢ় অবস্থান ছিল এবং আছে। নাট্য ব্যক্তিত্ব, নাট্য সমালোচক ও বাগ্মী শহিদ মনির চৌধুরী, শহিদ বুদ্ধিজীবী মোজাম্মেল হায়দার চৌধুরী ছিলেন রবীন্দ্র গবেষক আর কবীর চৌধুরী ছিলেন বিশিষ্ট লেখক ও জাতীয় অধ্যাপক। শ্রী প্যারীমোহন সেন, শ্রী রাজ কুমার চক্রবর্তী, শ্রী অনঙ্গ মোহন দাস, এ.কে.এম মক্রম বিল্লাহ চৌধুরী, শ্রী অশ্বিনী কুমার সোম তত্ত্বনিধি, এ.কে.এম খায়রুল বাশার এরা সবাই ছিলেন ইতিহাসবিদ। নোয়াখালীর ইতিহাস নিয়ে এদের লেখালেখির হাত ছিল বেশ সুদৃঢ়। ড. খালেদ মাসুকে রসুল, শান্তি রঞ্জন কর্মকার, শাহজাহান কিবরিয়া, সিরাজুল ইসলাম খান, ড. সা’দাত হুসাইন, সালাদীন, সৈয়দ লুৎফুল হক, হাবিবুর রহমান, হুমায়ুন কবির, রবিউল হোসেন কচি, মো: নূরুল আমিন জাওহার, অধ্যাপক মো: হানিফ, নোয়াখালীর আঞ্চলিক গানের সম্রাট মো: হাসেম, মো: শাহজাহান, আবদুর রশীদ ওয়াসেকপুরী, আবদুশ শাকুর, ফরহাদ মাজহার, মাখন লাল রায় চৌধুরী, মেজবাহুল হক, মো: ফজলী হোসেন, মো: সফিকুল হক, মো: সিরাজুদ্দীন, মো: গাজী চৌধুরী, ব্যারিস্টার মওদুদ আহম্মেদ, অধ্যাপক আবদুল জলিল, আবদুল মতিন, এতেহশাম হায়দার চৌধুরী, কে.জি মোস্তফা, ভাষাসৈনিক কামাল উদ্দীনসহ প্রমুখ ছিলেন নোয়াখালীর অন্যতম লেখক ও বুদ্ধিজীবী।

অনেক কবিধন্য নোয়াখালী জেলা। এখানে বেড়ে উঠেছেন, জন্ম নিয়েছেন হুমায়ুন করিব, অচিন্ত্য কুমার সেন গুপ্তসহ আরও অনেকেই। আর বর্তমান সময়ের কবিদের তালিকা তো অনেক বিস্তর। তাদের মধ্যে নজরুল গবেষক ড. আবু হেনা আবদুল আউয়াল, আক্তার জাহান শেলী, কে.জি মোস্তফা, প্রফেসর আবুল বাশার, অ্যাড. গোলাম আকবর, ফরহাদ মাজহার, শিরিন সুলতানা, মিরণ মহিউদ্দিন, অ্যাড. মিন্টু সারেং, অ্যাড. এমদাদ হোসেন কৈশোর, সিনিয়র সাংবাদিক জামাল হোসেন বিষাদ, ম. পানা উল্যাহ, প্রত্যয় জসীম, অ্যাড. কাজী খসরু, এস.এম জাহাঙ্গীর, এম ইব্রাহীম মিজি, কাওসার মজুমদার, ফিরোজ শাহ, বকুল আক্তার দরিয়া, রৌশন রুবি, মামুনুর রশীদ মামুন, হানিফ মজুমদার, ইলিয়াস খাঁন, আমীর আবদুল্ল্যাহ, উত্তম দাস, প্রণব আচার্য্য, নিজাম উদ্দীন আজাদ, আশিকুর রহমান, নুর শেলিনা আক্তার রিমন, বজলুল হায়দার, মো: নুরুল হক, শাহীন সোলাইমান, হাবীব ইমন, শহীদুল ইসলাম মুকুল, মোস্তফা ইকবাল, রুহুল শিকস্তি, মাহামুদুল হক ফয়েজ, মশিউর রহমান মিঠু, ফারুক মোজাম্মেল হক, ফারুক আল ফয়সাল, আলমগীর হোসেন, নাদিরা সুলতানাসহ প্রমুখের এক বা একাধিক কাব্যগ্রন্থ রয়েছে যা আমাদের সাহিত্যাঙ্গনের অমূল্য রত্নভান্ডার।

মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে লেখালেখি ও গবেষণা করে এ জেলায় বেশ কয়েকজন পরিচিতি পেয়েছেন। তাদের মধ্যে মোঃ ফখরুল ইসলাম, এ.কে.এম গিয়াস উদ্দিন মাহমুদ, আবু তাহের মীর্জা, সফিক উল্লাহ, জোবাইদা নাসরীন, রফিকুল ইসলাম চৌধুরী, হোসাইন ইফতেখার, অ্যাড. সারোয়ার ই দীন, মো: আজিজুল হক, নুরুল হক, অধ্যাপক মো: হানিফ, অধ্যাপক মো: ওয়ালী উল্লাহ, মুক্তিযোদ্ধা আবু তাহের অন্যতম।

নারী সাহিত্যিকের সংখ্যাও কোনো অংশে কম নয়। রাজিয়া খাতুন চৌধুরানী, হোসনে আরা শাহেদ, অভিনেত্রী ফেরদৌসী মজুমদার, রওনক জাহান, রওশন সালেহা, রওশন জাহান, রেজিনা সোলতানা, রেহানা পুতুল, রাজিয়া বেগম, জুবাইদা নাছরিন, ফরিদুন্নাহার লাইলী, রায়হানা হোসেন, লিলি রহমান, শামা আরজু, শাহানা সিরাজী, শাহানারা স্বপ্না, শিরিন আক্তার, সুমনা চৌধুরী, মৌ মধুবন্তী, আলেয়া ফেরদৌসী, আখতারুন নাহার আলো, আক্তার জাহান শেলী, রামিছা আনজুম মুনিয়া, লায়লা কাওকাইন আরা, লীনা চৌধুরী, রোমানা সুলতানা শিউলী, রহিমা আক্তার মৌ, রায়হানা পারভীন লুনা, রাবেয়া সুলতানা, ফেরদৌস আরা বেগম, নাদেরা বেগম, নুশরাত রুমু, ফেরদৌসি আরফিন ওসমান, জুলফিয়া ইসলামসহ প্রমুখ।

বর্তমান সময়ে অনেকেই লেখালেখির সঙ্গে জড়িত হয়ে নিজেকে করেছেন ঋদ্ধ, সিক্ত। সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, অভিনেতা আতাউর রহমান, সাবেক সেনাপ্রধান মইন উ আহমেদ, ড. আজাদ বুলবুল, সিরাজুল ইসলাম মনির, ফরহাদ মাজহার, ড. আবু কায়েস, মো: সফি উল্যাহ, মো: আবু তাহের, স্বপন দেলোয়ার, আয়াত হোসেন, হরি হর দাস, হাসান মাহবুব বাবু, শাদমান মাহাতাব কিবরিয়া, শফিক হাসান, শাইখ মুহাম্মদ উসমান গনি, শওকত হোসাইন, রুহুল মাহাবুব, রুহুল আমিন বাচ্চু, রোহিত হাসান কিসলু, রফিকুল ইসলাম চৌধুরী, জয়নাল আবেদীন, মোস্তফা ইকবাল, মোবারক হোসেন, মো: শাহ কামাল ভূঞা, মো: সালা উদ্দিন শরীফ, মোবারক হোসেন, মো: রিফাজ উদ্দীন, মো: ওসমান গনি, মো: আবদুল মোতালেব, মো: আজম, মো: মাহবুবুল হক, মাহবুবুর রহমান, মাঈন উদ্দিন আহম্মেদ, আলা উদ্দিন, মুর্শিদুল আলম, আজিজুল হক, ওমর ফারুক, ওসমান মাহমুদ, কবির কাঞ্চন, অ্যাড. কাজী মাঈন উদ্দীন খসরু, প্রদীপ মজুমদার, এ.এস.এম ইউনুস, অ্যাড. গোলাম আকবর, মাহমুদুল হক ফয়েজ, এ.কে.এম গিয়াস উদ্দিন মাহমুদসহ প্রমুখ।

নোয়াখালীর কতিপয় সাহিত্যসেবী নিয়মিত-অনিয়মিত ছোট কাগজ প্রকাশ করে থাকে। যা আমাদের সাহিত্য রসদ জোগায়। কয়েকটি নাম দেওয়া হলো। স্বাধীনতা আমার স্বাধীনতা, সুবর্ণ রেখা, কলম সৈনিক (সম্পা: মিরন মহিউদ্দিন), সুরঞ্জনা (সম্পা: ম. পানা উল্যাহ), নোঙ্গর (সম্পা: সুমন নূর), স্পর্ধা সব সময় (সম্পা: হাবীব ইমন), একদা অজ পাড়া গাঁয়ে জ্যোৎস্না (সম্পা: জামাল হোসেন বিষাদ), জাগরণ (সম্পা: ইসমাইল হোসেন সোহাগ), বিজয় (নোয়াখালী জেলা বিজয়মেলা), দরিয়া (নোয়াখালী জেলা কমিউনিটি পুলিশিং), মেঠোপথ (সম্পা: নুরুল হক), লেখক (সম্পা: কামাল মাসুদ), মহেন্দ্র উপকূল (সম্পা: সৈয়দ রুপক রশীদ), পাক্ষিক চৌমুহনী (সম্পা: মশিউর রহমান মিঠু), অহনা (জাতীয় কবিতা পরিষদ, কোম্পানীগঞ্জ), ন (সম্পা: বিষাদ, ফয়েজুল, শহীদুল, মুকুল), কাশফুল (সম্পা: হোসাইন মাহামুদ হিমেল), ভুলুয়া (সম্পা: সৈয়দ হারুনুর রশীদ), প্রজন্ম (সম্পা: নাজিম উদ্দিন মাহমুদ), পরাবাস্তব (সম্পা: ড. আবু হেনা আবদুল আউয়াল), নোফেল (সম্পা: ড. আবু হেনা আবদুল আউয়াল), প্রাঙ্গণ (সম্পা: সুবল দেবনাথ), স্মরণিকা (নজরুলের বিদ্রোহী কবিতার ৯০ বছর পূর্তি, সম্পা: নুরুন নাহার জেসমিন), বন্ধুতা (সম্পা: মাহমুদুল হাসান), প্রতিস্বর (প্রণব আচার্য্য, সুমন ভৌমিক, সাবাক) এবং নবআশা (সম্পা: আবদুল্যাহ আল মাসুদ) অন্যতম।

নোয়াখালীর ২০০ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতিতে বিশেষ অবদানের জন্য সর্বমোট ৭ জনকে সম্মানিত ও পুরস্কৃত করেন। তারা হলেন-অ্যাড. খসরু, অ্যাড. গোলাম আকবর, ম. পানা উল্যাহ, শিরিন সুলতানা, আক্তার জাহান শেলী, মো: ফখরুল ইসলাম এবং মুক্তিযোদ্ধা আবু তাহের।

১৪ জুলাই ২০২২ সালে জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে আয়োজিত নোয়াখালী লেখক ফোরাম প্রবর্তিত ‘কবি আবদুল হাকিম পুরস্কার’ পেলেন যারা-২০২১ সালে কবিতায় ড. আবু হেনা আবদুল আউয়াল এবং ২০২২ সালে গবেষণায় সর্বমোট ৬ জন হলেন-মো: ফখরুল ইসলাম, গাজী গিয়াস উদ্দিন, ম. পানা উল্যাহ, এ.কে.এম গিয়াস উদ্দিন মাহমুদ, শাবিহ মাহমুদ, এ.এস.এম ইউনুস।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম