Logo
Logo
×

অল্পকথা

ভূমিকম্প ও বাংলাদেশ

Icon

মীর আব্দুল আলীম

প্রকাশ: ২৬ নভেম্বর ২০২১, ০৬:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

ভূমিকম্প ও বাংলাদেশ

শুক্রবার ভোরে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় ভূকম্পন অনুভূত হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরেই দেশে শক্তিশালী ভূমিকম্পের আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। এর লক্ষণ হিসাবে প্রায়ই দেশের কোথাও না কোথাও মৃদু ও মাঝারি মাত্রায় ভূমিকম্প হচ্ছে। প্রশ্ন হলো, ভূমিকম্প মোকাবিলায় বাংলাদেশ কি প্রস্তুত? রানা প্লাজা ধসের পর আমাদের সক্ষমতা কতটুকু, তা বোঝা গেছে। অথচ ভূমিকম্প মোকাবিলার প্রস্তুতি খুবই জরুরি। সাম্প্রতিক সময়ে যেসব ভূমিকম্প হয়েছে, সেগুলোর উৎপত্তিস্থল মূলত ভারতের ত্রিপুরা, মিয়ানমার, নেপাল বা চীনে। আমাদের সবচেয়ে কাছে ত্রিপুরায় উৎপত্তি হওয়া ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল রিখটার স্কেলে ৫.৫। তবে অন্যান্য ক্ষেত্রে ৭.৪ ও ৭.৯ মাত্রার ভূমিকম্পও হয়েছে। আমাদের দেশ থেকে ভৌগোলিকভাবে সেসব ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল দূরে হওয়ার কারণে সেগুলোর কম্পন আমরা ততটা অনুভব করিনি। নেপাল, চীন ও ভারতে যে মাত্রার ভূমিকম্প হয়, তার প্রায় অর্ধেক কম্পন অনুভূত হয় বাংলাদেশে। ২০১৫ সালে নেপালে যে ভূমিকম্প হয়েছিল তার সমমাত্রায় বাংলাদেশে ভূমিকম্প হলে রাজধানী ঢাকার ৬০ থেকে ৭০ ভাগ ভবন ধসে বা হেলে পড়ার আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। সেক্ষেত্রে সারা দেশে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কত ভয়াবহ হতে পারে, তা সহজেই অনুমেয়।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশ ক্রমেই বড় ধরনের ভূমিকম্পের দিকে এগোচ্ছে। ছোট ছোট ভূমিকম্পগুলোই এর জানান দিচ্ছে। এ অবস্থায় স্বভাবতই প্রশ্ন আসে, ভূমিকম্প মোকাবিলায় আমাদের প্রস্তুতি কতটা? ভূমিকম্প-পরবর্তী উদ্ধারকাজের জন্য সরকারের কতটা সক্ষমতা রয়েছে? সরকারের তরফ হতে যন্ত্রপাতি ক্রয় ও স্বেচ্ছাসেবক প্রশিক্ষণের কথা বলা হলেও ভূমিকম্প-পরবর্তী বিপর্যয় সামাল দেওয়ার ন্যূনতম প্রস্তুতিও যে আমাদের নেই তা স্পষ্ট। জনসচেতনতাও তৈরি করা হয়নি সেভাবে। ভূমিকম্পের ব্যাপারে গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ, প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় ব্যাপক প্রচার-প্রচারণার কোনোটাই সরকারের পক্ষ থেকে করা হচ্ছে না। ইতোমধ্যে অনেক মূল্যবান সময় অপচয় হয়েছে। আর বিলম্ব করা সমীচীন হবে না। ভূমিকম্পের ঝুঁকি মোকাবিলায় সর্বাত্মক প্রস্তুতি গ্রহণের বিকল্প নেই। ভূমিকম্প মোকাবিলায় সর্বদা আমাদের নিজেদেরও প্রস্তুত থাকতে হবে। এক্ষেত্রে আমাদের মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত দুটি। প্রথমত, ভূমিকম্পে ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা ন্যূনতম পর্যায়ে রাখা এবং দ্বিতীয়ত, ভূমিকম্প-পরবর্তী বিপর্যয় সামাল দেওয়া।

ভূমিকম্পের সময় বেশি নড়াচড়া, বাইরে বের হওয়ার চেষ্টা, জানালা দিয়ে লাফ দেওয়ার চেষ্টা ইত্যাদি না করাই ভালো। এ সময় যত বেশি মুভ করবেন, ততো বেশি আহত হওয়ার আশঙ্কা থাকবে। তবে বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে বলবো- যদি নিচতলায় একেবারে দরজার কাছে থাকেন, তবে এক দৌড়ে বাইরে কোনো খোলা জায়গায় চলে যান। সিঁড়ি পার হয়ে যেতে হলে না যাওয়াই ভালো। ভূমিকম্পের সময় সবচেয়ে উত্তম পন্থা হলো ‘ড্রপ-কাভার-হোল্ড অন’ বা ‘ডাক-কাভার’ পদ্ধতি। অর্থাৎ কম্পন শুরু হলে মেঝেতে বসে পড়ুন, তারপর কোনো শক্ত টেবিল বা ডেস্কের নিচে ঢুকে কাভার নিন। এমন ডেস্ক বেছে নিন বা এমনভাবে কাভার নিন যেন প্রয়োজনে আপনি কাভারসহ মুভ করতে পারেন।

 

মীর আব্দুল আলীম : সাংবাদিক ও সমাজ গবেষক

newsstoremir@gmail.com

 

ভূমিকম্প বাংলাদেশ

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম