Logo
Logo
×

অল্পকথা

হারিয়ে যাচ্ছে যৌথ পরিবারের বন্ধন

Icon

মো. জিল্লুর রহমান

প্রকাশ: ০৮ ডিসেম্বর ২০২১, ০৬:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

এক সময় গ্রাম বা শহরে অনেক যৌথ পরিবার দেখা যেত। মানুষের পুকুরভরা মাছ ছিল, ক্ষেতজুড়ে ধান ছিল, গোয়ালভরা গাভি ছিল। যৌথ পরিবারে অনেক সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য ছিল। অবস্থাভেদে প্রতিটি পরিবারে সদস্য ছিল ২০ থেকে ৩০ জন। কোথাও বা এর চেয়ে বেশি। পরিবারের কর্তার আদেশ সবাই মেনে চলত। ভাই-বোনের মধ্যে সুসম্পর্ক থাকত। বিয়ে বিচ্ছেদ হতো কম। পৃথিবী যত এগিয়ে যাচ্ছে, যৌথ পরিবার তত কমে যাচ্ছে। হারিয়ে যেতে বসেছে যৌথ বা একান্নবর্তী পরিবারের সুবিধা, ঐতিহ্য; সেই সঙ্গে সামাজিক বন্ধন।

এখন দিন দিন সামাজিক রীতিনীতি বদলাচ্ছে, মানুষের মূল্যবোধের পরিবর্তন হচ্ছে। বদলাচ্ছে মানুষের অনুশাসন কাঠামো। মানুষের আর্থিক স্বাধীনতা যত বাড়ছে, জীবনযাপনের স্বাধীনতা ততই ভোগ করতে চাচ্ছে। পরিবারগুলো ভাঙছে। একক পরিবারে প্রত্যেকের গোপনীয়তা রক্ষা হয়। ইচ্ছামতো চলা যায়। আয়-ব্যয়-সঞ্চয়-ভবিষ্যৎ নিজের মতো রক্ষিত হয়। আর যৌথ পরিবার হলো একটি বটবৃক্ষের মতো, যে ক্ষেত্রে সুবিধা একক পরিবারের চেয়ে অনেক গুণ বেশি। যৌথ পরিবারে বিপদে-আপদে অনেককে পাশে পাওয়া যায়। সুখ-দুঃখ ভাগ করে নেওয়া যায়। একান্নবর্তী বা যৌথ পরিবারের সদস্যদের একে অপরের প্রতি অগাধ ভালোবাসা, আদর-স্নেহ ইত্যাদি সবসময় অটুট থাকে। পরিবারের দাদা-দাদি, চাচা-চাচিদের উপস্থিতিতে যেসব শিশু বড় হয়, তাদের স্বার্থপর হওয়ার সুযোগ কম থাকে। তাদের মানসিক বিকাশ ও বন্ধন হয় দৃঢ়। যৌথ পরিবারের সদস্যরা কখনো নিজেকে একা অনুভব করে না। পরিবারের এই কাঠামো সামাজিক ও নৈতিক বন্ধন দৃঢ় করে। বড়দের মান্য করা, প্রতিটি সম্পর্ককে সম্মান করা-এ সবকিছুই তারা শেখে গুরুজনদের কাছ থেকে।

সেই পারিবারিক সম্পর্ক এখন খণ্ডিত হয়ে যাচ্ছে। জীবন-জীবিকা নিয়ে ব্যস্ত সবাই। পারিবারিক কাঠামোতে যে পরিবর্তন এসেছে, তাতে প্রবীণদের জন্য যথেষ্ট সেবাব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি। এ পরিস্থিতিতে অনেক প্রবীণ হয়ে পড়েন অরক্ষিত। শেষ বয়সে পরিবার-পরিজন ছেড়ে বৃদ্ধাশ্রমে তাদের বাকি জীবন কাটাতে হচ্ছে। বৃদ্ধাশ্রমে যারা থাকেন, তাদের প্রায় শতভাগ উচ্চশিক্ষিত ও বিত্তশালী পরিবারের। তাদের কারও সন্তান থাকে বিদেশে। দেখার কেউ নেই বলে বৃদ্ধাশ্রমে আশ্রয় নেন। আবার এমনও আছে, সন্তানের কাছে প্রত্যাখ্যাত হয়ে সব ছেড়ে নিরাপদ আবাসন হিসাবে বৃদ্ধাশ্রমকে সঙ্গী করেন। প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা স্বজনবিহীন জীবন কাটান তারা। কেউ কেউ মাঝেমধ্যে পারিবারিক স্মৃতিচারণ করে চোখের পানিতে সান্ত্বনা খোঁজেন। আবার এমন ঘটনাও ঘটে-কেউ মারা গেলে সন্তানরা লাশ নিতেও আসে না।

পারিবারিক অনুশাসনের বাইরে চলে যাওয়ায় অভদ্রতা, অসম্মান করাকে স্মার্টনেস মনে করে অনেকে। ভদ্র আচরণ, সম্মান এসব বিষয় পরিবারের বয়োজ্যেষ্ঠ সদস্য যেমন-দাদা-দাদি, ফুপু, চাচা-চাচিদের কাছ থেকে শেখে ছোটরা। কিন্তু যৌথ পরিবার একক পরিবারে রূপান্তরিত হওয়ার কারণে শিশুরা মূলত বেশিরভাগ সময় বাড়ির কাজের মানুষের কাছে থাকায় কিছুই শিখতে পারে না। তাই শিশুর আদর্শিক জ্ঞান অর্জনের জন্য প্রয়োজন যৌথ পরিবার। আসলে আমরা ধীরে ধীরে হারিয়ে ফেলছি যৌথ পরিবারের সুবিধা, ঐতিহ্য এবং সেই সঙ্গে সামাজিক বন্ধন।

মো. জিল্লুর রহমান : ব্যাংকার ও প্রাবন্ধিক

zrbbbp@gmail.com

 

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম