ছেঁড়া টাকার বিড়ম্বনা
মুহাম্মদ আনোয়ার শাহাদাত
প্রকাশ: ১৫ জানুয়ারি ২০২২, ০৬:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
মানুষ প্রতিনিয়ত দোকানপাট, হাটবাজার, ব্যাংক-বিমাসহ নানা প্রতিষ্ঠানে কিংবা যানবাহনের ভাড়া মেটাতে আর্থিক লেনদেন করে থাকে। প্রাত্যহিক জীবনের এই লেনদেনের ক্ষেত্রে একটি বিড়ম্বনার কারণ হলো ছেঁড়া টাকা! চলার পথে ছেঁড়া টাকা নিয়ে বিড়ম্বনায় পড়েনি এমন মানুষ খুব কমই আছে। ধরুন, আপনি বাড়ি থেকে বের হয়ে গাড়িতে চড়লেন কোনো গুরুত্বপূর্ণ কাজে যাওয়ার জন্য; গন্তব্যে পৌঁছে যখন চালককে ভাড়া দিলেন, তখনই ঘটল বিপত্তি-আপনার দেওয়া নোটটি সামান্য ছেঁড়া। চালক কোনোভাবেই ওই টাকা নেবে না। একইভাবে কোনো দোকান থেকে কিছু কিনলেন, দাম দিতে গিয়ে দেখলেন দোকানি আপনার টাকাটা নিচ্ছে না, কারণ টাকাটা হয়তো ঘামে বা বৃষ্টির পানিতে ভিজে গিয়ে নরম হয়ে গেছে অথবা কোনো একদিকে সামান্য ছিঁড়ে গেছে। যদি সমপরিমাণ টাকা আপনার পকেটে থাকে, তাহলে তো বেঁচে গেলেন; না হলে ওই পরিস্থিতিতে কী বিড়ম্বনায় পড়তে হয়, তা কমবেশি সবারই জানা।
ছেঁড়া টাকা ব্যাংকে বদলানো যায় অনায়াসে, এটি সরকারের নির্দেশনা। কিন্তু বাস্তবতা এত সহজ নয়। সব ব্যাংকে সবসময় ছেঁড়া টাকা বদলানো সম্ভব নয় এবং ব্যাংক কর্মকর্তারাও তাদের নির্ধারিত কাজ না করে এরকম সেবামূলক কাজ করতে তেমন আগ্রহী নন। তাছাড়া মানুষের হাতে যখন কোনো ছেঁড়া নোট আসে, তখন সবার পক্ষে ব্যাংকে যাওয়ার সময় ও সুযোগ নাও থাকতে পারে। দেখা যায় একটি দশ টাকার ছেঁড়া নোট পরিবর্তন করার জন্য ব্যাংকে যেতে হবে এর চেয়ে বেশি ভাড়া দিয়ে। প্রশ্ন হলো, ছেঁড়া টাকা যদি ব্যাংক নেয়, অন্যভাবে বলতে পারি-সরকার গ্রহণ করে, তাহলে প্রাত্যহিক লেনদেনে দোকানপাটে বা যানবাহনে নেওয়া হবে না কেন অথবা এ ব্যাপারে সরকারি নির্দেশনা নেই কেন? টাকাগুলো তো হাত ঘুরে বাংলাদেশ ব্যাংকেই যাবে-সেটি ব্যাংকিং মাধ্যমে হোক বা অন্য যে কোনো মাধ্যমে। তাহলে ব্যাংকে ছেঁড়া টাকা নেওয়ার যেভাবে নির্দেশনা রয়েছে, সেভাবে যে কোনো পর্যায়ের লেনদেনে নির্দেশনা দিলেই তো মানুষকে এমন বিড়ম্বনা পোহাতে হয় না। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক (নোট রিফান্ড) রেগুলেশনসের আলোকে একটি নোটের কতটুকু অংশ ছেঁড়া বা ফাটা থাকলে তার মূল্যমানের কোনো সমস্যা হবে না বা দোকানপাটে, যানবাহনে বিনা বাধায় নেওয়া যাবে, সে সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা জনসাধারণকে দিয়ে দিলেই তো সমস্যার সমাধান হয়ে যায়।
আমি সৌদি আরবে দেখেছি-একটি নোট যতটুকুই ছেঁড়া-ফাটা হোক, তা যদি টেপ কিংবা কোনো আঠা দিয়ে লাগিয়ে দেওয়া হয়, তাহলে কেউ তা প্রত্যাখ্যান করার সাহসও দেখায় না। ছেঁড়া নোট যদি একাধিক খণ্ডে বিভক্তও হয়, তাহলেও কোনো সমস্যা হয় না, যদি খণ্ডগুলো জোড়া দেওয়া থাকে এবং প্রমাণ হয় যে সব খণ্ড একই নোটের। কোনো ভেজা নোট ইস্ত্রি করার পরও নির্দ্বিধায় যে কোনো দোকানে কিংবা চালককে দেওয়া যায়, কেউ কোনো আপত্তি করে না তা গ্রহণ করতে। অথচ আমাদের দেশে নোট একটু নরম কিংবা ছেঁড়া-ফাটা হলেই আর কেউ নিতে চায় না, কী অদ্ভুদ ব্যাপার! আশা করি, বিষয়টি জনগুরুত্বপূর্ণ বিধায় বাংলাদেশ ব্যাংক কিংবা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করবে এবং জনসাধারণের বিড়ম্বনা নিরসনে এগিয়ে আসবে।
মুহাম্মদ আনোয়ার শাহাদাত : প্রাবন্ধিক
